ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

খাসিয়াপুঞ্জিতে সংকট-২

সংকটের মূল কারণ গাছ কাটায় বাধা!

শেখ নাসির হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৪
সংকটের মূল কারণ গাছ কাটায় বাধা! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গলের টিপরাছড়া ও খাসিয়াপুঞ্জি ঘুরে: শ্রীমঙ্গলের আসলম খাসিয়া পুঞ্জিতে চা বাগান সম্প্রসারণ ও গাছ কাটায় বাধা দেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা, চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর খাসিয়াদের মধ্যে চলছে ‘আরোপিত’ দ্বন্দ্ব। কারণ টিপরাছড়া চা বাগানের বাসিন্দা-শ্রমিকরা এখানে ঢাল বাগান কর্তৃপক্ষের।



সরকারের নিয়মানুযায়ী, বাগানের ব্যবস্থাপকরা প্রতিবছর আড়াই শতাংশ হারে চা বাগান সম্প্রসারণ করবে। না করলে সরকার বাগান ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। ধারণা করা হচ্ছে এজন্য বাগান কর্তৃপক্ষ খাসিয়াপুঞ্জি উচ্ছেদ করে চা বাগান বাড়াতে চাচ্ছে। কিন্তু অনেক জায়গা থাকলেও বাগান কর্তৃপক্ষের নজর আসলম খাসিয়াপুঞ্জির দিকে কেন, তা নিয়েই যত প্রশ্ন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আসলমপুঞ্জিতে ৪২টি খাসিয়া পরিবার বসবাস করে। খাসিয়াদের পক্ষ থেকে অভিযোগ, পুঞ্জির আশপাশে থাকা ৪৫০টি গাছ কাটার জন্যই মূলত তাদের এখান থেকে উৎখাত করতে চাচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষ। আর বাগান কর্তৃপক্ষকে মদদ দিচ্ছে মহালদার মো. সেলিম আহমদ। কারণ খাসিয়ারা পুঞ্জি এলাকায় থাকতে তারা কখনই গাছ কাটতে পারবে না। আর সেলিমের যোগসাজশে বাগান ব্যবস্থাপক এসব করছেন।

জানা যায়, ২০০৮ সালের ৩০ জুন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় গাছ কাটার অনুমোদন দেয়। একই বছরের ৭ আগস্ট ৪৭ লাখ ৫১ হাজার ৩৯২ টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করে নাহার চা বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির চার হাজার পরিপক্ব গাছ কাটার অনাপত্তি দেয় বন বিভাগ। অনুমোদন পেয়ে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ কাঠ ব্যবসায়ী মো. সেলিম উদ্দিনের কাছে গাছগুলো বিক্রি করে।

২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গাছ কাটা শুরু হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও নাহার চা-বাগানের জমি ইজারা নিয়ে বসবাসরত খাসিয়ারা গাছ কাটার প্রতিবাদে আন্দোলন করেন। ফলে হাইকোর্ট পুঞ্জির আশপাশের ৪৫০টি গাছ না কাটার নির্দেশ দেন।

খাসিয়াদের ধারণা, গাছ কাটতে না পেরে খাসিয়াপুঞ্জিতে চা বাগান সম্প্রসারণের নামে নাটক সাজানো হয়েছে। যার বলি নিতাই তাঁতী। এ ইস্যু সামনে রেখে যেকোনো মূল্যে খাসিয়াপুঞ্জি উচ্ছেদ করতে বদ্ধপরিকর বাগানের ম্যানেজার পিযুষ কান্তি।
তিনি  বলেছেন, যেকোনো মূল্যে আমরা পুঞ্জি উচ্ছেদ করে সেখানে চা বাগান করবো।

আসলম খাসিয়াপুঞ্জি প্রধান ডিবারমিন পঃতাম বলেন, আমাদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতে আমরা এ জায়গা ছাড়বো না। কারণ আমরা এদেশের ভোটার। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আমরা এ এলাকায় বাস করছি। মূলত গাছ কাটার জন্যই আমাদের বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তাছাড়া গাছ কাটলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। বন্ধ হয়ে যাবে আমাদের আয়ের প্রধান উৎস পান চাষ।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে হাইকোর্ট পুঞ্জি এলাকা থেকে গাছ কাটতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তারা আমাদের উচ্ছেদ করতে পারলে আবারও গাছ কাটার অনুমতি পেতে পারে।

বাংরাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্ট, নভেম্বর ১৮, ২০১৪

** ক্ষোভ-আতঙ্কে দিন কাটে পুঞ্জিবাসীর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।