ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

বিজয় দিবসে ‘সুলতান সুলেমান’, দীপ্ত টিভি বন্ধের অনুরোধ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
বিজয় দিবসে ‘সুলতান সুলেমান’, দীপ্ত টিভি বন্ধের অনুরোধ (বাঁ থেকে) গাজী রাকায়েত, মামুনুর রশীদ ও মাসুম রেজা; ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বিজয় দিবসে (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে তিন ঘণ্টা বেসরকারি চ্যানেল দীপ্ত টিভি ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক ‘সুলতান সুলেমান’-এর পুরনো পর্বগুলো দেখিয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে চ্যানেলটির সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে টিভি সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের ১৪টি সংগঠনের জোট সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)।

বিজয় দিবসে (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে তিন ঘণ্টা বেসরকারি চ্যানেল দীপ্ত টিভি ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক ‘সুলতান সুলেমান’-এর পুরনো পর্বগুলো দেখিয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে চ্যানেলটির সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে টিভি সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের ১৪টি সংগঠনের জোট সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এফটিপিওর নেতারা দীপ্ত টিভির কড়া সমালোচনা করেন। বিজয় দিবসে ‘সুলতান সুলেমান’ প্রচারকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবেও মন্তব্য করেন তারা। তাদের ভাষ্য, ‘বিজয় দিবসে প্রতিটি চ্যানেল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক প্রচার করলেও দীপ্ত টিভি উল্লেখ করার মতো কিছুই চালায়নি। এটা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে অপমান। ’

বক্তব্য রাখছেন মামুনুর রশীদ।  ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমএফটিপিওর আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বিজয় দিবসের দিনে তিন ঘণ্টা ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক প্রচারের কারণে সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হোক। কারণ আমরা মনে করি, এটা দেশপ্রেম বিরোধী কাজ। চ্যানেলটি ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেছে। ’

সংগঠনটির সদস্যসচিব ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েতও মনে করেন দীপ্ত টিভি ইচ্ছাকৃতভাবে বিজয় দিবসে দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে বেখাপ্পা অনুষ্ঠান প্রচার করেছে। তিনি বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর আমাদের চেতনার জায়গা। এদিন আমরা সবাই মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনায় উজ্জীবিত হই। এমন গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবের দিনে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত দীপ্ত টিভি কীভাবে এ ধরনের অসংস্কৃতিপূর্ণ ধারাবাহিক প্রচার করে? এটা শুধু দেশদ্রোহিতা নয়, এর মাধ্যমে দেশের সমস্ত সংস্কৃতি কর্মী এবং দর্শকদেরকে অপমান করা হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, দীপ্ত টিভি বন্ধ করা হোক। ’

‘সুলতান সুলেমান’ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে নাট্যকার মেজবাহ উদ্দিন সুমন ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। সম্প্রতি সিলেটের একটি চা বাগানের একজন কর্মকর্তা তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘সুলতান সুলেমান’-এর মতো নাটক কেনো করছেন? এ ছাড়া এক সিএনজি ড্রাইভার প্রশ্ন করেছিলো, মুসলমানদের সমাজ কি হেরেমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো কি-না। সংলাপ বাংলা হওয়ায় তারা জানতোই না এটি বিদেশি ধারাবাহিক!’

বক্তব্য রাখছেন গাজী রাকায়েত।  ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমগত ৩০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে টেলিভিশন শিল্পী কলাকুশলী সমাবেশ করে এফটিপিও। সেদিন পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। এর মধ্যে ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক প্রচার বন্ধের দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে গাজী রাকায়েত বলেন, ‘ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক প্রচারের কারণে আমাদের শিল্পী-কলাকুশলীরা সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতি মাসে ছয়-সাত কোটি টাকা হাতছাড়া হচ্ছে তাদের কাছ থেকে। শুটিং হাউসগুলোতে কাজ কমে গেছে। এসব কারণে আমরা বিভিন্ন দাবির মধ্যে এদিকে জোর দিচ্ছি। ’

পূর্বের দাবিগুলোর সঙ্গে এফটিপিওর সদস্য সচিব শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, ‘মিশ্র নয়, নাটক, চলচ্চিত্র, খবর, খেলাধুলা, কার্টুনসহ প্রতিটি বিষয়ে স্বাধীন চ্যানেল চাই আমরা। ’

এদিকে এফটিপিওর নতুন সাতটি দাবি প্রসঙ্গে সম্প্রতি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এ স্ট্যাটাসে আপত্তিকর শব্দচয়ন ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ তুলে তার নিন্দা করেন এফটিপিওর নেতারা। অবশ্য ফারুকীর নাম উল্লেখ করা হয়নি সম্মেলনে।

নাট্যকার মেজবাহ উদ্দিন সুমন জানান, বিভিন্ন সময় অভিযোগ আসে অভিনয়শিল্পীরা সম্মানী পাচ্ছেন না, এক নাট্যকারের জায়গায় অন্যের নাম দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি। তাদের পেশাগত নিরাপত্তার জন্য সংগঠনগুলো প্রয়োজন। ’

অভিনয়শিল্পী সংঘের পক্ষে আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘টেলিভিশন শিল্পের পেশাজীবীরা এর উন্নয়নের জন্য একত্রিত হয়েছে। আমাদের সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করার মুহূর্তে কিছু তথাকথিত প্রথিতযশা নির্মাতা বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা লেখালেখি করছেন। আমাদের আন্দোলন সফল হলে তাদেরকেও আমরা বয়কট করবো। ’

বক্তব্য রাখছেন নাট্যকার মেজবাহ উদ্দিন সুমন।  ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমনাট্যকার মাসুদ মহিউদ্দীন বলেন, ‘১৪টি সংগঠনের জোট হিসেবে গঠিত সংগঠন এফটিপিওর বিরুদ্ধে একটি শব্দ উচ্চারণ করেছেন তথাকথিত এক জনপ্রিয় পরিচালক। পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র তৈরির পর তাকেও কোনো না কোনো সংগঠনভুক্ত হতে হয়েছে। তাহলে কোন সাহসে তিনি ১৪ সংগঠনের জোট এফটিপিওর শিল্পী-কলাকুশলীদেরকে পান্ডা বলে অভিহিত করছেন?’

চলছিলো এফটিপিওর সংবাদ সম্মেলন।  ছবি: রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমনিজেদের দাবির পক্ষে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত বলেন, ‘এখন যে কেউ পরিচালক, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী হয়ে যাচ্ছেন। এটাকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে আমরা কাউকে বাধা দিতে চাই না। যে কেউ এ অঙ্গনে কাজ করতে পারে। আমাদের চাওয়া এফটিপিওর তালিকাভুক্ত থাকুক সবাই। এর মাধ্যমে আমরা অন্তত জানা যাবে দেশে কতোজন শিল্পী-কলাকুশলী আছেন। এটা বাস্তবায়ন হলে আমরা এফটিপিওর মাধ্যমে বলতে পারবো দেশে কয়টি নাটক কিংবা টেলিছবির শুটিং চলছে। আমরা কোনো দাদাগিরি করছি না, আমরা টিভি পেশাজীবীদের স্বার্থে ও সুন্দর শিল্পমাধ্যম তৈরির জন্য চেষ্টা করছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।