ঢাকা: একই পৃথিবীতে বাস করেও তারা যেন ভিনগ্রহের মানুষ! একদল তরতর করে আধুনিকতার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে, অন্যদল এখনও যাপন করছে ১০ হাজার বছর আগের জীবন।
বর্তমান স্মার্টফোন প্রজন্ম হয়তো ধারণাও করতে পারবে না, কেমন ছিলেন তাদের পূর্বপুরুষেরা।
হুট করে এই সময়ের কেউ সেখানে গিয়ে প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাইবেন না! ভাববেন, হয়তো টাইম ট্রাভেল করে ১০ হাজার বছর পেছনে চলে গেছেন। নয়তো এও কী সম্ভব, আইফোন-৬ এর যুগে গোটা একটি জাতি এখনও তীর-ধনুক দিয়ে শিকার করছে!
সম্ভব। তাঞ্জানিয়ার লেক ইয়াশির উত্তর তীরে গেলেই মিলবে তাদের দেখা। এখানেই বাস হাজদা আদিবাসীদের। বলা হচ্ছে, তারাই পৃথিবীর শেষ শিকারি প্রজন্ম। তারা অন্য কোনো খাদ্য উৎপাদন বা পশুপালন করেন না। এমনকি তাদের কোনো স্থায়ী বাড়িও নেই। গত ১০ হাজার বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলছে এই অপরিবর্তিত জীবনযাপন।
তাদের জগতটাই হলো চূড়ান্ত স্বাধীনতার। একজন নগর সভ্যতার মানুষ যা ভাবতেও পারেন না। সেখানে কোনো ফোন নেই, স্যোশাল মিডিয়া নেই, চাকরি, রাগী বস, গাড়ি-বাড়ি, সমাজ, ধর্ম, আইন-কানুন কিছুই নেই। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, সেখানে কোনো টাকা নেই! সেখানে চলে সেই আদিকালের বিনিময় প্রথা।
তাদের নিজেদের মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাটি নেই। তাদের কেউ অনাহারে মারা যান না। শুনলে কেমন রূপকথা ঠেকে। কিন্তু ঘটনা সত্য। তাদের রোজকার খাবার-দাবারও অতি সাধারণ। পাখি, বেবুন, হরিণ ও ষাঁড়ের মাংস তাদের বড় প্রিয়। হাতে বানানো তীর-ধনুক দিয়ে তারা শিকার করে থাকেন। কথা বলার জন্য রয়েছে নিজেদের হাজার বছরের প্রাচীন ভাষা।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক হাজদা আদিবাসীর দিন শুরু হয় সূর্যোদয়ের পর থেকে। কাজ বলতে খাবারের জন্য শিকার ছাড়া আর তেমন কিছু নেই। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা মতো শিকারে ব্যয় করার পর বাকি সময় অবসর।
এভাবেই চলছে। কোনো ট্রেন ধরার তাড়া নেই, সবাইকে পেছনে ফেলে আগে যাবার ইঁদুর দৌড় নেই। এক পৃথিবীর মধ্যে যেন অন্য পৃথিবীর রাজত্ব করছেন তারা!
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৪