ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

মজুরি তাদের চায়ের গাছে পাতার হারে বাঁধা! (ভিডিও)

মাহমুদ মেনন ও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৪
মজুরি তাদের চায়ের গাছে পাতার হারে বাঁধা! (ভিডিও) ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল: ত্রিশ টাকায় একটি ‘ঘইন্যা’ মাছ কেনা হয়েছে। এটাই গোটা সপ্তাহে পুষ্টির-প্রোটিনের প্রধান উৎস।

সপ্তাহে একদিন মাছ। আর গোটা সপ্তাহটাই পার করতে হয় শাক-সব্জি দিয়ে। আর মুরগি বা অন্য কোনো প্রাণির মাংস? সে তো কেবল পূজার দিনগুলোর জন্য বরাদ্দ! চা-শ্রমিকের জীবনে খাদ্য বলতে তো এই!

বুধবার ‘হপ্তা’ (সপ্তাহের মজুরি) পেয়ে বাজার করে ফিরছিলেন ফিনলে ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের নারী শ্রমিকরা। ঘইন্যা মাছ হাতে ফিরছিলেন তাদেরই একজন। তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। চা-বাগানের ভেতর দিয়ে পিচ-ঢালা রাস্তা ধরে পল্লীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন শ্রমিকরা।

বাংলানিউজের ক্যামেরার সামনে কথা বললেন কয়েকজন।

জানা গেল, মজুরি তাদের চায়ের গাছে পাতার হারে বাঁধা। যত পাতা তুলতে পারবেন তত মজুরি। প্রতি কেজি পাতা তুলে পাওয়া যায় ৩ টাকা। সপ্তাহে ১১০ কেজি পাতায় মজুরি আসে ৩৩০ টাকা।  

নভেম্বর-ডিসেম্বরে গাছে কচি পাতা একেবারেই কমে আসে। এ সময় দিনে তিন কেজির বেশি পাতা তোলা সম্ভব হয় না। আর সে কারণেই আয়ও কমে যায়। তবে মে-জুন নাগাদ গাছগুলো বৃষ্টির ছোঁয়ায় তরতাজা থাকে। প্রচুর নতুন গজিয়ে ওঠা কচি পাতা। হাত বাড়ালেই পাতায় ভরে ওঠে মুঠো। তা ঝুড়িভর্তি হয়ে যখন ওজনের পাল্লায় পড়ে তখন সাত-আট কেজি ছাড়িয়ে যায়। হপ্তায় টাকাও মেলে বেশি।

কিন্তু সে-সময়টা বা মেয়াদ খুব দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। আসে শীতের কাল। গাছের পাতা ফুরায়। একই সঙ্গে কমে আয়। তবু তাতেও সয়ে যাওয়া জীবন চা শ্রমিকের।

কি আর করবো... ম্যানেজার বাবু কি আমাদের বেশি দিবো!? --হতাশা ও বিস্ময়মাখা পাল্টা প্রশ্ন শ্রমিকের মুখে।

‘হপ্তা’ পেলেই যে মাছ কেনা যাবে এমন নয়। শীতের দিন এলে শীতের কাপড়ও কিনতে হয়। তারও খরচ এই হপ্তা থেকেই। ফলে ‘ত্রিশ টাকার ঘইন্যা’ মাছটিও সপ্তাহের বুধবারের নিয়মিত মেন্যু হয়ে উঠতে পারে না। রয়েছে সংসারের আরও কিছু খরচ। আছে অসুখ বিসুখের ধকল।

‘গাছে পাতা বেশি থাকলেই বেশি আয়... কিন্তু ‍গাছে তো পাতা বেশি থাকে না’,- আক্ষেপ ঝরলো আরেক নারীশ্রমিকের কণ্ঠে।

আক্ষেপ আরও আছে। শ্রমিকদের খুব অল্প সংখ্যকই স্থায়ী। অনেকেই বদলি শ্রমিক। অস্থায়ী আর বদলিদের জন্য হিসাব আরও আলাদা। মজুরি আরও কম।

আর বড় দুঃখ এই নারীশ্রমিকদের স্বামীদের অনেকেই কোনো কাজই করেন না। কেউ কেউ কাজ করলেও মদ-জুয়ার পেছনে খরচ করেন। সারাদিন কাজ শেষে ঘরে থাকা শিশুটির কান্নাও থামাতে হয় এই নারীশ্রমিককেই।  

চাবাগানে বিভিন্নভাবে বঞ্চনারও স্বীকার এই নারীরা। বছরের পর বছর বাগানে কাজ করেও ভাগ্য ফেরে না। কোনো কোনো সময় মালিকপক্ষের অমানবিক আচরণও সইতে হয়। নির্ধারিত কাজের বেশি সময় কাজ করতে বাধ্য হন কে‌উ কেউ। রোগে ভুগলেও তাদের চিকিৎসা পাবার ব্যবস্থা নেই, রেশনও ঠিকমতো জোটে না। আবার অনেকের ভাগ্যে রেশন জোটেই না।

তবে শ্রমের মূল্য না বাড়লেও দেশের সকল স্থানের মতো চা বাগানেও দ্রব্যমূল্য বাড়ে। চালের দর, মাছের দর, শাক-সব্জি চলে যায় তাদের নাগালের বাইরে। এক সময় আর ৩০ টাকায় ‘ঘইন্যা মাছটিও’ মেলে না।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৪

** চা বাগানে মধ্যরাতে খেমটা নাচ, জুয়ার আসর
**চা শ্রমিকের ইজ্জতহানি খুব সহজ! (ভিডিও)
** অসাধুদের বাঁধ, জাল আর বেড়ার ফাঁদে বাইক্কা বিল (ভিডিও)
** বাইক্কা বিলে আসছে পরিযায়ীরা
** এখন হাঁসেই হাসে হাইল হাওর...
** বিস্তীর্ণ ক্যানভাসে গাঢ় রং ছড়িয়েছে সোনালী ধান!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।