কল্পনার জগতে উড়ে উড়ে বেড়ানো শিশু-কিশোরেরা বড়দের যা করতে দেখে নিজেরাও তাই করার চেষ্টা করে। নিজেদের সৃষ্টিমতা দিয়ে তারা বড়দের ক্রিয়াকান্তে অংশ নেয়ার চেষ্টা করে।
কিন্তু আপনমনে খেলা করার জগৎটা তাদের নিজস্ব। এখানে তারা সম্পূর্ণই স্বাধীন। খেলার মধ্যে প্রয়োগ করতে পারে তাদের যাবতীয় চিন্তাচেতনা। আর তারা তাদের এ খেলার জগতে বড়দেরই অনুকরণ করে। তাদের এ খেলার জগতে তারা বড়দের মতোই সংসার-সংসার, জামাই-বউ, চোর-পুলিশ, ক্রেতা-বিক্রেতা, পুরন্দর-দস্যু, গোত্র-জন, রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা সাজে। সাতটি খোলামকুচিকে ভাবে সাত নগরী। তা ভাঙে আবার গড়ে। একটি বাঁকা ডালকে ভাবে পঙ্খীরাজ ঘোড়া, কলাগাছের খোলকে বানায় ময়ূরপঙ্খী নাও। এমন খেলা খেলেই তারা মজা পায়। আর এভাবেই শুরু হয় লোকখেলা। আর বড়দের ক্রিয়াকান্তের নকল করেই যেহেতু ছোটরা খেলা করে তাই স্বাভাবিক কারণেই এসব খেলার মধ্যে মানব-সমাজ-রাষ্ট্র জীবনের ছাপ পড়ে যায়। তাই লোকখেলার মধ্যে মানবজীবনের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, শাসন-শোষণ, শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ছাপ পড়ে যায়।
সেই আদিমকাল থেকেই শিশু-কিশোররা তাদের অপার সৃষ্টিমতা দিয়ে বিভিন্ন খেলা খেলে চলেছে। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় কালের অতল গহ্বরে হারিয়েও গেছে অনেক খেলা। কোনো কোনো খেলা আবার প্রমিত রূপ লাভ করে হয়ে উঠেছে শুধুই মজার খেলা।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও পরে আমরা দেখেছি শিশুদের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে উঠতে। তারা একদল সাজতো মুক্তিযোদ্ধা, অন্যদল রাজাকার। গাছের ডাল দিয়ে বানাতো রাইফেল-স্টেনগান আর মাটির ঢেলা হতো গ্রেনেড। কোনো বালক হয়তো শত্রুশিবির রেকি করে আসতো। এরপর মুক্তিযোদ্ধা বালক-বালিকারা ক্রলিং করতে করতে এগিয়ে যেতো পাকি ছাউনির দিকে। মুখে মুখে ট্যা ট্যা ডুম আওয়াজ তুলে আক্রমণ করতো সেখানে। সঙ্গে সঙ্গে শত্রুরাও জবাব দিত। ধুন্ধমার যুদ্ধ হতো। একসময় পরাজিত হতো পাকি ও রাজাকাররা। মুক্তিযোদ্ধারা উড়িয়ে দিত বিজয়ের পতাকা।
গুণী চিত্রপরিচালক সুভাষ দত্ত তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র অরুণোদয়ের অগ্নিসাী ছবিতে এমন খেলার দৃশ্য ধারণ করে রেখেছেন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪২০, জুলাই ০৩, ২০১০