ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

খাসিয়াপুঞ্জিতে সংকট-৩

নিতাই তাঁতীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য!

শেখ নাসির হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৪
নিতাই তাঁতীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গলের টিপরাছড়া ও খাসিয়াপুঞ্জি ঘুরে: শ্রীমঙ্গলে চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও খাসিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত নিতাই তাঁতীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য দূর হয়নি এখনো। উভয়পক্ষের এ বিষয়ে রয়েছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, অভিযোগ।

দু’পক্ষ দু’টি আলাদাভাবে দুটি মামলাও করেছে।
 
খাসিয়াদের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী নাহার চা বাগানের ব্যবস্থাপক পিযূষ কান্তির দাবি, খাসিয়া প্রধান ডিবারমিন পঃতাম সরাসরি নিতাই তাঁতীর মাথায় গুলি করেছেন। এর তিনদিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ মামলায় ডিবারমিনকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।

তবে পিযূষ কান্তির গুলি করার অভিযোগটি মিথ্যা বলে মনে করছেন শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল জলিল। নিহতের ময়না তদন্তের রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কিছু তদন্ত করে নিহতের ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তাছাড়া আমরা নিহতের মাথায় কোথায় বন্দুকের গুলির চিহ্ন পাইনি। তবে মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ধারণা করা হচ্ছে সেটা হয়তো গুলিতির আঘাত।

বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে খাসিয়াদের করা মামলায় বলা হয়েছে, ঘটনার দিন বাগান কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে জায়গা দখল করতে আসে। বাগান ব্যবস্থাপক পিযূষ কান্তি এদিন দা দিয়ে তাদের কয়েকজন নারীকে আঘাত করেন। পরে আত্মরক্ষার্থে নারী ও শিশুরা গুলতি ও ইটপাটকেল ছোড়ে। এ মামলায় পিযূষকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।

এ মামলারও তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আবদুল জলিল। তিনি বলেন, আমরা দু’টি মামলার তদন্তই শেষ করেছি। খুব শিগগির প্রতিবেদন প্রকাশ করবো।
তবে পিযূষ কান্তির বিরুদ্ধে দা দিয়ে কোপ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেন নি।

এ বিষয়ে ডিবারমিন বলেন, বাগান কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে আমি নিতাইয়ের মাথায় গুলি করেছি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে এটা সত্য যে আত্মরক্ষার্থে আমার একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত দুই নলা বন্দুক রয়েছে। যেখানে ছোররা গুলি ব্যবহার করা হয়। আমি যদি ওইদিন গুলি করতাম তবে ছোররা গুলির আঘাতে আরও শ্রমিক আহত হতেন। কিন্তু সেটা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরে পুলিশ আমার বন্দুক পরীক্ষা করেছে। তারা জানিয়েছেন সম্প্রতি বন্দুক দিয়ে কোনো গুলি ছোড়া হয়নি।

ডিবারমিন পঃতাম দাবি করেন, ঘটনার দিন বাগান কর্তৃপক্ষের হামলায় তাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়। যার মধ্যে বিল সুমেরের মাথায় দা দিয়ে কোপ দেওয়া হয়। তাকে প্রথমে মৌলভীবাজার হাসপাতালে ও পরে স্থানান্তর করা হয় সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি হওয়ার পর বিল সুমের নিতাই তাঁতীকে মাথায় ব্যান্ডেজ থাকা অবস্থায় হাঁটতে ও কথা বলতে দেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, তাই ঘটনার দু’দিন পর তার মারা যাওয়া খুবই রহস্যজনক। কারণ বিল সুমেরের মতে নিতাই তাঁতীকে হাসপাতালে খুব বেশি আহত মনে হয়নি। তাই আমাদের কাছে নিতাই তাঁতীর মৃত্যু বেশ রহস্যজনক মনে হয়। আমরা এ রহস্যের সঠিক তদন্ত দাবি করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৪

** সংকটের মূল কারণ গাছ কাটায় বাধা!
** ক্ষোভ-আতঙ্কে দিন কাটে পুঞ্জিবাসীর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।