ঢাকা: সময়টা ২০০৯ সালের নভেম্বর মাস। একদিন হঠাৎ করেই মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লেন দিল্লির মেয়ে প্রীতি।
এরপর থেকে প্রীতি যখনই কাঁদত বা কোনো কারণে কান্না পেত, তখনই তার চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হলো। অনেকটা চোখ ফেটে জল বেরনোর মতো, চোখ ফেটে রক্ত।
প্রীতির বাবা-মা পড়লেন মহাচিন্তায়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তাররাও এ অদ্ভুত রোগের কারণ ও চিকিৎসার কোনো উপায়ান্তর বের করতে পারছেন না। এদিকে মেয়ের অবস্থাও দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
চিকিৎসকদের ধারণা ছিল, এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা থেকে এমনটা হচ্ছে। হয়ত অপ্রকাশিত কোনো মানসিক আঘাত তার ভেতরে বসে গিয়ে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করেছে।
কিন্তু এসবই ছিল কেবলমাত্র ধারণা। তাতে প্রীতির কোনো উপশম হয়নি। এভাবে কেটে গেল পাঁচ বছর। তার অবস্থা আগের মতোই। এর মধ্যে বড় বড় ডাক্তার-বৈদ্য, যে যেভাবে বলছেন সেভাবে চেষ্টা করছেন বাবা-মা। কিন্তু অসুখ সারবার কোনো লক্ষণ নেই।
শোনা যাক বাবা মনোজ গুপ্তের মুখে, আমরা ভেবেছিলাম ইনফেকশনের কারণে এমনটা হচ্ছে, ডাক্তার দেখালেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পুরো ব্যাপারটিই ছিল আমাদের ধারণার উল্টো। কেউই ধরতে পারছিল না সমস্যা আসলে কোথায়।
একই কথা মাধ্যমিকের ছাত্রী প্রীতিরও, যখন চোখ দিয়ে রক্ত বের হতো, তখন এত কষ্ট হতো যে আমি সহ্যই করতে পারতাম না! পরে শরীরের অন্যান্য জায়গা, যেমন হাত-পায়ের নখ, হাঁটু দিয়েও রক্ত বের হতো। আমি শুধু ভাবতাম, আমার সঙ্গে এমন কেনো হচ্ছে!
এই ‘এমন কেনো হচ্ছে’ জানতেই এর মধ্যে প্রীতির বাবার খরচ হয়ে গেছে প্রায় লাখ দশেক টাকা। এদিকে সরকারী চাকরিজীবী বাবার মাসিক বেতন সর্বসাকুল্যে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।
অবশেষে মুশকিলে আসান করলেন ড. শশীধর। তিনি একজন পেডিয়াট্রিক ইএনটি কনসালট্যান্ট। অনেক হাত ঘুরে প্রীতির কেস গিয়ে পড়ে তার হাতে। এরকম অদ্ভুত রকমের কিছু রোগ নিয়ে পত্রিকায় ড. শশীধরের একটি লেখা পড়ে, মেয়েকে নিয়ে সোজা তার কাছেই চলে যান মনোজ।
শোনা যাক ডাক্তারের মুখেই, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় প্রীতির রোগটির নাম হ্যামোল্যাক্রিয়া। এ রোগে সাধারণত শরীরের যে কোনো অংশ দিয়ে রক্ত বের হয়। নাক দিয়ে বের হওয়া পর্যন্ত আমরা স্বাভাবিক ধরে নিই। কিন্তু অন্য অংশ দিয়ে বের হওয়া শুরু হলে অস্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়।
সময়ের কারণে প্রীতির ব্যাপারটি একটু জটিলই ছিল। আপাতত তার রোগটি বের করা গেছে, চিকিৎসাও চলছে। সামান্য উন্নতিও লক্ষ্য করছি, যোগ করেন তিনি।
ড. শশীধরের আশা, মেয়েতুল্য প্রীতির দুঃস্বপ্ন শিগগিরই কেটে যাবে। জেদ চেপে গেছে তারও, এর শেষ না দেখে ছাড়বেন না তিনি!
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৪