ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

‘পাঁচ টাকা দিয়ে দিনের শুরু, ষোল টাকা দিয়ে শেষ’

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
‘পাঁচ টাকা দিয়ে দিনের শুরু, ষোল টাকা দিয়ে শেষ’ চট্টগ্রামে গাইছেন অনুপম রায় / ছবি: নূর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাহাড়ের কোলে সকাল থেকে টুপটাপ বৃষ্টি। সঙ্গে হিম হাওয়া।

একবার যা একটু-আধটু রোদের দেখা মেলে, কিছুক্ষণ বাদেই মেঘের দল বৃষ্টির আয়োজন সাজায়। কর্ণফুলি নদীর তীরে সূয্যিমামা ডোবা অবধি আবহাওয়ার রঙ বদলালো দিনভর। আর রাতের ক্যানভাসে সুরের নানান রঙ ছড়িয়ে দিলেন অনুপম রায়। ভারতের বাংলা গানে হালের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী তিনি, ‘পিকু’ ছবির সংগীত পরিচালনা করে সুনাম কুড়িয়েছেন বলিউডেও। তার গান গাইতে আসার খবর গত কয়েকদিন ধরেই চাউর হয়ে গিয়েছিলো চট্টগ্রামের পথে পথে, এদিকে-সেদিকে, দেয়ালে দেয়ালে। পোস্টারে, ব্যানারে। গতকাল শনিবার রাতে এস.এস. খালেদ সড়কের ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে তিনি গেয়ে শোনালেন জনপ্রিয় একগুচ্ছ গান।
anupom
রাত পৌনে ৯টায় মঞ্চে এসে অনুপম গেয়ে ওঠেন ‘হেমলক সোসাইটি’ ছবি থেকে ‘ফিরিয়ে দেওয়ার গান’। প্রথম গান শেষে দর্শকদের তিনি জানান, এবারই প্রথম চট্টগ্রামে এলেন। এরপর একে একে পরিবেশন করেন ‘বেঁচে থাকার গান’, ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’, ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ অ্যালবামের ‘অদ্ভুত মুগ্ধতা’, ‘এখন অনেক রাত’। গানের ফাঁকে ফাঁকে বেশ কয়েকজন দর্শকের প্রশ্নের উত্তর দেন অনুপম। তাদের কেউ অটোগ্রাফ দাবি করলো, কেউবা বায়না ধরলো ছবি তোলার। হঠাৎ তিনি জানালেন, শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই গেয়ে থাকেন ‘বসন্ত এসে গেছে’! তাই এই শরৎকালেও গাইলেন। তারপর গেয়ে শোনান অমিতাভ বচ্চন ও দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত ‘পিকু’র দুটি গান। একটিতে তার সঙ্গে গলা মেলাতে মঞ্চে আসেন উজ্জয়নী মুখার্জি। অনুপম বিরতিতে যাওয়ার পর ওপারের এই গায়িকা একা গেয়েছেন ‘হেমলক সোসাইটি’ ছবির গান ‘এই তো আমি চাই’, ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবি থেকে ‘গভীরে যাও’, ‘খেলা শেষ’, রবীন্দ্রসংগীত ‘মোর ভাবনারে কী হাওয়ায়’, ‘আজ কি রাত’, ‘ইকতারা ইকতারা’ আর ‘পিকু’র আরেকটি গান।
anupom
‘অনুপম রায় লাইভ ইন চিটাগাং’ শীর্ষক এই কনসার্ট আয়োজন করে তালাশ মিডিয়া অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হীরক দাশগুপ্তর হাত ধরেই ঢাকার ছবিতে গান গেয়েছেন অনুপম, কনসার্ট করেছেন ঢাকায়। এবার চট্টগ্রামে এলেন একই আয়োজকের মাধ্যমে। এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি অনুপম।
anupom
অনুপম ছাড়াও এই আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন অভিনেতা-নির্মাতা জাহিদ হাসান। তার সরস কথাবার্তা আনন্দ দিয়েছে দর্শকদের। এক নারী দর্শক চট্টগ্রামের ভাষায় তাকে বলার অনুরোধ করেন- ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি। ’ তাকে মঞ্চে ডেকে সত্যি সত্যি তিনি বলে দেন- ‘আই তোয়ারে ভালোবাসি!’
anupom
কনসার্টের শুরুতে এপারের দেবলীনা সুর গেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’, লোকজ গান ‘বন্দে মায়া লাগাইছে’ এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের প্রখ্যাত শিল্পী শেফালী ঘোষের ‘ওরে সাম্পানওয়ালা’। এরপর মঞ্চে আসেন ওপার বাংলার ডাব্বু ঘোষাল ও শত্রুজিৎ দাশগুপ্ত। ওপারের বিভিন্ন বাংলা ছবির গান পরিবেশন করেন তারা। সবশেষ গান ‘সম্রাট’ ছবির শিরোনাম-সংগীত পরিবেশনের আগে ডাব্বু মঞ্চে ডাকেন এর পরিচালক মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজকে।

এপার-ওপারের শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত কনসার্টে অন্যান্যের মধ্যে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন। এর মাধ্যমে দুই বাংলার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। শুরু থেকে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন রিসমি আক্তার তিশা।
anupom
প্রায় হাজারখানেক দর্শকে পূর্ণ মিলনায়তনে প্রাণ ছিলো অনুপমকে ঘিরেই! তার কণ্ঠে বেশিরভাগ গানের বিষয়বস্তুর সঙ্গে জীবনবোধ মিলে যাওয়ায় বদলে যেতে থাকে চারপাশের আবহ। দর্শকরা গলা মিলিয়েছেন প্রায় সব গানে। তাদের বেশিরভাগই নারী। সব গানই যেন তাদের মুখস্ত! তাল মেলাতে গিয়ে নেচেছেনও তারা। ওদিকে অনুপমের গিটার বাজিয়ে গান পরিবেশনকালে নানান রঙের আলোকছটা ঠিকরে পড়লো মঞ্চে। ছড়িয়ে দেওয়া হলো ধোয়া।
anupom
বিরতির পর মঞ্চে ফিরে উজ্জয়নীকে নিয়ে অনুপম গেয়েছেন ‘যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে’। তারপর তিনি পরিবেশন করেন ‘তিস্তান’। এর কথাগুলো এমন- ‘পাঁচ টাকা দিয়ে দিনের শুরু, ষোল টাকা দিয়ে শেষ, তিন টাকা দিয়ে মুক্তি কিনে হবো নিরুদ্দেশ... শূন্য দু’হাত, আবার চাইছে, ফিরিয়ে নিয়ে চলো, তিস্তানে, তিস্তানে, তিস্তানে। ’ এই গান নস্টালজিয়ায় ভুগিয়েছে অনেক দর্শককে। তারপর তিনি গেয়েছেন ‘দেড়শ বছর আগে’, ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ অ্যালবামের ‘আমি আজকাল ভালো আছি’, ‘বাক্য বাগীশ’, ‘তোমায় নিয়ে গল্প হোক’, ‘যে সমাজে আমার কোনো জায়গা নেই’, ‘বোবা টানেল’, ‘পিকু’র গান ‘বেজুবান’, ‘একবার বল তুই নেই’। গাওয়ার মাঝে মঞ্চ থেকে কিছুক্ষণের জন্য নিচে নেমে হাঁটলেন। নাগালে পেয়ে কেউ কেউ ছুঁয়েও দিলেন তাকে। টুইটারে আগে থেকে জানিয়ে রাখা এক বয়স্ক শ্রোতার অনুরোধও রাখলেন ভারতীয় এই শিল্পী।
anupom
যে গানের অনুরোধ শুরু থেকে পেলেন, সেটা দিয়েই অনুষ্ঠান শেষ করলেন অনুপম, গাইলেন ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও, আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি, যেটা ছিলো না ছিলো না সেটা না পাওয়াই থাক, সব পেলে নষ্ট জীবন। ’ তখন সামনের কয়েক সারির সব দর্শক আর আসনে নেই, জড়ো হয়েছেন মঞ্চের সামনে। সবাই গলা মেলালেন, মঞ্চকে পেছনে রেখে সেলফিও তুললেন। যারা অটোগ্রাফ-ফটোগ্রাফ পাওয়ার আশা বেঁধেছিলেন বুকে, তাদের নিরাশ হতে হলো। তাদের জন্যই হয়তো অনুপমের গানের লাইনটা এমন- সব পেলে নষ্ট জীবন!

ঘড়ির কাঁটা তখন বারোটার ঘর ছুঁয়েছে। তার অনেক আগেই কেউ কেউ ঘরে ফেরার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু অনুপমের সুরের সাগরে ভাসতে থাকার লোভ সামলানো গেলো কই! কনসার্ট থেকে বেরিয়ে অনেকে তো ভাবছিলেন, আরও ভালো হতো অফুরন্ত সময় তাকে পেলে। তার গান শুধু গান নয়, যেন সাজানো গল্পের খই!
anupom

anupom

বাংলাদেশ সময় : ০২৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
জেএইচ

** চট্টগ্রামে রোদেলা বিকেলের দেখা রাতে!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।