ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

রাতের ঢাকা

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৪
রাতের ঢাকা ছবি: রাশেদ/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দিনের বেলা যানজট আর কোলাহলে নাকাল রাজধানী। রাতের আঁধারে কেমন থাকে তা দেখতে শুক্রবার দিনগত রাতে অটোরিকশায় চেপে ছুটে চলা রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।

সঙ্গে বাংলানিউজের স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট রাশেদ।
 
লাল, নীল, বেগুনীসহ রকমারি আলোয় ঝলমল রাজধানীকে মনে হলো বড়ই ভয়ানক ও বিপদজনক। ফাঁকা রাস্তায় ট্রাকগুলো ছুটে চলে বেপরোয়া গতিতে। অনেক স্থানে নেই ল্যাম্পপোস্টের আলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও খুব একটা চোখে পড়েনি।
 
বিনোদন কেন্দ্র এবং ফুটওভার ব্রিজ ও ফ্লাইওভারগুলোও বেশ অনিরাপদ। ঘটতে পারে যখন তখন যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা। বিনোদন কেন্দ্রগুলো মূলত চলে যায় ভাসমান পতিতাদের দখলে। পুলিশি পাহারায় চলে অসামাজিক কাজ।
Dhaka_banglanews24_1 
এর মধ্যে ফার্মগেটে অবস্থিত পার্ক, কারওয়ান বাজার ও বাংলামটরের মাঝে অবস্থিত পান্থকুঞ্জ পার্ক, রমনা পার্ক, সোহরাওয়াদী উদ্যান ও জিয়া উদ্যান সন্ধ্যার পরপরই চলে যায় পতিতাদের দখলে।
 
ফুটওভার ব্রিজ ও ফ্লাইওভারগুলোর আশেপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কোনো আনাগোনা দেখা যায়নি। পুরো রাজধানী ঘুরে চোখে পড়ার মতো পুলিশি টহল দেখা গেছে খিলগাঁও এলাকায়। তবে তা খিলগাঁও ফ্লইওভার থেকে বেশ দূরে।
Dhaka_banglanews24_2
মহাখালী, খিলগাঁও, মিরপুর-বনানী, যাত্রাবাড়ি-গুলিস্তান ফ্লাইওভারে কেউ পথ আটকে ধরলে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। এমনকি কারও সহায়তা পাওয়ারও উপায় নেই। একই অবস্থা বাংলামটর, ফার্মগেট, রামপুরা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ফুটওভার ব্রিজগুলোতে।
 
বেপরোয়া ট্রাক: যানজটের নগরী ঢাকাতেও রাতের বেলা অন্য শহরগুলোর মতো নেমে আসে নিরবতা। অধিকাংশ রুটে বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহনের চলাচল। আর এমন ফাঁকা রাস্তায় বেপরোভাবে চলাচল করে পণ্যবাহী ট্রাক। মনোযোগে একটু বিঘ্ন ঘটলে দুর্ঘটনা নিশ্চিত। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, মিরপুর, শাহবাগ, মতিঝিলসহ সব অঞ্চলেই দেখা গেছে এ চিত্র। যাত্রাবাড়ি ও শাহবাগে একটুর জন্য সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেলো দু’টি ট্রাক।
 Dhaka_banglanews24_3
সৌন্দর্যের হাতিরঝিল: রাতের আঁধারে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ঝিলের পানিতে ছিটকে পড়া আলো যেন মুক্তা ঝরায়। এ দৃশ্য দেখে যে কোনো কঠিন মনও মুহূর্তে আনন্দে ভরে উঠবে। তবে সৌন্দর্য প্রেমীরা নিরাপদে রাতের হাতিরঝিলের এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে  পারবেন এ কথা বলা দুরহ। হাতিরঝিলের মধ্যে দুই একটি পুলিশি চেক পোস্ট থাকলেও অধিকাংশ এলাকা অনিরাপদ। ভবঘুরে আর নেশাখোরদের আড্ডা হাতিরঝিলের যত্রতত্র।
 
মাজারে কোলাহল: রাত যত গভীরই হোক না কেন কোলাহল থামে না রাজধানীর অধিকাংশ মাজারগুলোতে। এর মধ্যে মিরপুরের শাহ্ আলী মাজার অন্যতম। এই মাজরটি প্রতি রাতেই থাকে লোকে লোকারণ্য। শুক্রবার দিনগত রাতেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। রাত আড়াইটার দিকে গিয়ে দেখা যায় একজন মৌলভী ওয়াজ করছেন আর তাকে ঘিরে বসে আছেন কয়েক’শ মানুষ।
Dhaka_banglanews24_4 
রাতের শাকের হাট: মিরপুরের শাহ্ আলী মাজার থেকে একটু পূর্বদিকে আসলেই দেখা যাবে রাস্তার দুই ধারে শুধু সবুজ আর লাল। লালশাক, পুঁইশাক, কলমি শাক, পালন শাকসহ বাহারি ধরনের শাকের পসড়া দেখা যাবে। রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন ভোররাতে এখানে ছুটে আসেন খুচরা সবজি বিক্রেতারা। তাদের চাহিদা অনুযায়ী শাক সরবরাহ করতে মধ্যরাত থেকেই জমায়েত হন সবজি চাষি ও পাইকারি বিক্রেতারা। হাটটিতে রয়েছে প্রায় ৪০ জনের মতো আড়তদার। এটি রাজধানীর সব থেকে বড় শাকের বাজার।
 
জমজমাট মুরগির বাজার: যাত্রাবাড়ি-গুলিস্তান ফ্লাইওভার ঘেঁষে ওয়ারিতে গড়ে উঠেছে রাজধানীর সর্ববৃহৎ মুরগির বাজার। মধ্যরাতের পর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুরগি আসে এই বাজারে। ভোরে বাজারটিতে শুরু হয় বিকিকিনি। সকালের সূ্র্যের আলো উঠার আগেই শেষ হয় বিকিকিনি। রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলের খুচরা বিক্রেতারা বাজারটি থেকে পাইকারি মুরগি কিনে তা পৌঁছে দেন নিজ এলাকার ভোক্তাদের কাছে।  
Dhaka_banglanews24_5 
ট্রেন স্টেশন ঘুমের স্বর্গরাজ্য: ষড়ঋতুর আমাদের এই দেশে চলছে শীতের মৌসুম। বাইরের হালকা বাতাস গায়ে লাগলেই শরীর শিউরে উঠছে। তবে কমলাপুরের ট্রেন স্টেশনটি যেন একেবারেই এর ভিন্ন রূপ। স্টেশনটির খালি ফ্লোরে লাইন ধরে ঘুমিয়ে আছেন অসংখ্য মানুষ। শীতের কোনো অনুভূতিই তাদের স্পর্শ করছে না। এ যেন ঘুমের স্বর্গরাজ্য। এটি শুধু শুক্রবার দিনগত রাতের চিত্র না। এটি কমলাপুর ট্রেন স্টেশনের নিত্যদিনের চিত্র।
 
খাবার দোকান: সব দুশ্চিন্তা দূরে ঠেলে আপনি রাজধানীর রাতের সৌন্দর্য দেখতে বেরিয়েছেন। আর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত। চিন্তার কোনো কারণ নেই। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই রাতভর খোলা পাবেন অসংখ্য খাবার দোকান। এসব খাবার দোকানগুলো থেকে ক্ষুধা নিবারণের যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিশ্রাম নিয়ে ক্লান্তি দূর করার সুযোগ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।