ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

মিষ্টি রসের গাঁ

ছবি: নূর-এ আলম, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট, ক্যাপশন: আসিফ আজিজ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫
মিষ্টি রসের গাঁ

সাতক্ষীরা থেকে ফিরে: গ্রামের নাম পুষ্পকাটি। সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের মতো।

নামের সঙ্গে ভারি মিল গ্রামটির। সবুজ গ্রামটি যেন রূপ রসে ভরপুর। নিশ্বাসে মিষ্টি গন্ধ। সৌন্দর্যও চোখজুড়ানো।

শীত মৌসুমে গ্রামটি যেনো খুলে বসে রূপের নতুন ডালি। খেজুরের রস, রসের প্রতিটি ফোঁটা তার শোভা। ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পুলির উৎসব।


পৌষ-মাঘ মূলত রস সংগ্রহের প্রধান মৌসুম। এসময়ের রস মিষ্টি ও স্বচ্ছ হয় বেশি। তবে গাছির গাছ কাটার দৃশ্য এখন চোখে পড়া দুষ্কর। রসের মতো হারিয়ে যেতে বসে গাছির পেশা। পড়ন্ত বিকেলে গ্রামটিতে দেখা মিললো একজন গাছির।


গাছে চাছ দেওয়া, নলি বসানোর রয়েছে বিশেষ পদ্ধতি। রস কেমন হবে, কতটা হবে তা নির্ভর করে অনেকটা এর উপর। চাছ শেষ হলে প্রস্তুত করা হয় মাটির ভাড়। ভাড়ের ভিতরে দেওয়া হয় আগুন। এতে রস ভালো থাকে।


ছোট গাছে রস আসে কম। তাই মাথা সমান খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার দৃশ্য চোখে পড়ে কম। কিন্তু পুষ্পকাঠিকে বিমুখ করেনি ছোট গাছগুলোও। গাছ কেটে পাতা হয়েছে ভাড়। মুখে দেওয়া হয়েছে কাঁটাযুক্ত পাতা পাখি, বাদুড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতেই এ ব্যবস্থা।


রসের মতো পাখিও প্রকৃতির দান। তাই ভাড়ের মুখে কাটা দিয়ে সব সময় আটকানো যায় না পাখির রস খাওয়া থেকে। আর পাখিরা শুধু রস খায় না, রস খাওয়ার ভঙ্গির মধ্যেও রয়েছে তাদের নান্দনিকতা। বেশ সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে মোহনীয় ভঙ্গি মিষ্টি সুধা পান করে তারা।


গোধূলিলগ্নে গ্রামটি সত্যি ছবির মতো। যেনো আঁকা তুলির আঁচড়ে। মাছের ঘেরের কিনারজুড়ে সবুজ গাছ। তবে তাল-খেজুরই বেশি।


বিকেলটা ছিলো অন্যরকম। মিষ্টি রসের মৌ মৌ মাতাল গন্ধ। অস্তগামী সূর্যে যেনো মিশে গেছে রসের ফোঁটা। তার মাঝেই পুরো গ্রাম।


বিন্দু বিন্দু রসের ফোঁটায়ই ভরবে রসের ভাড়। প্রথম দিন কাট দেওয়া এ রসকে বলে জিরেন রস। এটা বেশি মিষ্টি হয়। গুড়ও হয় ভালো।


সূর্য অস্তাচলে। তবু বিরাম নেই পাখিটির। মন ভরে পান করছে স্বর্গীয় সুধার মতো। করবেই বা না কেন! এমন সুযোগ কি বার বার আসে!


‘আমাদের গ্রামখানি ছবির মতোন, মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন’। শৈশবে পড়া এ চরণগুলো যে কত সত্য তা বলে দেওয়ার জন্য এমন একটি ছবিই যথেষ্ট।


জমছে রস। রাত গড়িয়ে সকালের অপেক্ষা। রস, পিঠা ছাড়া কি জমে বাঙালিয়ানা!

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।