কান (ফ্রান্স) থেকে: কান উৎসবের তৃতীয় দিনটা হয়ে গেলো ব্রিটিশদের! কেন লোচের হাত ধরে ইংরেজ আধিপত্য বিস্তার করলো দক্ষিণ ফ্রান্সের শহরটিতে। শুক্রবার (১৩ মে) সকাল ১১টায় প্রতিযোগিতা বিভাগে ৭৯ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান নির্মাতার নতুন ছবি ‘আই, ড্যানিয়েল ব্লেক’-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে।
আধুনিক ব্রিটেনের সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা ও আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে এ ছবি হলো কেন লোচের গর্জন। গল্পে দেখা যায়- ড্যানিয়েল ব্লেকের বয়স ৫৯ বছর। নিউক্যাসেলে তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে। এখন হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া ও উঁচু মাচান থেকে পড়ে যাওয়ার পর মানুষটি জীবনে প্রথমবার সরকারি সাহায্য চায়। তার মতো একই দুর্দশা কেটি ও তার দুই সন্তান ডেইজি ও ডিলানের। লন্ডনে এক রুমের গৃহহীন হোস্টেলে দিনাতিপাত করে সে। ড্যানিয়েল ও কেটি নিজেদেরকে আমলাতান্ত্রিক কাঁটাতারের মাঝে নো ম্যান’স ল্যান্ডে আবিষ্কার করে।
২০০৬ সালে ‘দ্য উইন্ড দ্যাট শেকস দ্য বার্লি’র জন্য স্বর্ণপাম জেতেন কেন লোচ। সর্বশেষ ২০১৪ সালে তার “জিমি’স হল”কানের প্রতিযোগিতা বিভাগে স্থান পেয়েছিলো। এবারও স্বর্ণপামের দৌড়ে তিনি থাকছেন সামনের সারিতেই। নিজের নতুন ছবি প্রসঙ্গে তার কথা, ‘এখনও সামাজিক বৈষম্য ও অবিচারের গল্প বলার আছে, এটা বড়ই বেদনাদায়ক। আমরা যে ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি তা সচেতনভাবেই নির্মম। দুঃখজনক হলো, এই সমাজে সবচেয়ে অরক্ষিত মানুষগুলোকে বলা হয় দারিদ্রতা তাদের নিজেদেরই অক্ষমতা। ’
সেলুলয়েডে পাবলো নেরুদার
১৯৪৮ সালে চিলিতে ছড়িয়ে পড়ে স্নায়ুযুদ্ধ। সিনেটর পাবলো নেরুদা প্রেসিডেন্ট ভিদেলার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তোলেন। এ কারণে কিংবদন্তি এই কবিকে গ্রেফতারের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ কর্মকর্তা অস্কার পেলুচোনিউকে। খবর পেয়ে স্ত্রী দেলিয়া দেল কারিলকে নিয়ে দেশ ছাড়তে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন নেরুদা। কিন্তু তারা গা ঢাকা দেন। পেলুচোনিউর কাছ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে গিয়ে নেরুদা নিজেকে নতুনভাবে খুঁজে পান। পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে নায়কোচিত সম্ভাবনা দেখতে পান নেরুদা। এভাবেই মুক্তির প্রতীক ও সাহিত্যের কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন তিনি।
এই সত্যি গল্প নিয়ে পাবলো লারেইন পরিচালনা করেছেন ‘নেরুদা’ ছবিটি। উৎসবে তৃতীয় দিন ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট বিভাগে সকাল পৌনে নয়টা ও বিকেল পাঁচটায় এর প্রদর্শনী হয়েছে। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন লুই জেনেকো। পুলিশ অস্কার চরিত্রে দেখা গেছে গায়েল গার্সিয়া বার্নালকে।
ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টা ও রাত আটটায় প্রদর্শিত হয়েছে বেলজিয়ান পরিচালক জোয়াচিম লাফোসের “এল’ইকোনোমি দু কাপল”। এর গল্পে দেখলাম ১৫ বছর একই ছাদের নিচে থাকার পর ম্যারি ও বরিস বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে যে বাড়িতে তারা থাকে, ম্যারি সেটা কিনে নিয়েছে। কিন্তু বরিস বাড়িটি পুরোপুরি সংস্কার করেছে। থাকার জন্য অন্য জায়গা খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত বরিসকে এখানেই থাকতে হবে। এভাবেই দিন গড়ানোর সঙ্গে এই দম্পতি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন বেরেনিস বেসো ও সেড্রিক কান।
জনি ডেপের কন্যার নাচ
হলিউড সুপারস্টার জনি ডেপ একসময় চুটিয়ে প্রেম করেছেন ফরাসি অভিনেত্রী-গায়িকা ভ্যানেসা প্যারাডিসের সঙ্গে। তাদের সেই প্রেমের ফসল কন্যাসন্তান লিলি রোজ-ডেপ। মা-বাবার পথ ধরে এই তরুণীও রূপালি পর্দায় ক্রমে এগোচ্ছেন। এবারের কান উৎসবে আনসার্টেন রিগার্ড বিভাগে স্থান পেয়েছে তার অভিনীত ‘দ্য ড্যান্সার’। এতে ইসাডোরা ডানকান চরিত্রে দেখলাম তাকে। জয়ের জন্য মুখিয়ে আছে মেয়েটি। তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর হেরে যেতে থাকে ব্যালে নাচের আইকন লই ফুলার। ছবিটি পরিচালনা করেছেন ফরাসি নারী নির্মাতা স্টেফানি ডি গুইস্তো। সাল দুবুসিতে উৎসবের তৃতীয় দিন দুপুর দুইটা ও রাত দশটায় প্রদর্শিত হয়েছে এটি।
সাল দুবুসিতে সকাল সোয়া ১১টায় দেখানো হয় আনসার্টেন রিগার্ড বিভাগের ছবি রাশিয়ার কিরিল সেরেব্রেনিকোভের ‘দ্য স্টুডেন্ট’। একই জায়গায় বিকেল সাড়ে চারটায়ও আবার এর প্রদর্শনী ছিলো। ছবিটি মূলত বেনিয়ামিন নামের এক তরুণের গল্প। মা, সহপাঠী ও পুরো হাইস্কুল তার অদ্ভুত সব প্রশ্নে হতভম্ব হয়ে পড়ে। বেনিয়ামিন জানতে চায়- মেয়েরা কি তাদের সাঁতার ক্লাসে বিকিনি পরে যেতে পারে? স্কুলে কি যৌনশিক্ষার কোনো স্থান আছে? বয়স্করা তার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে অভিভূতও হয়। কিন্তু বায়োলজি শিক্ষিকা এলেনা একা তাকে চ্যালেঞ্জ করে বসে।
আনসার্টেন রিগার্ড বিভাগে আগের দিন প্রদর্শিত মিসরীয় পরিচালক মোহামেদ দিয়াবের ‘ক্ল্যাশ’ বেলা ১১টায় এবং ইসরায়েলি নারী নির্মাতা মহা হাজের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র ‘পার্সোনাল অ্যাফেয়ার্স’ ছিলো বিকেল সোয়া চারটায়।
অন্যান্য ছবি
সাল দু সসানতিয়েমেতে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কম্বোডিয়ান বংশোদ্ভুত ফরাসি নির্মাতা রিতি পানের ‘এক্সাইল’ ছবিটির বিশেষ প্রদর্শনী হয়েছে। প্রতিযোগিতা বিভাগের বাইরে আগের দিন প্রদর্শিত জোডি ফস্টারের ‘মানি মনস্টার’ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেখানো হয়েছে একই প্রেক্ষাগৃহে। মধ্যরাতের সেশনে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে রাত পৌনে ১২টায় ছিলো ইও সাং-হো পরিচালিত ‘ট্রেন টু বুসান’। এর গল্পে দেখা যায়- কোরিয়ায় রহস্যময় ভাইরাল আক্রমণের কারণে জরুরি অবস্থা জারি করে দেশটিতে সরকার। এদিকে সিওল থেকে ৪৫৩ কিলোমিটার পেরিয়ে বুসানের পথে আসা একটি ট্রেনের যাত্রীদেরকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতে হয়।
উৎসবে আগের দিনের মতো তৃতীয় দিনেও শুরুতে ছিলো ফরাসি ছবি। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে সকাল সাড়ে আটটায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টা) প্রতিযোগিতা বিভাগে স্থান পাওয়া ‘স্লেক বে’ নামের ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। একই জায়গায় দুপুর দুইটা ও সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা এবং সকাল সাড়ে ৮টায় সাল দুবুসিতেও দেখানো হয় এটি। ব্রুনো ডুমের পরিচালনায় এতে অভিনয় করেছেন জুলিয়েট বিনোশ, ভ্যালেরিয়া ব্রুনি তেদেশি ও ফ্যাব্রিস লুচিনি।
প্রতিযোগিতা বিভাগে দ্বিতীয় দিন প্রদর্শিত আলা জিরাডির ‘স্টেইং ভার্টিক্যাল’ সকাল সাড়ে ১১টায় এবং ক্রিস্টি পুইউর ‘সিয়েরা নেভাদা’ দুপুর পৌনে দুইটায় আবার দেখানো হয় সাল দু সসানতিয়েমেতে।
ক্রিটিকস বিভাগ
এ বিভাগে দুপুর পৌনে ১২টা, বিকেল সাড়ে চারটা ও রাত দশটায় ছিলো ডেভি চো পরিচালিত ‘ডায়মন্ড আইল্যান্ড’। একই বিভাগে সকাল সাড়ে আটটায় ছিলো আগের দিন প্রদর্শিত তুরস্কের মেহমেত ক্যান মার্তোগলুর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র ‘অ্যালবাম’। একই সময়ে সাল বুনুয়েলে দেখানো হয় আগের দিন প্রদর্শিত ফ্রান্সের নারী নির্মাতা জাস্টিন ট্রায়েটের ‘ইন বেড উইথ ভিক্টোরিয়া’।
কান ক্ল্যাসিকস
এদিন ধ্রুপদী ছবির বিভাগ কান ক্ল্যাসিকসে সকাল ১১টায় দেখানো হয় সুইডিশ নির্মাতা লিওপোল্ড লিন্তবার্গের ‘দ্য লাস্ট চান্স’ (১৯৪৫)। দুপুর ১টা ২০ মিনিটে ছিলো ফ্রান্সের জিওর্জেস রুকুইয়ার ‘ফ্যারেবিক’ (১৯৪৬)। এটি ১৯৪৬ সালের কান উৎসবে প্রথম ফিপরেস্কি পুরস্কার জেতে। বিকেল তিনটা ১০ মিনিটে জাপানিজ নির্মাতা মিতসুইও সিওর অ্যানিমেটেড ছবি ‘মোমোতারো, স্যাকরেড সেইলারস’ (১৯৪৫), বিকেল পাঁচটায় আমেরিকার ফ্রেডেরিক ওয়াইজম্যানের ‘হসপিটাল’ (১৯৬৯), সন্ধ্যা সাতটায় পিয়েরে ফিলমন পরিচালিত ‘ক্লোজ এনকাউন্টারস উইথ ভিলমস জিগমন্ড’ (২০১৬) এবং রাত নয়টায় দেখা গেছে মেক্সিকান পরিচালক আরটারো রিপস্টেইনের ‘টিয়েম্পো ডি মোরির’ (১৯৬৬) ছবিগুলো। সবই প্রদর্শিত হয়েছে সাল বুনুয়েলে। এর মধ্যে ‘ক্লোজ এনকাউন্টারস উইথ ভিলমস জিগমন্ড’ হলো ফরাসি পরিচালক ফিলমনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র, তাই তিনি লড়ছেন ক্যামেরা দ’র পুরস্কারের জন্য।
সাগরপাড়ে ছবি
দ্বিতীয় দিন সাগরপাড়ে ছবি দেখার বিভাগ সিনেমা ডি লা প্লাজে প্রয়াত সংগীতশিল্পী প্রিন্স অভিনীত আলবার্ট ম্যাগনোলির ‘পার্পল রেইন’ ছবির প্রদর্শনী হওয়ার কথা থাকলেও দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ায় তা স্থগিত করতে বাধ্য হন আয়োজকরা। শুক্রবার এ বিভাগে সাড়ে ৯টায় দেখানো হয় ফিলিপ্পে ডি ব্রকার ‘দ্য কিংস হার্ট’ (১৯৬৬)।
চতুর্থ দিনের আগাম কথা
উৎসবে শনিবারের (১৪ মে) বড় আকর্ষণ সেলুলয়েডের জাদুকর স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘দ্য বিএফজি’। এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে প্রতিযোগিতা বিভাগের বাইরে। নিজের ছবির কলাকুশলীদের নিয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনে আসবেন দুপুর দুইটায়। তার কথা জানতে পড়ুন বাংলানিউজের লাক্স-কান কথা।
ফ্রান্স সময় : ০১৩২ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৬
জেএইচ
** প্রস্তুতি ছাড়াই কান মাতালেন ঐশ্বরিয়া
***আরাধ্যকে নিয়ে কানে ঐশ্বরিয়া
***জুলিয়া রবার্টসের পায়ে জুতা নেই!
***তোমরা ভুলে গেছো মল্লিকার নাম!
***জুলিয়েট বিনোশকে দেখে চোখ ফেরানো দায়!
***এক প্যাকেট বাদাম দুই ইউরো
**মন কেড়ে নেওয়া গল্পগুলো
**কান উৎসবের বাজেট ২ কোটি ইউরো!
**বাংলানিউজের ক্যামেরাবন্দি জুলিয়া রবার্টস ও জর্জ ক্লুনি
**দেখুন কানে কি না হয়!
** পর্দা উঠলো কান উৎসবের
** হেঁটেছি স্বপ্নের লাল গালিচায়
** শুরুর আগেই জমে উঠেছে লড়াই!
** বিচারকদের সামনে বাংলানিউজ
** সারারাত বৃষ্টির পর ‘ক্যাফে সোসাইটি’
** ইস্তাম্বুলে আইসক্রিম কিনলে ওয়াইফাই ফ্রি!
** ব্যাজের সঙ্গে ব্যাগভর্তি কাগজপত্র দিলেন আয়োজকরা
** কান উৎসবের পর্দা ওঠার অপেক্ষা