কণ্ঠে তুলেছিলেন ‘দিন যায় কথা থাকে...’। প্রকৃতির নিয়মে দিন, মাস আর বছরও চলে যায়, কিন্তু রয়ে গেছে তার কথা, সুর ও গায়কী।
১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে, মেডিক্যাল অফিসার সুধাংশু নন্দী ও পুতুল রানী দম্পতির ঘরে সুবীর নন্দীর জন্ম হয়। বেঁচে থাকলে আজ জীবনের ৬৯ বছরে পা রাখতেন তিনি।
মায়ের কাছেই ৭-৮ বছরে সংগীতের হাতেখড়ি হয় তার। পড়াশোনা শেষে দীর্ঘদিন ব্যাংকে চাকরিও করেন সুবীর নন্দী। তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ বাজারে আসে ১৯৮১ সালে। তবে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আবদুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে।
আধুনিক সংগীতের পাশাপাশি তিনি শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন শাস্ত্রীয় সংগীত, ভজন, কীর্তন এবং পল্লীগীতিতেও। নিজের ভালোলাগার নজরুলসংগীতেও আবেশ ছড়িয়েছেন সুবীর নন্দী।
দীর্ঘ ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে এই কিংবদন্তি গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেই সুবীর নন্দী পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা সংগীতাঙ্গনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ভূষিত হন একুশে পদকেও।
২০১৯ সালের ৭ মে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুবীর নন্দীর জীবনাবসান হয়। এই কিংবদন্তির প্রস্থান বাংলা সুরের জগতে পূরণ হবার নয়। তার শূন্যতা সংগীতাঙ্গন অনুভব করলেও এই শিল্পীর কর্ম ভান্ডারের জনপ্রিয় সব গানের মাঝেই তিনি বেঁচে আছেন, থাকবেন আজীবন।
সুবীর নন্দীর জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘কত যে তোমাকে’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’, ‘বন্ধু তোর বরাত নিয়া’, ‘মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’, ‘একটা ছিল সোনার কইন্যা’, ‘পিঁপড়া খাবে বড় লোকের ধন’, ‘নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে’, ‘তুমি এমনি জাল পেতেছো সংসারে’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’সহ আরো অনেক গান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
এনএটি