চলে গেলেন বিখ্যাত অভিনেতা ওমর শরীফ। আজ শুক্রবার (১০ জুলাই) কায়রোর একটি হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
এ বছরের মে মাসে মিসরে তার পৈতৃক বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করেন ওমর শরীফ। সেখানেই তার চিকিত্সা চলছিলো। তার প্রয়াণে হলিউডের বহু তারকা শোক জ্ঞাপন করেছেন।
১৯৩২ সালের এপ্রিলে আলেকজান্দ্রিয়ায় রোমান ক্যাথলিক পরিবারে জন্মেছিলেন ওমর শরীফ। বাবা-মা তার নাম রেখেছিলেন মাইকেল দিমিত্রি চালহোব। অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা পড়ে কলেজ পাসের পর যোগ দেন পারিবারিক ব্যবসায়। পাশাপাশি চলতে থাকে অভিনয়। পঞ্চাশের দশকে হলিউডে কাজ শুরু করেন তিনি। ক্রমেই নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দর্শক হৃদয় জয় করেন শরীফ। ষাটের দশকে তার অভিনীত বেশ কিছু চরিত্র স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
১৯৬৩ সালে ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ ওমরের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ডেভিড লিনের এই কালজয়ী ছবিতে শরীফ আলি চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। অস্কার না জিতলেও ওই একই ছবির জন্য গোল্ডেন গ্লোব জেতেন শরীফ। একই পরিচালকের ‘ডক্টর জিভাগো’র জন্যও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার আসে তার ঘরে। রূপালি পর্দায় চেঙ্গিস খান ও চে গুয়েভারার মতো বিখ্যাত চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওমর শরীফ। তার আরও তিনটি উল্লেখযোগ্য ছবি হলো ‘ফানি গার্ল’, ‘দ্য ট্যামারিন্ড সিড’ ও ‘ম্যাকেনাস গোল্ড’।
‘দ্য ব্লেজিং সান’ ছবিতে ছবিতে কাজ করতে গিয়ে মিসরের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ফতে হামামার সঙ্গে ওমর শরীফের সখ্য গড়ে ওঠে। এতে প্রথম চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করেন হামামা। ওই দৃশ্য নিয়ে বিতর্ক বাঁধবে জেনে বাবার কাছে লুকোতে ছদ্মনামে অভিনয় করলেন মাইকেল। নিজের নাম রাখলেন ওমর শরীফ। সেই শুরু হল ‘ওমর শরীফ’-এর অভিনয় জীবন।
হামামার সঙ্গে বহু ছবিতে অভিনয় করেন ওমর। তাদের বন্ধুত্ব একসময় পরিণতি পায় প্রেমে। ১৯৫৫ সালে ধর্ম পরিবর্তন করে তিনি বিয়ে করেন হামামাকে। তবে তা টেকেনি। হামামার সঙ্গে তার দাম্পত্য জীবনে ফাটল ধরে ১৯৬২ সালে। ওই বছরেই ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’র মাধ্যমে শুরু হয় তার হলিউড যাত্রা। তখন হামামাকে তিনি জানিয়ে দেন, বিয়ে টিকিয়ে রাখা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই শরীফকে তালাক দিয়ে এক চিকিৎসককে বিয়ে করেন হামামা।
তারপর শরীফের জীবনে অনেক প্রেম-ভালোবাসা এসেছে। টুইসডে ওয়েল্ড, ডায়ান ম্যাকবেন, ইনগ্রিড বার্গম্যান, বারবারা স্ট্রেস্যান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে তার প্রেমের গুঞ্জন ছড়িয়েছে। তবে হাজারো সম্পর্কের ভিড়ে তিনি একটা কথা বরাবরেই বলেছেন, ‘হামামাই আমার জীবনের একমাত্র ভালোবাসা। আর কাউকে কোনোদিন ভালবাসতে পারিনি। ’ এ বছরের গোড়ার দিকে ৮৩ বছর বয়সে মারা যান হামামা।
মিসরে বেড়ে ওঠার সুবাদে আরবি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন ওমর। পাশাপাশি ইংরেজি, স্পেনীয়, ইতালীয়, গ্রিক এবং ফরাসি ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারতেন। বাদামি চোখের এই তারকা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কনট্র্যাক্ট ব্রিজ খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। ব্রিজ খেলা আর রেসের ঘোড়া পোষা ছিলো তার শখ। তাসের নেশা আর ক্যাসিনো একবার তাকে প্রায় পথে বসিয়ে দিয়েছিলো। সাড়ে সাত লাখ পাউন্ড হেরে যাওয়ার পর প্যারিসে নিজের বাড়িটা বিক্রি করে দিতে হয় তাকে।
বাংলাদেশ সময় : ২০৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৫
বিএসকে/জেএইচ