বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) আয়োজন করে ‘দিওয়ালি কনসার্ট ২০১৮’। রাতের এ কনসার্টেই তিন সঙ্গীতশিল্পীর পরিবেশনায় মুগ্ধ হয় ঢাকার সঙ্গীতপ্রেমী জনগণ।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কনসার্ট দেখতে সন্ধ্যা নামার আগেই রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আসতে শুরু করেন দর্শক-শ্রোতারা। এসময় প্রায় পাঁচ হাজার দর্শক-শ্রোতা এ আয়োজন উপভোগ করে। কনসার্টে তরুণ-তরুণীদের বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন শংকর মহাদেবন।
আয়োজনে অভূতপূর্ব সাড়ার মধ্যদিয়ে সংগীতপ্রেমীরা সুরের মূর্ছনায় হারিয়ে গিয়েছিলেন বেশ কিছু সময়ের জন্য। অন্তত গানের তালে তালে তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে বয়স্কদের নেচে ওঠাও তারই কথা বলে। আর সে ভালোবাসার মধ্যদিয়েই আলোর উৎসব 'দিওয়ালি' কনসার্টে ঢাকার বুকে নিজেদের সুর মূর্ছনার ঝলক রেখে গেলেন বলিউডের তারকারা।
কনসার্টে শিল্পীরা ‘তেরে লিয়ে হাম হে জিয়ে’, ‘কাজরা রে, কাজরা রে’, ‘ঝুম বারাবার ঝুম’, ‘কাল হো না হো’, ‘মেরি মা'সহ বিভিন্ন ঘরানার অসংখ্য গান পরিবেশ করেন। গানের মাঝে মাঝে বলে ওঠেন ঢাকার প্রতি তাদের টান ও ভালোবাসার গল্প।
রাতে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বত্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, দিওয়ালি অনুষ্ঠান আমরা সবাই পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুদের সঙ্গে উদযাপন করে থাকি। কিন্তু আমরা যেহেতু বাংলাদেশে আছি, তাই আপনাদের সঙ্গে নিয়েই আমাদের এ উৎসব।
এসময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু।
এসময় দেশের সংস্কৃতিপ্রেমীদের জন্য ৩০ হাজার দর্শকের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি সংস্কৃতিকেন্দ্র নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশের মানুষ সবসময়ই সংস্কৃতি ও বিনোদন ভালোবাসে। একটু আগে আমি লিটু ভাইয়ের (আবুল খায়ের লিটু) সঙ্গে কথা বলছিলাম, আমরা বড় একটা সংস্কৃতি কেন্দ্র বানাতে পারি। সেটা হতে পারে ৩০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। তাহলে অনেক মানুষ একসঙ্গে আয়োজন উপভোগ করতে পারবে।
এ সময় দর্শক সারিতে উপস্থিত থাকা সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আমাদের জায়গা আছে, এখন শুধু তৈরি করতে হবে। তাই আমরা চাইবো, মন্ত্রণালয় থেকে তৈরির প্রক্রিয়ায় আমাদের সাহায্য করার জন্য।
বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু বলেন, দিওয়ালি উৎসবে অংশ নিতে পেরে আমরা আনন্দিত। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এ আয়োজন সে কথায় বলে।
কনসার্ট প্রসঙ্গে শংকর মহাদেবন বলেন, বাংলাদেশের ভালোবাসায়, এদেশের মানুষের সঙ্গীতপ্রেমে আমরা মুগ্ধ।
দিওয়ালি আলোর উৎসব। মঞ্চে নানান রঙের আলোর ভিড়ে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এ সঙ্গীত-আনন্দযজ্ঞ শেষ হয় রাত সোয়া ১১টায়। এরপর গ্যালারির সব দর্শকদের চমকের কথা মনে করিয়ে দেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা বাংলাদেশি সংগীতশিল্পী মেহরিন। হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা অবশ্য চমকে দেওয়ার সে ঘোষণা দিয়েছিলেন আয়োজনের শুরুতেই। আর পাঁচ হাজার দর্শক হৃদয়ে সেই চমক এনে দিলো আকাশ জোড়া আতশবাজি!
আলো আধারির রাতে আতশবাজির ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে উঠলো পুরো এলাকা। মূল মঞ্চের পেছন থেকে আতশবাজি। দীর্ঘক্ষণ মনের মতো সব গান শুনে মনের মধ্যে যে রেশ দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলো, তাতে যেনো আরো আলো রাঙিয়ে দিলো টানা ৫ মিনিটের আতশবাজি।
লাল-হলুদ-সবুজ আর নীল আলোর রোশনাইয়ে শহরে তখন আলোর বৃষ্টি। আতশবাজির সে আলো পুরো আকাশজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে আইসিসিবি'র বাইরে থেকেও হাজারও মানুষ দেখেছে মনোরম আলোর খেলা। প্রিয় শিল্পীর গানের সঙ্গে আতশবাজিও দর্শকের মনে গেঁথে দিলো জীবনের অনন্য এক স্মৃতি। তাইতো সব বয়সের মানুষের ভিড় ছিল আলোর এ উৎসবকে ঘিরে।
** শংকর-এহসান-লয়ের সুরের মূর্ছনায় দিওয়ালি কনসার্ট
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৮
এইচএমএস/ওএইচ/