ঢাকা: আলোকচিত্র শিক্ষার প্রতিষ্ঠান কাউন্টার ফটোর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তিন দিনব্যাপী আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে।
তিনদিনের নানা আয়োজনের মধ্যে ছিলো- ২১ ও ২২শে নভেম্বর সকাল দশটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পৃথিবীর আলোকচিত্র জগতের ‘১০০ ফটোগ্রাফি বই প্রদর্শনী’।
এ আয়োজনটির উদ্বোধন করেছেন স্বনামধন্য আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন। প্রদর্শনীটি চলেছে ২১ ও ২২ নভেম্বর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
২১ নভেম্বর বিকেল ৫টায় কাউন্টার ফটোর ১২ জন শিক্ষার্থী আলোকচিত্রীর পোর্টফোলিও প্রদর্শন করা হয়েছে। ডিজিটাল প্রদর্শনীতে কাউন্টার ফটোর বিগত দুই বছরের ছাত্র-ছাত্রীদের অনগোয়িং ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফির কাজ প্রদর্শিত হয় ওই অনুষ্ঠানে।
২৩ শে নভেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে কেক কেটে ও ফানুশ উড়িয়ে কাউন্টার ফটোর জন্মদিন উদযাপন করা হয় কাউন্টার ফটোর উত্তরা ক্যাম্পাসে।
এ উদযাপনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের বিশিষ্ট অভিনেতা এবং এফডিসির সাধারণ সম্পাদক মিশা সওদাগর, গনজাগরণ মঞ্চের মুখপত্র ইমরান এইচ সরকার প্রমুখ।
রোববার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে কাউন্টার ফটোর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আজীবন সম্মাননা প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে ‘ভারতীয় সমকালীন আলোকচিত্রচর্চার ইতিহাস’ নিয়ে আলোচনা করেছেন দৃক ইন্ডিয়ার পরিচালক শুভেন্দু চ্যাটার্জি। ইন্ডিয়ার ২০জন তরুণ আলোকচিত্রীর কাজ প্রদর্শনের মাধ্যমে ইন্ডিয়ার আলোকচিত্রচর্চার নতুন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেন তিনি।
এছাড়াও বাংলাদেশের ১৭ জন তরুণ আলোকচিত্রীর কাজ নিয়ে সমকালীন আলোকচিত্র চর্চার ধারা ও গতিপথ নিয়ে আলোচনা করেছেন কাউন্টার ফটোর প্রিন্সিপাল সাইফুল হক অমি।
এরপর “সাম্রাজ্যের রাজনীতি ও বাণিজ্যিক প্রচারমাধ্যম” শীর্ষক বক্তব্য প্রদান করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহম্মদ।
অনুষ্ঠানের সর্বশেষ অংশে ছিলো কাউন্টার ফটো আজীবন সম্মাননা পদক ২০১৪ প্রদান অনুষ্ঠান। এ বছর কাউন্টার ফটো আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন আবদুল হামিদ রায়হান মুক্তিযুদ্ধের সময় আলোকচিত্রী হিসেবে তার আসামান্য অবদানের জন্য। পদকপ্রাপ্তির পর আবদুল হামিদ রায়হান তার আলোকচিত্রী জীবন ও কর্ম সম্পর্কে দর্শকের সাথে আলোচনা করেন।
আলোকচিত্রী আবদুল হামিদ রায়হানকে আজীবন সম্মাননা প্রদান সম্পর্কে কাউন্টার ফটোর অধ্যক্ষ সাইফুল হক অমি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আসলে বর্তমান সময়টাকেই আমরা মূল্যায়ন করতে চেয়েছি। গত বছরের শাহবাগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নটি নতুন করে তরুণ প্রজন্মের সামনে হাজির হয়েছে।
আলোকচিত্রী আবদুল হামিদ রায়হানের একাত্তরের অবদানকে সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে আমরা আসলে মুক্তিযুদ্ধকেই সামনে নিয়ে আসতে চাই। আর যেটা বিবেচ্য তা হলো, তথাকথিত মূলধারার আলোকচিত্রী না হয়েও তাঁর কাজের শক্তি, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তাঁর কাজের গুরুত্ব। ’
তিনি আরও জানান, গত বছর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং পথিকৃৎ নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানমকে আজীবন সম্মাননা জানিয়েছিল কাউন্টার ফটো।
মুক্তিযোদ্ধা আলোকচিত্রী আবদুল হামিদ রায়হান ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরে ফটোসাংবাদিক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এই পদে যোগদানের পর মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিরল মুহূর্তের ছবি তোলেন তিনি।
আলোকচিত্রী রায়হানের ক্যামেরায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবির, ভারতে শরণার্থী ক্যাম্প, প্রবাসী সরকারের কার্যক্রমসহ যুদ্ধকালীন বিপর্যস্ত জনজীবনের ছবি সরকারের প্রচারকাজ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রোপাগান্ডা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
সত্তরের নির্বাচনের সময় থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের ছবি তুলতে শুরু করেছিলেন রায়হান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৪