ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

শুটিং লোকেশন থেকে

‘আমি আর নাটক নির্মাণ করবো না’

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৫
‘আমি আর নাটক নির্মাণ করবো না’ ‘অতঃপর অরিন্দম কহিলো’ নাটকে আফরান নিশো ও রাজিব সালেহিন /ছবি: আফসানা হোসেন

কতো ভালো ভালো কথা বলছেন নির্মাতা! ‘আপনি যদি ভাবেন যে স্ক্রিপ্ট লেখা শেষ, ধরে নেবেন সে ছবি শুটিং শুরু করার আগেই শেষ’, ‘হৃদয়ে ক্ষরণ সাময়িক, সিনেমা সার্বক্ষণিক’, ‘আমি মনে করি, আমাদের দেশের সিনেমায় দর্শকরা নতুনত্ব কিছু পাচ্ছে না। সেই পরিচিত চেনা সুর, চেনা গল্প।

আমি ওইসব দর্শকদের একটা ঝাঁকি দিতে চাই’- নিঃসন্দেহে ভালো ভালো কথা।

মুগ্ধ হওয়ার মতো, মুগ্ধ করার মতো। ফলে, অরিন্দম মাসুদ, যিনি এই সময়ের খুব জনপ্রিয় নির্মাতা, তার বাড়ির সামনে ভিড়। ওখানে কাগজ-কলম হাতে নিয়ে রিপোর্টার আছেন, ক্যামেরা রোল দিয়ে ভিডিওগ্রাফার, সাটারে আঙ্গুল চাপছেন ফটোসাংবাদিক। সবার হাতে চায়ের কাপ। অল্প অল্প চুমুক দিয়ে, ঠোঁট ভিজিয়ে, অরিন্দমের কথা শুনছেন। মাথা নাড়ছেন।

আমরা ওই ভিড়কে ওখানেই ফ্রিজ করে দিয়ে কামরুল হাসানের কাছ থেকে একটু ঘুরে আসি। নীল পোলো শার্ট, আর সাদা ধবধবে থ্রি-কোয়ার্টার পরে দাঁড়িয়ে আছেন। বেশ চিন্তিত। কামরুল হাসানও নির্মাতা। দীর্ঘ সময় ধরে বিদেশে থাকার ফলে গায়ের রঙে তো অবশ্যই; দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণে ‘প্রবাসী’ ছাপটা পড়ে গেছে। কল্পনায় কামরুল হাসান আর অরিন্দম মাসুদকে যদি আড্ডায় বসিয়ে দেওয়া হয়, তবে কী ঘটতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।

অরিন্দম তার ‘ভালো ভালো কথা’ আওড়ে যাবেন যথারীতি। ডান হাতটা হালকা মুষ্ঠিবদ্ধ করে যথারীতি বলে উঠবেন ‘সিনেমার দিন ফিরবেই’। আর স্বভাবে খানিকটা চুপচাপ কামরুল হঠাৎই হো হো করে হেসে ফেলতে পারেন। দু’জনের মধ্যে মারামারি লেগে যাওয়ার আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, অরিন্দম যে প্রতারক, সেটা কামরুল জানেন। অরিন্দম যে কথাগুলো আওড়ায় সবসময় সেটা যে কখনও স্পিলবার্গ, জন মিলিয়াস, কখনও ক্রিস্টোফার নোলান, রোমান পোলানস্কি থেকে ধার করা। এটাকে অবশ্য ধার করা বলা চলে না, চুরি করা- কামরুল সেটাও জানেন।

অরিন্দমের গল্প যে বিদেশি সিনেমার ফ্রেম টু ফ্রেম কপি; সেটাও ধরে ফেলেছেন। ফলে অরিন্দম এখন তার কাছে বন্দি। এমনই বন্দি যে, চিত্রনাট্যের চরিত্র হয়ে উঠতেও বাধ্য হয়েছেন। সুযোগটা ছাড়েননি, কামরুল তাকে নিয়েই নির্মাণ করছেন নাটক ‘অতঃপর অরিন্দম কহিলো’।

চিত্রনাট্যের ভাঁজে ভাঁজে স্যাটায়ার। এটাকে নেহাত নাটক কিংবা চিত্রনাট্য না ধরে, যদি বলা হয় সাম্প্রতিক দেশীয় নাটক-সিনেমার প্যাম্ফলেট, বিহাইন্ড দ্য সিন; তবে বিন্দুমাত্র কম হবে না।

এবার অরিন্দমের বাড়ির সামনের ভিড়টাকে গতিশীল করে দেওয়া যাক। ভিড়ের কারণ, অরিন্দম ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমি আর নাটক নির্মাণ করবো না’। তিনি সিনেমা বানাবেন। অনুদানের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বিশেষ সূত্রে খবর বেরিয়েছে, অনুদান তিনি পাচ্ছেনই।

প্রযোজক পাওয়া গেছে। চূড়ান্ত নায়িকাও। নায়িকার প্রধান যোগ্যতা সে অভিনয় পারে না। সে কখনও অভিনয় করেনি, কিন্তু ‘বেছে বেছে কাজ করে’! নায়কও ঠিক। নায়ক কলকাতার। আর কী লাগে! এবার সিনেমার দিন ফিরবেই! কিন্তু বছর গড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম, সিনেমা আর শুরু হয় না। এরই মধ্যে নায়িকাকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেয়ে, ঘুরে প্রযোজকের পনেরো লাখ টাকা বেরিয়ে গেছে। অবস্থা সুবিধের নয় ভেবে প্রযোজক ভেগে যায়। নির্মাতা এবার প্রযোজকের জন্য নায়িকার দ্বারস্থ। এটাই সাম্প্রতিক চিত্র। নায়িকা প্রযোজক আনেন, প্রযোজক নায়িকা ঠিক করেন, টিভি চ্যানেলগুলো ঠিক করে দেন অভিনয়শিল্পী করা হবে। নির্মাতা শুধু এখন উপলক্ষ্যমাত্র। ইউনিটে স্রেফ সংখ্যা বাড়ায়।

কামরুল হাসানের এই সাহসী চিত্রনাট্যে নির্মাতা অরিন্দম মাসুদের চরিত্রে আছেন আফরান নিশো। আর নতুন নায়িকা যিনি, অভিনয় জানেন না, ন্যাকা ন্যাকা কথা বলেন, একটা পোষা কুকুর সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ান; সে চরিত্রে সাদিয়া জাহান প্রভা। আছে রাজিব সালেহিনও।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।