বরেণ্য গীতিকবি মনিরুজ্জামান মনিরের বাসা থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ৩টি ট্রফি চুরি হয়েছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ।
সেখানে বলা হয়েছে, অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে আমরা জানতে পেরেছি যে, গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ-এর আজীবন সদস্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় মনিরুজ্জামান মনিরের অনবদ্য সৃষ্টির সুবাদে অর্জিত ৫টি ট্রফি চুরি হয়ে গেছে। ৩ নভেম্বর রাতে তার পশ্চিম মেরুল বাড্ডার বাসার জানালা ভেঙে চুরি হওয়া এই ট্রফিগুলোর মধ্যে ৩টিই ছিলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
ঘটনাটি আমাদের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, চুরির ঘটনার পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুলিশি সহায়তা চেয়েছেন মনিরুজ্জামান মনির। কিন্তু হতাশার বিষয়, ২০ দিনেও (২৩ নভেম্বর) ট্রফিগুলো উদ্ধার হয়নি কিংবা কারা চুরি করেছে সেটিও চিহ্নিত করা হয়নি।
দেশের নন্দিত এই অগ্রজ গীতিকবির চুরি হওয়া সম্মান পুনরুদ্ধারের বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে জোর দাবি জানিয়েছে গীতিকবি সংঘ। এ প্রসঙ্গে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধও জানিয়েছে তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, শ্রদ্ধেয় মনিরুজ্জামান মনিরের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি, ৩ নভেম্বর রাতে তার বাসার জানালা ভেঙে মোট পাঁচটি পুরস্কারের ট্রফি নিয়ে যায় অজ্ঞাতনামারা। বিষয়টি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর টের পান তিনি। এরপর সেগুলো উদ্ধারের লক্ষ্যে ৫ নভেম্বর বাড্ডা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরি নম্বর ৩৬১। পুলিশ তার বাসা পরিদর্শন করে উদ্ধারের আশ্বাস দিয়ে যান। কিন্তু এখনও (২৩ নভেম্বর) পর্যন্ত এ বিষয়ে পুলিশের কাছে আর কোনো অগ্রগতি মেলেনি।
আমরা মনে করি, এই ঘটনাটি দেশের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলার প্রতি বড় হুমকি এবং শিল্পীদের প্রতি অসহায়ত্বের বার্তা দেয়। তাই জাতীয় এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার অনুরোধ করছি সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। আমরা মনে করি, সরকারের দেওয়া স্বীকৃতি চুরি বা ডাকাতি হলে সেটা ফিরিয়ে দেওয়া সরকারের ওপরই বর্তায়।
অবিলম্বে এই বিষয়টির সমাধান না হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে কর্মসূচিতে যাব। কারণ আমাদের প্রতিটি সদস্য ও সংগীত সংশ্লিষ্টদের কাছে এই বিষয়টি প্রচণ্ড আবেগ ও অভিমানের। ’
মনিরুজ্জামান মনিরের চুরি যাওয়া ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দুই জীবন’ সিনেমার ‘তুমি ছাড়া আমি একা পৃথিবীটা মেঘে ঢাকা’, ১৯৮৯ সালের ‘চেতনা’ সিনেমার ‘এই হাত করে নাও হাতিয়ার’ এবং ১৯৯০ সালের ‘দোলনা’ চলচ্চিত্রের ‘তুমি আমার কত চেনা’ গানগুলো।
বলা বাহুল্য, বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল এবং খ্যাতিমান গীতিকবি মনিরুজ্জামান মনির। আশির দশকের শেষভাগ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটানা গান রচনা করেছেন তিনি। এরমধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি গান হলো- ‘বুকে আছে মন, মনে আছে আশা’, ‘কী জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, কী দিয়া মন কাড়িলা’, ‘তোমাকে চাই আমি আরও কাছে’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ও আমার বন্ধু গো চির সাথি পথচলার’, ‘আমি চিরকাল প্রেমেরও কাঙাল’ ইত্যাদি।
সিনেমায় তার লেখা সর্বশেষ জনপ্রিয় গান ‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও, আমি এক সিন্ধু হৃদয় দেবো’। এছাড়া অডিও ভুবনেও মনিরুজ্জামান মনির প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। লিখেছেন ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’র মতো বিখ্যাত সব গান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এনএটি