ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

রাজনীতির রঙে বিভাজিত কলকাতার চিত্রজগত

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২১
রাজনীতির রঙে বিভাজিত কলকাতার চিত্রজগত টালিগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত মহানায়ক উত্তম কুমারের ভাস্কর্য

কলকাতা: আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। রাজনীতির দলীয় রঙে রেঙে উঠছে বঙ্গবাসী।

অফিস পাড়া থেকে বাজার হাট সবকিছুতেই রাজনৈতিক রঙ লেগেছে। ফলে বাদ যায়নি বাঙালি শুটিং পাড়া অর্থাৎ কলকাতার টলিউড। শহরে শীতকালীন মৌসুম চললেও ভোটের উষ্ণ হাওয়া বইতে শুরু করছে টলিউডেও।

তবে বিনোদন জগতের সঙ্গে টলিউডের কলাকুশলীদের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পশ্চিমবঙ্গে অনেকদিনের। বাম আমলে সংস্কৃতি জগতের সঙ্গের রাজনীতির ছিল নিবিড় যোগাযোগ। ভোট প্রচারেও অংশ নিতেন তারা। তবে নির্বাচনের ময়দানে প্রার্থী হয়ে সরাসরি বামপতাকা কাঁধে তুলে নেননি তারা। কারণ বামেদের মতাদর্শে তা যেত না। কারণ তারা মনে করতেন রাজনীতি ও সংস্কৃতি একসাথে বিচরণ করলেও বিশেষ ক্ষেত্রগুলোয় একে অপরের পরিপূরক নয়। ফলে বামপ্রার্থী হিসেবে সেভাবে বিনোদন জগতের প্রার্থীদের দেখা যায়নি।

তবে বামক্ষমতা চ্যুত হওয়ার শেষের দিকে কিছুটা হলেও মিথ ভেঙেছিল। আর তাই মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান লগ্নে অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়র মতো দু'একজনকে দেখা গিয়েছিল বামপ্রার্থী হতে। একটা সময় টলিউড থেকে নাট্যজগত সবটাই ছিল বাম সমর্থকে ভরপুর। তা সত্বেও জনসেবামূলক কাজে তাদের কোনো কালেই ব্যবহার করেনি বামেরা।

বিনোদন এবং রাজনীতি একসাথে চালানো যায় কিনা তা নিয়ে মতবাদ থাকলেও এই সম্পৃক্ততা গভীর হয় মমতার তৃণমূল সরকারের আমলে। সরাসরি রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন টলিউডের ঝাঁকঝাঁক কলাকুশলী। সেই লিস্টে কে নেই! প্রয়াত তাপস পাল, মিঠুন চক্রবর্তী, চিরঞ্জিত, কবীর সুমন, মাধবী, শতাব্দী রায়, মুনমুন সেন, দেবশ্রী রায় থেকে শুরু মমতার মঞ্চ থেকে বাদ যায়নি দেব, মিমি, নুসরাতের মতো হেভিওয়েট তারকারা। আর যে সব তারকাদের দল প্রার্থী হওয়ার টিকিট দিতে পারেনি তাদেরও দলীয় ও সরকারি নানান পদ দেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে আছেন সোহম, হিরণ, রুদ্রনীল, নচিকেতার মতো একঝাঁক তারকা।

এর বাইরেও তৃণমূল সরকার আসার পর ২১শে জুলাই দলের শহিদ দিবসের মঞ্চে নিয়মিত দেখা যেত ছোটবড় সব পর্দার কলাকুশলীদের।

তবে ২০১৪ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্যে ফাটল ধরায় ভারতীয় জনতা পার্টি অর্থাৎ বিজেপি। টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় শুরু হয় বিজেপির আনাগোনা। বেশ কয়েকজন কলাকুশলী যোগ দেন বিজেপিতে। তাদেরমধ্যে কয়েকজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন। তবে বিষয়টাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবে ভেবেছিল মমতার সরকর। তাই তখন পাত্তাও দেয়নি। আর তাই স্টুডিও পাড়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের একচ্ছত্র অধিকারে ফাটল ধরায় বিজেপি।  

বিজেপিতে শুধু যোগ দেওয়া নয়, রাজনীতির সামনের সারিতে চলে আসেন সেইসব কলাকুশলীদের মধ্যে অনেকেই। এদের মধ্যে অগ্নিমিত্রা পাল, লকেট চ্যাটার্জি, রুপা গাঙ্গুলি, বাবুল সুপ্রিয় অন্যতম। এমনকী সুদুর মুম্বাই থেকে উড়ে এসে গেরুয়া শিবিরের হয়ে বঙ্গভোট ময়দানে নেমেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ীর মতো তারকারাও।

তবে রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট হলেও সে সময়ও সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেনি। কারণ দুই দলের সমর্থক কলাকুশলীরা তাদের জীবিকাস্থানে একে অপরের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিলেন। একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিতও হচ্ছিলেন, সিনেমার প্রমোশন করছিলেন, পার্টি করছিলেন। কিন্তু ২০২১ এর নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে একে-অপরের সঙ্গে সেই সৌহার্দ্যের সম্পর্কেও দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে দলবদল যেমন আলোচনার শীর্ষে, তেমন টলিউডে বিভাজন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। আর সেই নিয়েই চলছে আলোচনা, কটাক্ষ থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে চলছে জোর সমালোচনা। তবে সমস্যার এখানে শেষ নয়। কারণ তার প্রভাব পড়েছে তাদের প্রফেশনে।

প্রকাশ্যে না হলেও শোনা যাচ্ছে বিজেপি সমর্থক কলাকুশলীদের সঙ্গে কাজ করতে চাইছেন না অনেক তৃণমূল ঘনিষ্ঠ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। এমনকি শোনা যাচ্ছে তারা নিজেদের মধ্যে দল বানিয়ে নিচ্ছেন। সেই দলের বাইরে দলবিরোধীরা কাজ পাচ্ছে না। এমনকি কোনও কলাকুশলী সামাজিক মাধ্যমে হেনস্থা হলে তার পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও সূক্ষ্ম দলাদলি নজরে পড়ছে। যা বছর খানেক আগেও ভাবা যেত না। অনেকক্ষেত্রে সিনেমার প্রযোজকরাও জড়িয়ে পড়ছেন এই দলাদলিতে। যদিও প্রকাশ্যে এই নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। মিডিয়া প্রশ্ন করলেও 'সবকিছু ঠিক আছে। এগুলি সাময়িক', বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।

যারা দল নয়, কাজই সব বা প্রবীণ কলাকুশলীরা মনে করছেন রাজ্যে নির্বাচন যত এগোবে জটিলতা বাড়বে। তবে কি টলিপাড়ায় রাজনীতির রঙে ফিকে হবে নাকি আরও জটিল হবে? নাকি ভোটের পর আবার দলাদলি ভুলে জীবিকার জায়গায় এক হয়ে যাবে ভারতের বাংলা চলচ্চিত্র জগত? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই বলে দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২১
ভিএস/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।