ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

কুকুর সাহসিকা!

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৪
কুকুর সাহসিকা! ছবি: সংগৃহীত

এ কাহিনী এক কুকুর যুগলের। গুলিতে কাবু ছিলো পুরুষ কুকুরটি।

অন্তত ৩৮টি ছোট ছোট শিশার গুলি খেয়ে পড়ে ছিলো একটি খাদের ভেতর। আর সঙ্গী সাহসিকা তাকে ছেড়ে যায়নি তিন দিনেও। অবশেষে উদ্ধারকারী একজন দুটি কুকুরকেই তুলে আনেন। ওরা এখন স্থান পেয়েছে যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট সাসেক্সে। সেখানে তারা ভালোই আছে। নতুন নামও পেয়েছে রোমিও-জুলিয়েট। উদ্ধারকারী বলছেন, ওরা মোটেই একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাইছিলো না। ওদের কেউ বিচ্ছিন্ন করতেও পারবে না।

স্ত্রী কুকুরটি দুই বছরের পয়েন্টার ক্রস। আর পুরুষটি চার বছরের সেটার ক্রস। গ্রিক দ্বীপ জ্যাকিনথসে শরীরে ৩৮টি গুলি খেয়ে খাদের মধ্যে স্রেফ গলা ভাসিয়ে তিন দিন টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে বেঁচেছে পুরুষ কুকুরটি। আর তার সঙ্গী হয়ে পাশে থেকে বাঁচার সাহস আর শক্তি যুগিয়েছে স্ত্রী কুকুরটি। তিনটি দিন কিছুই খায়নি। কেবলই সঙ্গীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টায় টানা ঘেউ ঘেউ করে গেছে- পথচারীদের কারো যদি দয়া হয়, এগিয়ে আসে উদ্ধারে!

সেই চেষ্টায় ফল পেয়েছে সে। একজন পথচারী অবশেষে তাদের উদ্ধার করেন এবং দ্রতই সেটিকে গ্রিক পশু চিকিৎসালয়ে নিয়ে যান।

এখন ওরা দুজন দুজনার সঙ্গী। নাম দেওয়া হয়েছে রোমিও-জুলিয়েট। ওদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে ব্রিটেনের ওয়েস্ট সাসেক্সের হর্শহ্যামে। সেখানে হলব্রুক এনিম্যাল রেসকিউ সেন্টারে স্থান পেয়েছে ওরা।

কিভাবে ওরা এই আশ্রয় নিশ্চিত করলো তাও জানা গেছে। উদ্ধারের পর ফেসবুকে তাদের ছবি তুলে দেওয়ায় দয়ালু অনেকেই আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে। গো ফান্ড মি নামে তৈরি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা সহায়তা পাঠায় আর তা দিয়েই ওদের গ্যাট‌উইক এয়ারপোর্টে পাঠানো হয়। গ্রিক আয়ল্যান্ডে তাদের দেখভাল করেন জ্যানেট স্ট্রে নামের উদ্ধারকারী নারী।

রোমিওর শরীরে ৩৮টি শিশার গুলি লাগে। টানা ১০ দিনের চিকিৎসায় এখন সে মোটামুটি সুস্থ্য। হলব্রুক এনিম্যাল রেসকিউ’র লরা স্যানটিনি বলেন, “রোমিওর অবস্থা ভীষণ খারাপ ছিলো, তবে এখন সে ভালো হয়ে উঠছে। ”

পুরুষ কুকুরটি গুলি খেয়ে যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় তখন স্ত্রী কুকুরটি তাকে ছেড়ে যায়নি। টানা তিন দিন না খেয়ে কাটিয়েছে। একটি কুকুরের জন্য এ দীর্ঘ সময় না খেয়ে কাটানো অত্যন্ত ক্ষতির। গুলি খেয়ে তিন দিন পানিতে থাকার পর উদ্ধার হওয়া কুকুরটিকে গ্রিক পশু চিকিৎসকরা কিভাবে বাঁচিয়ে তুললেন সে নিয়েও বিষ্ময় প্রকাশ করলেন স্যানটিনি।

উদ্ধারের পর জুলিয়েটকে রোমিওর সঙ্গে নেওয়ার কথা ছিলো না। কিন্তু ওদের কোনোভাবেই আলাদা করা যাচ্ছিলো না।

স্যানটিনি বলেন, আমার ধারনা দুর্ঘটনার আগেই ওরা বন্ধু ছিলো। আগে থেকে না চিনলে টানা তিন দিন স্ত্রী কুকুরটির সেখানে থাকার কথা ছিলো না।

আমরা শত শত কুকুর উদ্ধার করেছি, যুগলও দেখেছি, কিন্তু এত ভালোবাসা দেখিনি। তবে সবচেয়ে বড় কথা ওদের দুজনকেই এখন একসঙ্গে রাখা সম্ভব হয়েছে।

ধারনা করা হচ্ছে কুকুর দুটি পথ হারিয়ে ফেলেছিলো। কিন্তু কে বা কারা কুকুরটিকে গুলি করলো তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রেসকিউ সেন্টার কুকুর দুটির জন্য নতুন প্রভু খুঁজছে। কেউ এগিয়ে এলে তার হাতেই তুলে দেওয়া হবে এই যুগলকে।  

বাংলাদেশ সময় ২২০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।