ঢাকা: কত বিচিত্র মানুষের খেয়াল। আর কতই না তাদের পেশা ও নেশা।
নুরুল ইসলামের বয়স যখন ৪৫ বছর তখন হঠাৎ করেই হাঁস বিক্রির পেশায় আসেন তিনি। এখন চুল, দাড়ি পেকে বয়স হয়েছে ৬৫। এই বিশ বছরে আরও অনেক ব্যবসা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু কোনোটাতেই মন বসাতে পারেননি। হাঁস বিক্রির এ পেশাই তাকে নেশার মতো পেয়ে বসে।
বিচিত্র নেশার এই লোকের দেখা মেলে বুধবার শেষ রাতে, সিটি রাউন্ড শেষে অফিসে ফেরার পথে। তিনি মতিঝিল শাপলা চত্বরের পূর্ব পাশে রাস্তার ধারে ৫ জোড়া হাঁস নিয়ে বসেছিলেন। হঠাৎ সিনএজি থেকেই তার দিকে চোখ পড়লো। এই রাতের বেলায় এতোগুলো হাঁস নিয়ে বসে থাকতে দেখে উৎসুক মনে নানা প্রশ্ন উদয় হলো। সঙ্গে সঙ্গে সিএনজি থেকে নেমে তার মুখাপেক্ষী হলাম।
অনেকক্ষণ ধরে কথা হলো। জানালেন বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায়। ঢাকার রায়েরবাগে থাকেন। দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। মেয়েটা ডিগ্রি পাশ করেছে গত বছর। সম্প্রতি বিয়েও দিয়েছেন তার। বড় ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দেবে এবার, ছোট ছেলে পড়ছে অষ্টম শ্রেণীতে। হাঁসের ব্যবসা করেই তিনি সংসার চালান বলে জানালেন। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচও এ ব্যবসা থেকে জোগাড় করছেন।
ফকিরাপুল থেকে প্রতি রাতে ২টার দিকে আড়ত থেকে ৫-৬ জোড়া হাঁস কেনেন। মতিঝিল শাপলা চত্বরের পাশে কিংবা যাত্রাবাড়ীতে, কখনো বঙ্গবাজারে বিক্রি করেন। তবে রাতের বেলা সব বিক্রি না হলে কোনো কোনো দিন বিকেলেও রাস্তায় বসে যান হাঁস বিক্রি করতে।
এতো ব্যবসা রেখে হাঁসের ব্যবসাই কেন বা রাতের বেলাতেই কেন এই পেশা বেছে নিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, রাতের বেলা কাজ করে আরাম পাওয়া যায়। লোকজন কম আবার হাঙ্গামাও নাই। তাই রাতের বেলা কিনে, রাতেই বিক্রি করি।
প্রতি জোড়া হাঁস কিনতে তার খরচ হয় ৬শ’ টাকা। আর বিক্রি করেন ৮শ’ টাকায়। প্রতি রাতে পাঁচ জোড়া হাঁস বিক্রি করে তার মুনাফা হয় ১ হাজার টাকা।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই ব্যবসা করার কারণ জানতে চাইলে অনেকটা সময় নিয়ে জানান, হাঁস বিক্রি করে তৃপ্তি পান তিনি। তবে কেন এই তৃপ্তি তা কখনও ভাবেননি।
রাতে পুলিশ কিংবা অন্য কেউ কোনো সমস্যা করে কি না জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম আরও বলেন, পুলিশ অনেক সময় নানা কিছু জানতে চায়। অনেক সময় বারবার বোঝাতে হয়। অনেক সময় বারবার বসার জায়গা পরিবর্তন করতে হয়। আবার বেশি সমস্যা হলে বাসায় চলে যাই।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৪