ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

সৌন্দর্যের লীলাভূমি ফুলবাড়িয়া’র আলাদিনস পার্ক

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১২
সৌন্দর্যের লীলাভূমি ফুলবাড়িয়া’র আলাদিনস পার্ক

ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) থেকে ফিরে: ফুলবাড়িয়া নামের শুরুতেই রয়েছে একটি শব্দ ‘ফুল’। ফুলকে যে ভালোবাসে না সে নাকি মানুষও খুন করতে পারে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাগর দীঘি, বড়বিলা বিল, পাহাড়ি অঞ্চল ফুলবাড়িয়াকে করেছে মনোরম, আকর্ষণীয়।

পর্যটনের সম্ভাবনা জাগানিয়া এ উপজেলাতেই সবুজের মিশেলে প্রায় একশ’ বিঘা জমির ওপর বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একটি পার্ক। নান্দনিক সৌন্দর্যে ঠাসা এ পার্কের নাম আলাদিনস পার্ক। ঢাকার বিশিষ্ট শিল্পপতি আলাউদ্দিন এ পার্কের উদ্যোক্তা।

ময়মনসিংহ থেকে দক্ষিণে ফুলবাড়িয়া একটি সমৃদ্ধ জনপদ। আদিগন্ত ফসলের মাঠ। ধান উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করা এলাকা। এখানকার হলুদের রয়েছে দেশজোড়া খ্যাতি। লাল চিনির জন্যও বিখ্যাত এলাকা এটি। প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয় আখ। রয়েছে রাবার বাগান। ফরেস্ট এলাকায় জীবনযাত্রায় রয়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আখিলা, বানার নদীর অববাহিকায় ফুলবাড়িয়ায় হয় দেশের বিখ্যাত খেলা ‘হুমগুটি উৎসব’। সেই ফুলবাড়িয়ার দক্ষিণ প্রান্তে পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে পার্ক। আলাদিনস পার্ক।

ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে কুমিরচাষ প্রকল্প ও ফুলবাড়িয়ার কাহালগাঁও এলাকার অকির্ড ফুল চাষ কেন্দ্র গুপ্তবৃন্দাবনের ঐতিহ্যবাহী এ জনপদের পাশে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলার প্রান্তসীমায় গড়ে উঠেছে এ পার্ক। এ পার্কে দেখা মিলে সবুজ-শ্যামলিমায় মিতালী করা আবহমান বাংলার চিচেনা গাঁয়ের ছায়াঘেরা পরিবেশ। আদিগন্তজোড়া এ সবুজের মাঝেই যেন আগন্তুকরা খুঁজে পায় অরণ্যের সজীবতা।

ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের বেতবাড়ি গ্রামের বিশাল ‘ক্যানভাসে’ গড়ে ওঠা এ পার্ক আয়তনে ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্ক থেকেও সুবিস্তৃত ও অনিন্দ্য সুন্দর। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল। মাত্র ৩ ঘন্টায় পৌঁছা যায় এ পার্কে। ২০১০ সালের নভেম্বরের শুরুর দিকে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন এ পার্কের উদ্বোধন করেন। এরপরে বেশিদিন লাগেনি বিনোদন পিয়াসী মানুষের কাছে এ পার্কের সৌন্দর্যের খবর পৌঁছতে।

ফুলবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি নুরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভালুকার হাতিবেড় গ্রামের কুমির চাষ প্রকল্প থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরেই এ পার্কটি। এ পার্কে রয়েছে চিত্ত বিনোদনের আধুনিক ও উন্নত মানের ব্যবস্থা। রয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর চমৎকার আতিথেয়তা। ’

তার মতে, শুধুমাত্র ফুলবাড়ীয়ার ৫ লাখ বাসিন্দারই নয়, বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার মানুষের বিনোদনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে এ পার্কটি। এ পার্কের ভেতরকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই মানুষজন ছুটে আসছেন। ’

সরেজমিনে এ পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ ও লতা, গুল্ম, সৌন্দর্যবর্ধক নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়ে সবুজ ছায়াবীথি গড়ে তোলা হয়েছে। পার্কের ভেতরেই রয়েছে বিশাল আকৃতির তাল, সেগুন ও বটগাছ। ভেতরের স্থানটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে ভূমিজুড়ে লাগানো হয়েছে প্রচুর ঘাস। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই এখানকার নানা প্রজাতির গাছে পড়তে শুরু করে টলমলে শিশির।

পার্কটিকে অনেকটাই ঢাকার আশুলিয়ার নন্দন ও সাভারের ফ্যান্টাসি কিংডমের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের রাইডস। রয়েছে হরেক রকমের ভাস্কর্য। রয়েছে ওয়ান্ডার হুইল, বাম্পার কার, ত্রিডি রাইডস, মিনি সিøপার, মিনি চিড়িয়াখানা ও অটো ক্যান্ডেল।
এছাড়া সংযোজনের অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছে- ট্রেন, সাবমেরিন, বয়েজার বল, রকেট, ওয়েব পুল, ড্রাইভ সিøপার, টাওয়ার স্লিপার, অটো সিস্টেমের বল কেনোসহ আকর্ষণীয় সব রাইডস।

আলাদিনস পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলাউদ্দিন জানান, প্রায় ২২২ বছরের পুরনো ময়মনসিংহ জেলায় কোনো পার্ক নেই। ফুলবাড়িয়া ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। ময়মনসিংহ শহর ও আশপাশের ভ্রমণপিয়াসীরা একটুখানি প্রশান্তি আর সজীবতার টানে ছুটে আসছেন এ পার্কে।

পার্কে ঘুরতে আসা ত্রিশালের শাহাবুল আলম জানান, পর্যটকরা এখানে মূলত আসেন বেশ কয়েকটি জিনিসের কারণে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, এখানকার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী। এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যে রোমাঞ্চিত হন তারা।

তিনি আরও জানান, ময়মনসিংহ অঞ্চলের যেসব মানুষ পিকনিক করতে শেরপুরের গজনী, লাউচাপড়া, মধুপুর গড়ে যেতেন তাদের পথ এখন শেষ হচ্ছে ফুলবাড়িয়ায়। পিকনিক পার্টিগুলোকে যেন একরকম উষ্ণ আর আন্তরিকতার হাতছানি দিয়ে ডাকছে এ পার্ক।

পার্ক সংশ্লিষ্টরা জানান, এ পার্কে রয়েছে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও। এখানে প্রতিদিন কটেজ ভাড়া হচ্ছে- এসি ডিলাক্স ৪ হাজার টাকা, এসি ৩ হাজার ও নন এসি ২ হাজার টাকা। পিকনিক প্যাকেজ হচ্ছে প্রবেশসহ সকল রাইডস এবং দুপুরের খাবার কর্পোরেট বা ফ্যামিলি- জনপ্রতি ৫শ’ টাকা, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড় অর্থাৎ জনপ্রতি ৪শ’ টাকা। আর ১০ বছরের নিচের শিশুদের জন্য মাত্র সাড়ে ৩শ’ টাকা। এ সংক্রান্ত হেল্প লাইন ফোন-০২-৮৯৫৮৬১২, সেলফোন-০১৮৩১-০০৩০৫৫, ০১৮৩১-০০৩০৬৪।

এ পার্কে ঘুরতে আসা পর্যটকদের মতে, এখানকার অপরূপ সৌন্দর্য আর বিশাল সবুজ প্রকৃতি সহজেই মন ভরিয়ে দেয়। সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ভালোবাসার বিশালতায় হারিয়ে যেতে মন চায়।
আলাদিনস পার্ক নিয়ে গর্বিত ফুলবাড়িয়াবাসী পর্যটনের অফুরান সম্ভাবনাময় ফুলবাড়ীয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দেখে তৃপ্ত, আনন্দিত।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, ০৫ এপ্রিল, ২০১২
এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর;

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।