ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

বিনোদন

একাধারে ৭ সিনেমা ফ্লপের পরও উত্তম কুমার যেভাবে হন মহানায়ক

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২২
একাধারে ৭ সিনেমা ফ্লপের পরও উত্তম কুমার যেভাবে হন মহানায়ক উত্তম কুমার

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে উত্তম কুমার একটি অধ্যায়ের নাম। এক্সট্রা শিল্পী থেকে তিনি হন মহানায়ক।

তার চলে যাওয়ার পর কেটে গেল ৪২ বছর। কিন্তু এখনো তিনি ভক্তদের হৃদয়ে উজ্জ্বল।

বিরল প্রতিভার অভিনয়ের মাধ্যমে উত্তম কুমার যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন, এখনো তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি কেউ। তবে ক্যারিয়ারের শুরুটা একেবারে মসৃণ ছিল না মহানায়কের।

উত্তম কুমার প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন একজন এক্সট্রা শিল্পী হিসেবে। পরে নায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুতে টানা ৭টি সিনেমা ফ্লপ হয়েছে তার। কিন্তু এরপরও তিনি কীভাবে হয়ে ওঠলেন মহানায়ক?

এর উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমে বলতে হবে উত্তম কুমারের কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের কথা। হাল ছেড়ে না দিয়ে একের পর এক চেষ্টাই তাকে এনে দিয়েছে মহানায়কের খেতাব।  

উত্তম কুমারের পারিবারিক নাম অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়ে প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে এই অভিনেতাকে।

১৯৪৭ সালে ‘মায়াডোর’ সিনেমায় এক্সট্রা শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে নাম লেখান উত্তম কুমার। এরপর ১৯৪৮ সালে ‘দৃষ্টিদান’ সিনেমায় অভিনয় করলেও সেটি নাম মাত্র চরিত্রেই।  

নায়ক হিসেবে উত্তম কুমারের প্রথম সিনেমা ‘কামনা’। সিনেমাটি মুক্তির পর মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তার একের পর এক সিনেমায় ফ্লপ হয়। সবাই তাকে উপহাস করে টলিউড ইন্ডাস্ট্রির ‘ফ্লপ মাস্টার’ খেতাবও দিয়েছিলেন!  

তবে হাল ছাড়েননি উত্তম কুমার। ব্যর্থতা থেকেই গড়েছিলেন সাফল্যের রাজ্য। ১৯৫৩ সালে তার অভিনীত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ মুক্তির পর ফ্লপ মাস্টার থেকে তাকে বানায় রোমান্টিক নায়ক। সুপারহিট হয় সিনেমাটি।

১৯৫৪ সালে উত্তম কুমার চলে আসেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এক বছরেই ১৪ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন, যার অধিকাংশই ছিল সফল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে ‘অগ্নিপরীক্ষা’।  

১৯৫৫ সালের আগের উত্তমের সঙ্গে পরবর্তী উত্তমকে প্রায় মেলানোই যায় না। আবার ১৯৬০-উত্তর উত্তম যেন আরও এক বিস্ময়। ১৯৬৫ পরবর্তী সময়ে উত্তম যেন প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।  

অভিনয় গুণে দর্শকদের কাছে রোমান্টিকতার সার্থক উদাহরণ হয়ে ওঠেন উত্তম কুমার। যে কোনো চরিত্রেই নিজেকে মানিয়ে নিতেন অদ্ভুত ক্ষমতা দিয়ে। সময়ের ব্যবধানে নায়ক থেকে উত্তম কুমার হয়ে ওঠেন মহানায়ক।  

‘অগ্নিপরীক্ষা’ সিনেমায় সুচিত্রা সেনের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার। এরপরই তারা বাংলা সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। পঞ্চাশের দশকজুড়ে মহানায়িকা সুচিত্রার ৩৫টি সিনেমা মুক্তি পায়, তার মধ্যে ২৩টিরই নায়ক ছিলেন উত্তম কুমার। এই জুটির অভিনীত অন্যতম সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘হারানো সুর’, ‘পথে হলো দেরি’, ‘সপ্তপদী’, ‘চাওয়া-পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘জীবন তৃষ্ণা’ ও ‘সাগরিকা’।

শুধু বাংলা সিনেমাতেই নয়, উত্তম কুমার অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন বলিউডেও। অভিনয়ের পাশাপাশি কণ্ঠের মুনশিয়ানাও দেখিয়েছেন তিনি।

১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান উত্তম কুমার। বিস্মৃতিপ্রবণ বাঙালি তাকে আজও মনে রেখেছে, এটাই বোধ হয় সবচেয়ে আশ্চর্যের। অবশ্য তার অতিবিরল প্রতিভাই বাঙালিকে একরকম বাধ্য করেছে তাকে মনে রাখতে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২২
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।