ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

গানের গুরু প্রাণের গুরু শাহ আব্দুল করিম

নাসির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫
গানের গুরু প্রাণের গুরু শাহ আব্দুল করিম শাহ আব্দুল করিম

সিলেট: ‘গাড়ি চলে না, চলে না রে... এমন অসংখ্য হৃদয়গ্রাহী জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। ২০০৯ সালের এ দিনে তাঁর জীবন গাড়ি থেমে যায়।



একুশে পদকপ্রাপ্ত এই কিংবদন্তি বাউলের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর)। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাউল সুফি সাধক শাহ আব্দুল করিম। দারিদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেন তিনি। আর ছেলে বেলা থেকেই শুরু করেন সঙ্গীত সাধনা। বাউল সম্রাটের প্রেরণা স্থান ছিল তাঁর স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। তিনি তাকে আদর করে ডাকতেন ‘সরলা’। স্ত্রীর প্রয়ানের পর সরলাকে নিয়ে গান রচনা করেন তিনি।   

ভক্ত-অনুরাগীরা গানের মাঝেই খোঁজেন বাউল সম্রাটের মায়াবি মুখ। উজান ধলের কালনীর তীরে বেড়ে ওঠা রাখাল বালক হয়ে উঠেন জনতার গীতিকবি। সমাজ, সংসার থেকে অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার দূর করতে রচনা করেন অসংখ্য গান। তিনি বেঁচে নেই। রেখে গেছেন অসংখ্য গান।  

তাঁর রচিত গানের মিলে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া। বন্ধুরে কই পাবো সখি গো / তুমি বিনে এ ভুবনে কে আছে ঔষধি রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি....। গানের মাঝেই শ্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন বাউল আব্দুল করিম। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার কথাও উঠে এসেছে তাঁর গানে।

প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ’র দর্শন থেকে তিনি গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।   যদিও দারিদ্র তাকে বাধ্য করে কৃষিকাজে তার শ্রম ব্যয় করতে।   কিন্তু কোন কিছু তাকে গান থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

তিনি আধ্যাত্মিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন কামাল উদ্দীন, সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। তিনি শরীয়ত, মারফত, নবুয়ত, বেলায়াসহ সবধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চা করেছেন।

অধ্যাত্মিকতার দিক থেকে হাসনরাজা, রাধারমন, ফকির দুরবীন শাহ ও মওলানা ইয়াসিনের আধ্যাত্মিক গানের ভাবার্থের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে বাউল করিমের গানের।

“কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু”/ গানে মিলে প্রাণের সন্ধান/ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম/ কোন মেস্তরী নাও বানাইছেসহ প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান বাউল সম্রাটকে কিংবদন্তির আসনে বসিয়েছে। তাঁর রচিত গানেই ছিল সৃষ্টিকর্তার উপাসনা।  

ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তাঁর ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। শিল্পীর চাওয়া অনুযায়ী এ বছরের প্রথম দিকে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের
উদ্যোগে বাউল আব্দুল করিমের সমগ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও আগে এসব গান শুধু ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল।

মৃত্যুর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গান নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন।
প্রয়াত বাউল রুহি ঠাকুর, তার ভাই রমেশ ঠাকুর, বাউল আব্দুর রহমানসহ অসংখ্য গায়েন তৈরি করে গেছেন তিনি।

বাউলদের সংগঠন একতারা সঙ্গীতালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সিলেটের উদীয়মান বাউল রাজু বাংলানিউজকে বলেন, তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছি অনেকবার। তিনি গানের গুরু- প্রাণের গুরু। তাই প্রতিবছর উজানধল গ্রামের বাড়িতে ছুটে যাই।    

বাউল সম্রাট আব্দুল করিমের জীবন-কর্মের মূল্যায়ন করতে গিয়ে গীতিকবি আহমেদ সামসুদ্দিন কুটি বাংলানিউজকে বলেন, বাউল করিম ছিলেন মাটির মানুষ। অহংকার কখনো তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর হাত ধরেই বাউল সঙ্গীত গানের ভুবনে অনন্য এক স্থান দখল করে নিয়েছে।   

২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫
এনইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।