ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

ঈদ স্পেশাল

ভালোবাসা আত্মার মধ্যে, প্রাপ্তিতে না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৯
ভালোবাসা আত্মার মধ্যে, প্রাপ্তিতে না গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ছবি: রাজীন চৌধুরী/বাংলনিউজ

একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশ বরেণ্য গীতিকবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের রচয়িতা তিনি। উপহার দিয়েছেন বেশকিছু ব্যবসাসফল সিনেমাও। তবে গীতিকবি হিসেবেই তিনি আকাশকুসুম খ্যাতি অর্জন করেছেন।

বিবিসি’র জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের তিনটির রচয়িতা গুণী এই গীতিকবি। গানগুলো হচ্ছে- ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল’ ও ‘একবার যেতে দে না’।

গীতিকাব্য তথা সৃষ্টিকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য একুশে পদকসহ ছয়বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।  

দীর্ঘ শোবিজ জীবনে তার রয়েছে সমৃদ্ধ সৃষ্টিকর্ম। বাংলানিউজের ঈদ আয়োজনে এই কিংবদন্তি তার ব্যক্তিগত কিছু ভালোলাগা-মন্দ লাগার কথা জানিয়েছেন। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো:-

বাংলানিউজ: আপনার আর এখনকার শিশুদের বেড়ে উঠা ও শৈশবকে পার্থক্য করবেন কিভাবে?
গাজী মাজহারুল আনোয়ার:
এর জন্য তো অনেক কথাই বলতে হবে। এখনকার ছেলে-মেয়েদের ক’জনের শৈশব আছে, তুমিই বলো! কয়টা ছেলে-মেয়ে নদীতে কিংবা পুকুরে সাঁতার কাটার সুযোগ পাই, ঘুড়ি উড়াতে পারছে, মাছ ধরতে পারছে, গাছে উঠতে পারছে, পাখির বাসা খুঁজে গাছে গাছে, ঘুরে বেড়ায় এ গাছে ও গাছে। কম্পিউটার আর মোবাইল কেন্দ্রীয় জীবন তাদের। শুধু শহরের বাচ্চারা নয়, গ্রামের ছেলে-মেয়েদেরও এখন একই অবস্থা। এর জন্য দায়ী আমরাই। আছে প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ, প্রকৃতির অভিশাপ ও কিছু বিরূপ আচরণ। যে কারণে এখনকার ছেলে-মেয়েদের আবেগটা নেই। এর পুরোপুরি বিপরীতে ছিল আমাদের শৈশব। আমার যা বলার বলে দিয়েছি, তোমার যা বোঝার বুঝে নিও। গাজী মাজহারুল আনোয়ার।  ছবি: রাজীন চৌধুরী/বাংলনিউজবাংলানিউজ: সৃষ্টিকর্মে অবদানের জন্য একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আপনি কি মনে করেন, প্রত্যাশার সঙ্গে আপনার প্রাপ্তির যথাযথ সমন্বয় ঘটেছে?
গাজী মাজহারুল আনোয়ার:
ভালোবাসা আত্মার মধ্যে, প্রাপ্তির মধ্যে না। বছর কয়েক আগে রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে একটি বড় আয়োজনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। দেরিতে যাওয়ার কারণে আর আলোচনা শুরু হয়ে যাওয়ায় আমি অতিথি নয়, দর্শক সারির পেছনে গিয়ে বসি। সেটি কেউ টের পাইনি। হঠাৎ এক মন্ত্রীর (নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক) চোখে পড়ে যাই আমি। তিনি আসন ছেড়ে এসে জানতে চাইলেন, কেনো আমি পেছনে বসলাম। আমি বললাম, দর্শক হওয়ার অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য। তিনি আমাকে বললেন, অতিথি আসনে গিয়ে বসতে। আমি মানা করলে তিনি বলে উঠেন, আপনি এখানে বসে থাকলে আমি আর চেয়ারে বসবো না। এখানে দাঁড়িয়ে থেকেই অনুষ্ঠান শেষ করবো। সেদিন মনে হয়েছিলো জীবনে কিছু অর্জন করেছি, হয়তো। এটাই জীবনের প্রাপ্তি। পুরস্কার তো টাকা দিয়েও কেনা যায়। কিন্তু এগুলো কি সম্ভব!

বাংলানিউজ: সদ্য প্রয়াত সুবীর নন্দীর সঙ্গে আপনার পরিচয়, প্রথম কাজ এবং একটি স্মৃতি সম্পর্কে জানতে চাই।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার:
স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর পরের কথা, দিন-তারিখ মনে নেই। তখন আমি একটি সিনেমা নির্মাণের কাজে ব্যস্ত। গান নিয়ে বসেছিলাম সত্য সাহার গ্রীন রোডের স্টুডিওতে। পাশে দেখি একটি ছেলে বসা। সত্য সাহা বললেন- ওর নাম সুবীর। খুব ভালো গান করেন। ওর জন্য দেখেন কিছু একটা করতে পারেন কি না। আমি সুবীরকে একটি গান করতে বললাম। ওর গান শুনে মনটা ভরে গেলো। এরপর সুবীরকে দিয়ে আমি আমার গানের অস্থায়ীটা ‘আমার বাংলাদেশ’ শিরোনামে গানটি করাই। তখন গানটি বেশ সাড়া ফেলেছিল। এছাড়াও আরও অনেক গান তাকে দিয়ে করিয়েছি পরবর্তীতে। বলতেই হবে, সুবীরের ছিলো দারুণ একটা রেওয়াজি গলা। ক্লাসিক্যাল ফরমেটে চর্চা করে গলাটা তৈরি করেছিলো সে। তার সাধনাই তাকে সবার স্বাদের শিল্পীতে পরিণত করেছে।  

বাংলানিউজ: আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলও আজ আমাদের মাঝে নেই, যাকে আপনি ছোট ভাই-সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। ওনার কোন বিষয়টা আপনার খুব ভালো লাগতো?
গাজী মাজহারুল আনোয়ার:
বুলবুলে সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, দেশপ্রেম। তার মধ্যে দেশাত্মবোধক চেতনাটা খুব কাজ করতো। চিন্তায়-চেতনায় খুবই রুচিশীল ছিলো। তার এ বিষয়টা আমাকে খুব আনন্দ দিতো। ওর সঙ্গে পরিচয় সাবিনা ইয়াসমীনের মাধ্যমে।
আমি তখন ‘নান্টু ঘটক’ নামের সিনেমা নির্মাণে ব্যস্ত ছিলাম। সত্য সাহা হুট করেই বিদেশ চলে যাওয়ায় আমার গানের কাজ আটকে যায়। একদিন সাবিনা জানালো বুলবুলের কথা। খুব ভালো সুর করে নাকি। পরিচয়ে তাকে দেখেই মেধাবী মনে হয়েছিলো। এরপর আমার এই সিনেমার সবগুলো গান বুলবুলকে দিয়েই করাই। এই সিনেমার ‘চলে আমার সাইকেল হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া’ গানটি তখন ব্যাপক সাড়া ফেলে। এটিই ছিল সিনেমায় বুলবুলের প্রথম সঙ্গীত পরিচালনা। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।  

বাংলানিউজ: এখন কী করতে পারলে আপনার খুব ভালো লাগতো...
গাজী মাজহারুল আনোয়ার:
মহিষের পিঠে চড়ে বাঁশি বাজাতে পারলে খুব ভালো লাগতো। ভালো লাগতো, নদীর কিনারায় বসে মাঝির কণ্ঠে গান শুনতে পারলে। গাজী মাজহারুল আনোয়ার।  ছবি: রাজীন চৌধুরী/বাংলনিউজবাংলানিউজ: আপনি তো বেশ ক্রিকেটপ্রেমি মানুষ। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেমন করবে বলে আপনার মনে হয়?
গাজী মাজহারুল আনোয়ার:
দেশ ভালো খেললে ভালো লাগে। খারাপ খেললে খারাপ লাগে। দু’টি অনুভূতির স্বাদই আমি নিই। সুতরাং আমার প্রত্যাশা কম হতে যাবে কেনো? আমি চাই, কাপ জিতে বাংলাদেশ বিশ্বকে বিস্মিত করুক।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৯
ওএফবি/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।