ঢাকা: পাখিটির ইংরেজি নাম গ্রিন বি-ইটার। গলাসহ এর গোটা শরীর টিয়া পাখির মতো সবুজ।
পাখিটির লেজের শেষ অংশটা লম্বা সূচালো। এ কারণে হয়তো একে বাংলায় সুইচোরা নামে ডাকা হয়। গ্রিণ বি-ইটারকে ডাকা হয় বাঁশপাতি পাখি নামেও। এর বৈজ্ঞানিক নাম মেরোপস্ ওরিয়েন্টালিস।
সুইচোরা পাখিদের স্থিরতা বলতে গেলে খুবই কম। কোথাও যেন একদন্ড বসে থাকার ফুরসত নেই তাদের। এজন্য এদের বলা হয় ‘অস্থির’ পাখি। এরা গায়ক পাখিদের তালিকায় না পড়লেও, মাঝে মাঝে নিচু স্বরে ডেকে ওঠে।
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ ভবনের সামনে একটি জাম গাছের ডালে বসা তিন বাঁশপাতি পাখি ধরা পড়ে বাংলানিউজের ক্যামেরায়। তাদের মধ্যে দু’টি পাখির একটি জোড়া থাকলেও, অন্যটি ছিল সঙ্গীহীন।
মধ্য আকাশে দক্ষ বৈমানিকের মতো সুইচোরা পাখি ডিগবাজি দিয়ে মাছি কিংবা ফড়িং ধরে থাকে।
পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, আফ্রিকার বেশকিছু দেশ যেমন ঘানা, ইথিওপিয়া ও উগান্ডায় গ্রিন বি-ইটার পাখি বেশি দেখা যায়। তবে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও চীনেও দেখা যায় এ পাখি। এদের কমপক্ষে ২০টি প্রজাতি রয়েছে।
প্রাণী বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশে চার প্রজাতির বাঁশপাতি পাখি দেখা যায়। সকাল ও বিকেল বেলায় হাতি, ছাগল, গাধার মতো প্রাণীর পিঠে চড়ে বেড়ায় এ পাখি।
স্বভাবে চঞ্চল হলেও পাখিটি কিন্তু মোটেও হিংস্র নয়। এক সময় দেশের শালবনগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক সুইচোরা দেখা যেত। এখন আর সেভাবে দেখা যায় না। মূলত এদের বিস্তৃতি মিশ্র পাতা ঝরা ও চিরসবুজ বনে। এরা প্যারাবনেও বাস করে। দেশে তুলনামূলকভাবে এদের বেশি দেখা যায় সুন্দরবন অঞ্চলে।
এদের ছোট-বড় দলে দেখা গেলেও, বেশির ভাগই থাকে জোড়ায় জোড়ায়। সাধারণত গাছের চিকন পত্রপল্লবহীন ডালে কিংবা টেলিফোনের তারে বসে শিকারের প্রতীক্ষায় অস্থির সময় পার করে তারা। তবে যেখানেই বসুক না কেন, আশপাশটা ঝোপ-জঙ্গল, লতাপাতা কিংবা ঘন ডালপালাবিহীন মুক্তাঞ্চল হওয়া চাই। যাতে কিছু সময় পর পর উড়তে সুবিধা হয়।
সব ধরনের বাঁশপাতি বা সুইচোরা পাখিরা উড়ন্ত অবস্থাতেই শিকার করে। আবার জলপানেও রয়েছে বিচিত্রতা। জলের উপর উড়ে উড়ে ছোঁ মেরে জলপান করে।
এদের প্রধান খাবার উড়ন্ত কীটপতঙ্গ। তবে মৌমাছি, উইপোকা ও ফড়িং তাদের প্রিয় খাবার। খেজুরের রসের প্রতি এদের আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। এদের প্রজনন সময় ফেব্রুয়ারি থেকে জুন।
নদী বা জলাশয়ের খাড়া পাড়ে নিজেরাই সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে পাঁচ থেকে ছয়টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে তিন থেকে চার সপ্তাহ।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৪