ঢাকা: পশু-পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসা স্বভাবজাত। গার্হস্থ্য প্রয়োজনের বাইরেও মানুষ শখ করে বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখি পালন করে থাকে।
মাস পাঁচেক আগে ক্যাবের সভাপতি পশুপ্রেমী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ইমরান হোসাইনের মাথায় প্রথম আইডিয়া আসে বিড়ালদের জন্য একটি সংগঠন করার। তিনি আইডিয়াটা তার কাছের বন্ধু নাজিয়া জেরিন, আরশাদ অনিক, জারা হক এবং ফারহান হাবীব ফাহাদের সঙ্গে শেয়ার করেন। আইডিয়াটা সবার পছন্দ হলো। এরপর সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকের মাধ্যমে চালালেন ব্যাপক প্রচারণা। সাড়াও পেলেন বেশ। গড়ে উঠলো বিড়ালের প্রতি দরদি সংগঠন ক্যাব।
প্রথমে বিশ জন সদস্য নিয়ে ক্যাবের যাত্রা শুরু হয়। এরপর যুক্ত হয় আরও সত্তর জন সদস্য। বর্তমানে ক্যাবের নব্বইজন সদস্য রয়েছে। যাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে বিড়ালের প্রতি অপরিসীম দরদ ও ভালোবাসা।
দেশের অবহেলিত, অসহায় ও অসুস্থ্য বিড়ালদের চিকিৎসা প্রদান ও সবার মাঝে বিড়াল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই ক্যাবের মূল উদ্দেশ্য। সংগঠনটির সদস্যরা তাদের আশপাশের পোষা ও অসহায় বিড়ালদের প্রকৃত খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও স্বল্পমূল্যে ভ্যাক্সিনেশন নিশ্চিত করছে।
নভেম্বর মাসের শুরুতে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিড়ালদের জন্য ফ্রি ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পের আয়োজন করে ক্যাব। ক্যাম্পে সব ধরনের সত্তরটি বিড়ালকে ফ্রি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
বিড়ালপ্রেমী সংগঠনটি ১৩ ও ১৪ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজন করে ব্যতিক্রমধর্মী ‘ক্যাট শো’। ওই ক্যাট শোতে দুই শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ও বিদেশি বিড়াল উপস্থাপন করে সংগঠনের সদস্যরা। ক্যাট শো-তে দেশীয় প্রজাতির প্রায় চল্লিশটি বিড়াল দর্শনার্থীদের মাঝে দত্তক দেয় সংগঠনটি।
ক্যাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারহান হাবিব ফাহাদ জানান, ক্যাট শো’র মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় বিড়ালের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা।
কিন্তু শুধুমাত্র দেশীয় বিড়াল দিয়ে প্রদর্শনী করলে সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করা যাবে না। তাই আয়োজকরা কৌশল করে দেশীয় বিড়ালের পাশাপাশি পার্শিয়ান বিড়ালও প্রদর্শন করে। এতে তারা সফলও হয়। প্রচুর দর্শক সমাগম হয় প্রদর্শনীতে।
ক্যাব এর পরিচালক নাজিয়া জেরিন বলেন, ‘ক্যাট শোর মাধ্যমে মানুষের মাঝে আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পেরেছি। আগামী দিনগুলোতে আরও বড় পরিসরে এই শোর আয়োজন করা হবে। ’
ক্যাট’স মম নামে পরিচিত একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক ও এন অডিও অ্যান্ড ভিজুয়াল প্রোডাকশন হাউজের কর্ণধার নাজিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই বিড়ালের প্রতি তার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। যখন বুঝতে পারলেন দেশে অনেক অবহেলিত বিড়াল রয়েছে তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বিড়াল নিয়ে কিছু একটা করার। ক্যাবের মাধ্যমে তিনি সে কাজটিই করছেন।
বিড়ালপ্রেমী সবার জন্যই সুযোগ রয়েছে ক্যাবের সদস্য হওয়ার। এজন্য ফেসবুকে দ্যা ক্যাট কনসার্ন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নামে একটি গ্রুপ করা হয়েছে। সেখানে গ্রুপের অ্যাডমিনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১ হাজার টাকা ফি দিয়ে সদস্য হওয়া যাবে।
তবে কারও টাকার সমস্যা থাকলে ফ্রি সদস্যপদ দেওয়ারও সুযোগ রয়েছে ক্যাবে।
ক্যাব সদস্যদের স্বপ্ন ভবিষ্যতে বিড়ালদের জন্য একটি ক্যাট হোম তৈরি করা যেখানে দেশীয় অবহেলিত বিড়ালদের পুনর্বাসন করা হবে। এছাড়া একটি পশু হাসপাতাল তৈরি করার স্বপ্নও দেখছে সংগঠনটির সদস্যরা। আর এ জন্য সরকারের সহযোগিতা চান তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৩ ডিসেম্বর ০৩, ২০১৪