ঢাকা, সোমবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ সফর ১৪৪৬

বিনোদন

ইরফান নেই এক বছর, মর্মস্পর্শী স্মৃতিচারণ করলেন সুতপা

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২১
ইরফান নেই এক বছর, মর্মস্পর্শী স্মৃতিচারণ করলেন সুতপা ইরফান খান ও সুতপা শিকদার

বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা ইরফান খানের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হলো। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে হৃদয়স্পর্শী স্মৃতিচারণ করেছেন তার স্ত্রী ও লেখিকা সুতপা শিকদার।

সুতপা তার স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, ‘আমার অনুভূতি আচ্ছন্ন করে তিনি আছেন, শুধু শারীরিক উপস্থিতিটাই যা নেই।

ইরফান তুমি নেই আমি বিশ্বাস করি না। সময় নাকি সব মুছে দেয়। কিন্তু ১৯৮৪ সালে এনএসডি-তে পড়ার সময় সেই যে ইরফানের সঙ্গে দেখা হল, তারপর থেকে এতগুলো বছরের সব ঘটনা আমাকে ঘিরে থাকে রোজ। কিছুই মুছে যায়নি। অনেকে আমাকে বলেন, ঠিক আছ তো?...এ বার আবার লিখতে শুরু করো। আমাকে উজ্জীবিত করার জন্যই শুভাকাঙ্ক্ষীরা এ কথা বলেন জানি। কিন্তু আমি তো নেতিবাচক মনের ছিলাম না কোনওদিন। আজও নই। ইরফান স্পর্শকাতর ছিল, বিষণ্ণ ছিল, ব্যথাতুর ছিল। সামনের দিকে তাকিয়ে বাঁচতে হবে জেনেও আমি ইরফানে আচ্ছন্ন সম্পূর্ণ। এ এক আশ্চর্য অনুভূতি!

এত দ্রুত ইরফানের মৃত্যু হবে সেটা আমরা নিজেরাই আশা করিনি। মৃত্যুর দু’ মাস আগে আমরা বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা অবধি করেছিলাম। এদিকে ইরফান পড়তে শুরু করেছিল নতুন স্ক্রিপ্ট। এক ফুটবল কোচ ট্রেনিং দিচ্ছেন একদল ‘বিশেষভাবে সক্ষম’ ছেলেদের। টুর্নামেন্টে তারা লড়ে এবং শেষমেশ জেতে। এই কাহিনি থেকে সিনেমা করতে ইরফান খুবই উৎসাহী হয়েছিল। অভিনয় না করতে পারলে পরিচালনা করবে, এমনও ভেবেছিল। এমনকি ইরফানের ইচ্ছে ছিল বাবিল এই ছবিতে অভিনয় করুক।

মৃত্যুর পরে কী হয়? এই প্রশ্নে ডুবে থাকত ইরফান। এনএসডি-তে পড়ার সময় দেখেছি মৃত্যু বিষয়ক নাটক হলে বিশেষ মনোযোগী থাকত ও। ভয়ও পেত ‘যদি আমি মরে যাই’ এই চিন্তায়। শেষ আড়াই বছরে আর মৃত্যুকে ভয় পেত না। কিন্তু খুব বাঁচতে চাইত। চাইত একটি অরণ্য সৃজন করবে। সমাজসেবামূলক কাজ করবে অনেক। বছরে একটার বেশি সিনেমা হাতে নেবে না, যাতে পরিবারকে সময় দিতে পারে বেশি।

শুধুমাত্র সুঅভিনেতা নয়, ইরফানের ছিল এক গভীর দার্শনিক সত্তা। মারণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পর তার লেখায় আমরা পেয়েছি সেই সত্তার খোঁজ। পাশে থাকতাম সব সময় তাই টের পেয়েছিলাম চিন্তাশীল ইরফানকে। ইরফান শো-বিজের ঝলমলে জগৎ ছেড়ে চলে আসতে চেয়েছিল। জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজতে অস্থির হয়ে উঠত। ধর্ম বলতে বুঝত আধ্যাত্মিকতাকে। অন্ধ, আচারসর্বস্ব ধার্মিক ছিল না, ছিল জাগ্রত অনুসন্ধানী ধার্মিক।

ইরফানের কাছে অনেক শিক্ষা পেয়েছি। তাই সেই চর্চাই করি, যাতে লিঙ্গ-ধর্ম ইত্যাদি যে-কোনও পরিচয় ছাড়াই নিজের কাছে সৎ একজন মানুষ হতে পারি। এই চর্চাই তার প্রতি শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধার্ঘ্য। আমি ধর্মান্তরিত নই। হিন্দু। কোরান পড়িনি, কিন্তু রমজান মাসে উপোস করি। ইরফান বলত রমজান হল আত্মবিশ্লেষণের মাস। কে আমি? আমার মধ্যে কী কী খারাপ জিনিস আছে? এই আত্মবিশ্লেষণ করি। এবং এটা একান্তই আমার নিজের পথে। কোনও রিচুয়াল হিসেবে নয়। ইরফান নিজে উপোস করত না। শেষদিকে বলত, সপ্তাহে একটা দিন উপোস করব এবং সেটা সোমবার। সোমবার দিনটি শিব ঠাকুরের দিন। এ রকমই ছিলাম আমরা।

সবাই বলে আমাকে, ‘এক বছর হয়ে গেল ইরফান নেই। সত্যের মুখোমুখি আপনাকে খুব শক্তিশালী লাগে। ’ আমি হাসি। আমাকে শক্ত থাকতেই হবে। পারিবারিক দায়িত্ব, কর্তব্য আছে। শক্তিতে ভরপুর থাকতেই হবে। আমার আবেগকে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য।

একটা ঘটনা বলি। গতমাসে আমি ইরফানের ভাইয়ের ছেলের বিয়েতে গিয়েছিলাম। মুম্বাই থেকে জয়পুর। সেখানে যাওয়ার পর হঠাৎ আমি কাঁদতে শুরু করি। সাত-আট দিন আমি কাঁদতেই থাকি। কী কান্না! এত কান্না আমার ভেতরে জমা ছিল? কেন এমন হল আমি জানি না। মনে হয় আমার সঙ্গে সন্তানেরা ছিল না, আমি একা ছিলাম, তাই আমার আর শক্তিশালী হওয়ার দরকার ছিল না। এবং সেই জায়গাটা যে ছিল রাজস্থান! আমার ইরফানের জায়গা! আর আমরা দুজনেই তো বৃষ্টি ভালবাসতাম খুব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২১
এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।