শ্রীমঙ্গলের টিপরাছড়া ও খাসিয়াপুঞ্জি ঘুরে: শ্রীমঙ্গলের টিপরাছড়া চা বাগান এলাকার বাসিন্দা নিতাই তাঁতী। গত জুন মাসে মাথায় আঘাতজনিত কারণে মারা যান তিনি।
গত ৩০ জুন শ্রীমঙ্গলের খাসিয়াপুঞ্জির জমিতে একটি ঘর তোলা কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রাপাত হয়। নিতাই তাঁতী পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। চা বাগান কর্তৃপক্ষের হয়ে তিনি সেখানে ঘরের কাজ করতে গিয়েছিলেন বলে দাবি তার পরিবারের। কিন্তু তিনদিন পর অর্থাৎ, ২ জুন তিনি মারা যান। এ ঘটনায় দুই গ্রুপ একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে। আর দুই গ্রুপই চায় নিতাই তাঁতীর হত্যাকারীর শাস্তি হোক।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত কাপেং ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শনে যাওয়া হয়। এসময় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকরা।
সরেজমিনে নিতাই তাঁতীর বাসস্থান টিপরাছড়া চা বাগান এলাকায় গিযে কথা হয় তার আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে। তবে পরিদর্শনের সময় নিতাইয়ের স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না। ছেলে, মেয়ে, ছোট ভাই, ভাবি, ভাতিজি, ভাতিজি বউসহ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খাসিয়াপুঞ্জির সহকারী মন্ত্রী ডিবারমিন পঃতামের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে নিতাইয়ের ছেলে জীবন তাঁতী জানায়, আমরা শুনেছি খাসিয়ারা বাবার মাথায় গুরি করে মেরে ফেলেছে।
ভাতিজি সঞ্জিত তাঁতী বলেন, আমরা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে শুনেছি খাসিয়ারা তার মাথায় গুলি করেছিলো। তারপর দু’দিন আর কিছু জানতে পারি নি। ঘটনার তৃতীয়দিন আমার জেঠার (চাচা) লাশ বাড়িতে আনা হয়। আমরা জড়িত খাসিয়াদের যথাযথ শাস্তি চাই।
নিতাইয়ের ছোট ভাই শংকর তাঁতী বলেন, আমরা সবাই কাজে ছিলাম। শ্রমিকদের কাছেই আমি শুনতে পাই আমার ভাইয়ের মাথায় গুলি করা হয়েছে। আমি ছুটে গিয়ে দেখি তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হচ্ছে। আমিও তাদের সাথে যাই। ডাক্তার এক্সরে রিপোর্ট দেখিয়ে আমাদের জানান মাথায় আঘাত লেগেছে। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের কোনো গুলি দেখাতে পারেনি ডাক্তার।
তিনি আরও বলেন, তবে ঘটনা যেটাই হোক আমি আমার ভাই হত্যার সঠিক বিচার চাই। একই অনুভূতি ব্যক্ত করেন নিহতের ছেলে জীবন তাঁতী, মেয়ে মিলি তাঁতী, ভাতিজি সঞ্জিত তাঁতী, ভাবি পুষ্প তাঁতী, প্রতিবেশী সুদীন গোয়ালাসহ টিপরাছড়া চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
অন্যদিকে খাসিয়া প্রধান ডিবারমিন পঃতাম বলেন, ঘটনার দিন আমাদের পুরুষরা পান খেতে কাজ করছিলাম। দুপুর ১২টার দিকে চা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকসহ ১৫০/২০০ জন এসে আমাদের জায়গায় ঘর দখল করতে আসে। বাড়িতে আমাদের স্ত্রীরা বাধা দিলে প্রথমে তারা নারীদের আক্রমণ করে। পরে সন্তানরা আমাদের বিষয়টি জানায়। এ সময়ের মধ্যে নারীরা প্রতিপক্ষকে তীর, ইট, রাবারের গুলতি দিয়ে আক্রমণ করতে থাকে। আক্রমণের এক পর্যায়ে তারা পিছু হটে।
তিনি আরও বলেন, এখান থেকে যেহেতু ইট, গুলতি ব্যবহার করা হয়েছে, তাই তার মাথায় আঘাত লাগতেও পারে। তবে আমরা কোনো গুলি ছুড়িনি। কারণ আমার কাছে যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক আছে সেটাতে ছোড়রা গুলি ব্যবহার করা হয়। আমি যদি গুলি করতামই তবে একাধিক লোক ছোড়রা গুলিতে আঘাতপ্রাপ্ত হতেন। সেটি কিন্তু হয়নি। তাই আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং এর পেছনে চা বাগান মালিকরাও জড়িত থাকতে পারে।
তবে ঘটনা যাই হোক না কেন এ হত্যার সুষ্ঠ বিচার চান বিল সুমের, আসমিন, কামিন, ডায়মন্ডসহ খাসিয়াপুঞ্জিবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৪
** নিতাই তাঁতীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য!
** সংকটের মূল কারণ গাছ কাটায় বাধা!
** ক্ষোভ-আতঙ্কে দিন কাটে পুঞ্জিবাসীর