ঢাকা: ভেতরে সুনশান নীরবতা। চলছে অনার্স পরীক্ষা।
নানা স্তরের প্রহরার মধ্যে দেখা গেলো ওদের। বাইরে যতোটা সজাগ ভেতরে ঠিক তার উল্টো! বাইরে প্রহরায় নিয়োজিতকে দেখা গেলো উশখুশ। ঢিলেঢালা! তবে ভেতরে অবস্থা আরো কাহিল! প্রতিষ্ঠান প্রধানের দফতরের প্রবেশমুখে অবস্থান নেওয়া প্রহরীকে দেখা গেলো ঝিমোতে। কখনো ঘুমিয়ে কখনো বা জেগে জেগে হাই তুলেই এক পলক দেখে নিচ্ছিলো সামনে আসা যাওয়া দর্শনার্থীদের।
এ দৃশ্য রাজধানীর মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজের।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে ক্যাম্পাসের ভেতরে বাইরে দেখা গেলো বেশ কিছু নেড়ি কুকুরকে।
এদের মধ্যে ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের নিচে ও দোতলায় কার্যালয়ের প্রবেশমুখে থাকা দুই নেড়ি কুকুর ছিলো উপস্থিত অনেকের আলোচনায়।
সকাল থেকে দুপুরে পর্যন্ত নেড়িদের এ তৎপরতায় এ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দর্য্য ও শিক্ষার পরিবেশ নিয়েই প্রশ্ন ছিলো অনেকের মুখে মুখে।
এতো কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নেড়িদের প্রবেশাধিকার কিভাবে এতো বিস্তৃত হলো তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
অনার্সের পরীক্ষার্থী শাজনীন শাহনাজ বাংলানিউজকে বললেন, হলে ঢোকার সময় এই নেড়িদের দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। অপুষ্টির শিকার এই প্রাণীরা এভাবে অবাধে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াবে তা মেনে নেওয়া কঠিন।
ফারহান ফারদিন হাসান নামের আরেক পরীক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানান, আবজর্নার ভাগাড়ের আশেপাশেই সচরাচার এ সব নেড়িকে দেখা যায়। তবে খোদ দোতলায় উঠতে গিয়ে সিঁড়িতে দেখে বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলাম না।
আসলে ফুল দেখলে মনে যেমন প্রফুল্লতার সৌরভ বয়ে যায় এই নেড়ি কুকুরগুলোকে দেখে ঠিক তার উল্টো পরিস্থিতি বিরাজ করেছে গোটা সময়টা জুড়েই। পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হয়ে যোগ করেন ফারহান।
জুবায়ের হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানান, তৃতীয় তলায় ওঠা-নামার পথে নেড়ি কুকুর দেখে আমি তো অবাক। কলেজ প্রশাসন কার্যালয়েরে সামনে নেড়ির অবস্থান মেনে নেওয়া কষ্টকর। আসলে পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্য আর রুচিবোধই বোধহয় উঠে যাচ্ছে সবার ভেতর থেকে।
শবনম ফারিয়া নামের অপর এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানান, দোতলায় সিঁড়ির মুখে নেড়ি কুকুর দেখে তৃতীয় তলায় যাই। নামার সময় আমার এক বন্ধুকে বললাম, ওকে সরিয়ে দাও। হুশ হাশ করে অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও সরানো গেলো না ওকে।
বাংলানিউজের ক্যামেরায় এসব দৃশ্যপট বন্দি করার সময় অনেকেই ‘ক্যাম্পাসের সুনাম’ বজায় রাখতে তাড়া করেও নেড়িগুলোকে সরাতে ব্যর্থ হন।
কার্যালয়ে গিয়ে দেখা মেলেনি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এস এম মকফুর হোসেনের। পেশাগত কাজে বাইরে রয়েছেন বলে জানান তার পিয়ন হাফিজ উদ্দিন।
পরে উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইমাম হোসাইনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হল তিনি জানান, ক্লাস নাই, পরীক্ষা চলছে নিরিবিলি পরিবেশ পেয়ে নেড়িরা এখানে এসেছে। আর জানেন তো, আশ্বিন-কার্তিক মাস হলেই ওরা একটু অন্যরকম হয়। প্রজননের জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
তাই বলে ওরা এখানেই বা আসবে কেন! এখানে তো ওদের ক্লাস নেই প্রশ্ন করা হলেই সতর্ক হয়ে যান উপাধ্যক্ষ। বাংলানিউজকে জানান, এসব নিয়ে আবার নিউজ করবেন না যেন। কথার ফাঁকেই তার হাতের স্পর্শে হঠাৎ করেই বেজে ওঠে ডোর বেল। মুহূর্তে দরজা খুলে ছুটে আসেন অধ্যক্ষের পিয়ন।
‘কি করো তোমরা, আমাদের অফিসের প্রবেশমুখে নেড়ি কুত্তা থাকে, তোমরা চোখে দেখো না এসব। যাও। এক্ষুনি তাড়াও’ বলেই ধমকাতে থাকেন তিনি। ধমকের শেষ শব্দ মাটিতে পড়ার আগেই নেড়ি তাড়াতে ছুটে যান হাফিজ উদ্দিন।
এবার বেজে ওঠে ডোর বেল। এবার ফরমায়েশ চায়ের। বিদায় নিতে গিয়ে যথাস্থানে দেখা যায় নেড়িগুলোকে। বিশেষ করে অধ্যক্ষের দফতরের সামনে থাকা নেড়ি তখন গভীর নিদ্রায়!
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৪