ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

অবশেষে অদিয়ারের প্রথম জয়

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৫
অবশেষে অদিয়ারের প্রথম জয়

কান (ফ্রান্স) থেকে: গ্রাঁ প্রিঁ পেয়েছেন, চিত্রনাট্যকারের পুরস্কারও জিতেছেন; কিন্তু স্বর্ণপাম অধরাই ছিলো জ্যাক অদিয়ারের। অবশেষে কানে প্রথমবার সেই স্বাদ পেলেন তিনি।

বিদেশিদের চোখে ফ্রান্সকে উপস্থাপন করে ৬৩ বছর বয়সী এই নির্মাতা জিতে নিয়েছেন বিচারকদের মন। তার কাছে হেরে গেছেন অস্কার ও কানজয়ী পরিচালকসহ বাকি ১৮ প্রতিদ্বন্দ্বী।  

চলচ্চিত্র দুনিয়ার সব আলো এখন অদিয়ারের ওপর। ‘ধীপান’ ছবিতে ‘অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো’ ধরনের আনন্দময় সমাপ্তি দেখিয়েছেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘মেয়েটা যা চেয়েছে ধীপান তাতে রাজি হয়েছে। একজন নারীর ইচ্ছাটা একজন পুরুষ গ্রহণ করার ভাবনা আমার ভালো লেগেছে। অন্যদের দৃষ্টিকোণ থেকে আমার কী ভালো লাগছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ’

কান উৎসবে গত ২১ মে সকাল সাড়ে ৮টায় গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে প্রতিযোগিতা বিভাগে 'ধীপান'-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। ১৯৯৬ সালের কান উৎসবে 'অ্যা সেলফ-মেড হিরো'র জন্য সেরা চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার পান জ্যাক। ছয় বছর আগে 'অ্যা প্রফেট'-এর জন্য গ্র্যাঁ প্রিঁ যায় তার ঘরে। ২০১২ সালের পর আবার কানের প্রতিযোগিতা বিভাগে স্থান পায় এই ফরাসির ছবি। তার বিখ্যাত ছবির তালিকায় আরও আছে ‘ভেনাস বিউটি ইনস্টিটিউট’ (১৯৯৯), ‘সি হাউ দে ফল’ (১৯৯৪), ‘রিড মাই লিপস’ (২০০১), ‘দ্য বিট দ্যাট মাই হার্ট স্কিপড’ (২০০৫), ‘রাস্ট অ্যান্ড বোন’ (২০১২) প্রভৃতি। এবার তিনি বেছে নিয়েছেন তামিল গেরিলার জীবন।

‘ধীপান’ ছবির প্রেক্ষাপট শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়। নতুন জীবনের আশায় ফ্রান্সে পাড়ি জমায় একসময়ের তামিল গেরিলা ধীপান। সেখানে অচেনা দু’জনকে নিজের পরিবার সাজায় সে। একজনকে স্ত্রী আর অন্যজনকে মেয়ে বলে পরিচয় দেয়। তবে প্যারিসে মাদক জর্জরিত এক আবাসনে তাদেরকে কঠিন সব পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। একসময় জীবনের তাগিদে আবার লড়াইয়ে নামতে হয় ধীপানকে। স্বর্ণপামজয়ের জন্য ছবিটির অভিনয়শিল্পী অ্যান্থনিথাসান জেসুথাসান ও দক্ষিণ ভারতের মঞ্চ অভিনেত্রী কালিয়েশ্বরী শ্রীনিবাসন-সহ অন্যদের কৃতিত্ব দিয়েছেন অদিয়ার, ‘তারা যদি এ ছবিতে না থাকতেন, স্বর্ণপামও জেতা হতো না আমার। ’

গত ১২ দিন কানের সর্বত্র আলোচনা আর চায়ের কাপে ঝড় চলছিলো, কান থাকবে নাকি চলে যাবে তা নিয়ে। চলে যাওয়ার আশঙ্কাই ছিলো বেশি। কিন্তু কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়ের সিদ্ধান্ত চমকে দিয়েছে সবাইকে। গত ২৪ মে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে দেওয়া হয় স্বর্ণপাম।

স্বর্ণপাম জয়ী ছবি নির্বাচন করতে বিচারকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। কিন্তু কোয়েন ভাইরা ছিলেন ব্যতিক্রম। তারা বলেন, ‘এ ছবিকে স্বর্ণপাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত খুব দ্রুতই নিয়েছি আমরা। ছবিটির বিষয়বস্তু আমাদের উজ্জীবীত করেছে। অন্য বিচারকদের কাছে অন্যান্য ছবিও ভালো লেগেছে। তবে ধীপানকে স্বর্ণপাম দেওয়ার জন্য আমরা একমত হয়েছি। বারবার দেখতে ইচ্ছে করে এমন ছবি হয় হাতেগোনা। এটা তেমনই চলচ্চিত্র। এটা পুরোপুরি অনবদ্য অভিজ্ঞতা। ’

অদিয়ারের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে গিয়ে প্রধান বিচারক জোয়েল বলেন, ‘এখানে সমালোচকদের বিচারক প্যানেল ছিলো না। আমরা ছিলাম শিল্পীদের জুরি যারা কাজ দেখেছে শিল্পমনা হয়ে। ’

জুরিবোর্ডে কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়ের সঙ্গে আরও ছিলেন গুইলারমো দেল তোরো, সোফি মার্সো, জ্যাক গিলেনহাল, সিয়েনা মিলার, হাভিয়ের দোলান, রসি ডি পালমা ও রকিয়া ট্রাওর। সেরা ছবির পুরস্কার ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলনে গিলেনহাল বলেন, ‘আমার কাছে ধীপানকে বক্তব্যধর্মী মনে হয়েছে। তিনজন আগন্তুককে জীবিকার তাগিদে একসঙ্গে থাকতে হবে এবং একসময় তারা পরিবার হয়ে উঠবে এটা ভাবা সত্যিই কঠিন। এটা এমন একটা বিষয়, আগে কখনও দেখিনি। ’

দুই কোয়েনের কাছ থেকে পুরস্কার নিয়ে উচ্ছ্বসিত জ্যাক। তার কথায়, ‘কোয়েন ভাইদের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করা বিশেষ ব্যাপার। এটা অনেকটা অবিশ্বাস্য। এই অর্জনে আমি আবেগাপ্লুত ও আনন্দিত। জানি পুরস্কারটির প্রভাব পড়বে আমার ওপর। আজ বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। ’ মাঝে রসিকতার সুরে জ্যাক আরও বলেন, ‘মাইকেল হানেকিকে এ বছর ছবি না বানানোর জন্য ধন্যবাদ!’ (হানেকির সর্বশেষ বানানো দুটি ছবিই স্বর্ণপাম জেতে)

(বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে www.rabbitholebd.com এর সৌজন্যে।

ফ্রান্স সময় : ০৮৫৯ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৫
জেএইচ

** বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।