চাঁদপুর: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম দোয়ালিয়া। এই গ্রামের মিজি বাড়ির গৃহবধূ আম্বিয়া খাতুন।
ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল চোখের সামনে পার করে আসা আম্বিয়া খাতুন স্বাধীন বাংলাদেশেরও ৪৩ বছরের অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। অনেক ভাঙা-গড়া আর অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ এই নারী চান যতোদিন বেঁচে আছেন, সুস্থ থাকতে।
তবে আম্বিয়া খাতুনের স্বজন ও এলাকাবাসীর এক দাবি, গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তি বা নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক আম্বিয়া খাতুনকে।
বিষয়টি জানতে পেরে সম্প্রতি সরেজমিনে এ প্রতিবেদক যান আম্বিয়া খাতুনের বাড়ি দোয়ালিয়া গ্রামের মিজি বাড়িতে।
আর দশটা গ্রামের মতোই খুব সাধারণ এক গ্রাম দোয়ালিয়া। এখানকার মিজি বাড়ির মৃত জিতু মুন্সীর স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন। বাড়িতে ঢুকে দেখা যায় উঠানে বসে আছেন আম্বিয়া খাতুন।
ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম সনদ অনুযায়ী তার জন্ম ১৮৮০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। সে হিসেবে তার বর্তমান ১৩৪ বছর।
বর্তমান-অতীতসহ অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয় আম্বিয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানালেন পেছনে ফেলে আসা অনেক স্মৃতির কথা। তবে অনেক স্মৃতিই তিনি এখন আর মনে করতে পারেন না। এমনকি স্বামীর মৃত্যু হয়েছে ঠিক কবে তিনি এখন মনে করতে পারেন না। তবে স্বামীর কিছু কিছু স্মৃতি এখনো তাকে তাড়া করে ফেরে।
এতো দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার ব্যাপারে জানালেন, সুস্থ থেকে আরো অনেক দিন বাঁচতে চান তিনি।
এখনো স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে পারেন আম্বিয়া খাতুন। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া হাঁটতেও পারেন ৮ সন্তানের জননী আম্বিয়া।
পান চিবুতে চিবুতে তিনি জানালেন, কখনো স্কুলে যাননি তিনি। গৃহস্থালির কাজ, খাওয়া-দাওয়া, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কাটিয়েছেন জীবনের অনেক সময়।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যতো দিন হায়াৎ রাখে ততো দিন বাইচাম, আর আল্লায় যদি হয়াৎ না রায়, তয় আর বড়াই কইরা লাভ আছেনি?
শৈশবের স্মৃতিচারণ করে বলেন, গাছ থাইক্যা কামরাঙ্গা হারছি (পেড়েছি), মাছ ধইরছি, হাঁত্র (ফসলের মাঠ) নামি হাট (পাট) কাটছি, লইছি। দুনিয়াটা হাঁটছি, এহনতো আর পারি না হাটতাম। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘সেদিনতো চইললা গ্যাছে। ’
আম্বিয়া খাতুন বলেন, এখনো তার অনেক বিষয়ে সখ রয়েছে। বেড়াতে যাবেন কি-না প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নিলোতো জাইতামই। ’
কথা বলে জানা গেলো, আম্বিয়া খাতুনের ৮ সন্তানের মধ্যে এখন শুধু ৮০ ঊর্ধ্ব ছেলে নুরুল ইসলাম (৮৫) বেঁচে আছেন। সমবয়সী কিংবা কাছাকাছি বয়সেও এলাকায় কেউ এখন বেঁচে নেই।
ছেলে নুরুল ইসলাম দাবি করে বলেন, তার মায়ের বয়স ১৩৮ থেকে ১৪০ বছরের মতো হবে।
তার মা কোনো ভাতা পান কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করিনি। তাই কোনো ভাতা পাননি আমার মা। ’
ছেলে নুরুল ইসলামের স্ত্রী সামছুন্নাহার বলেন, ‘গত ৪৫ বছর আগে থেকে ওনাকে এমনই দেখছি। তিনি বিধবা হয়েছেন অনেক বছর আগে। এতো বছর বয়সেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি তিনি। ’
স্থানীয় ৫নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান মজুমদার বলেন, আমরা শুনেছি ওনার বয়স ১৩৫ বছর হয়েছে। আর ভাতার বিষয়ে আগে কেউ জানায়নি। তবে এবার যে ভাতা আগে আসবে, সেটাই ওনাকে দেওয়া হবে।
এদিকে, এলাকার পঞ্চাশোর্ধ আবুল হোসেন, মোতালেব মিয়া ও খালেক মিজি বলেন, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি হতে পারেন। সরকারিভাবে তাকে সহায়তা করা হলে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তার নাম উঠতে পারে।
এলাকার বিভিন্ন মানুষ ও যুবকদেরও দাবি, আম্বিয়া খাতুনের বয়স ১৪০ এর উপরে। সে হিসেবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে তিনি গিনেজ বুকের স্বীকৃতি পাবেন। তাদের দাবি, সবচেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তি বা নারী হিসেবে আম্বিয়া খাতুনের স্বীকৃতির জন্য সরকারের চেষ্টা করা উচিত।
গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী নারী জাপানের নাগরিক মিসাও ওকাওয়া। আর সবচেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তি হলেন, ১২২ বছর বয়সী ফরাসি নাগরিক জ্যাঁ লুইস ক্যালমেট।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৪