ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

লণ্ঠনে আলোকিত চীনের আকাশ

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫
লণ্ঠনে আলোকিত চীনের আকাশ

ঢাকা: শঙ্খ ঘোষের বিখ্যাত ‘একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি/ তোমার জন্য গলির কোণে/ ভাবি আমার মুখ দেখাব/ মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’ কবিতার শেষ লাইনটি একটু পাল্টে লেখাই যায়, মুখ ঢেকে যায় লণ্ঠনে! এখানে মুখ দেখাচ্ছে পূর্ণিমার চাঁদ স্বয়ং নিজেই।

ভ্রু কুঁচকে নিশ্চয়ই ভাবছেন, মিটমিটে আলোর লণ্ঠন কিভাবে ঢাকবে পূর্ণিমার আলো! উত্তর পেতে এত তাড়াহুড়ো কেন, ধীরে-সুস্থেই জানুন।




চায়নিজ লুনিসোলার ক্যালেন্ড‍ার (চান্দ্রদশা ও সৌরবর্ষের মিলিত রূপ) অনুয়ায়ী, তাদের নববর্ষের উৎসব শুরু হয় বছরের শেষ মাসের শেষ দিন থেকে। হাল আমলে নববর্ষের উৎসব রূপ নিয়েছে ‘বসন্ত উৎসব’ নামে। তবে ঐতিহ্যগত দিক থেকে তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নতুন বছরের প্রথম পূর্ণিমার দিনটি। চায়নিজ ক্যালেন্ডারে প্রথম মাসের এ ১৫তম দিনটি ল্যানটার্ন বা লণ্ঠন উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা জাতীয়ভাবে ব্যাপক আনন্দের সঙ্গে পালন করে।

ক্যালেন্ডারের প্রথম মাসটিকে তারা বলেন ‘ইউয়ান’ মাস। ম্যান্ডারিন ভাষায় রাতকে বলা হয় ‘জিয়াও’। দু’টি শব্দ মিলিয়ে লণ্ঠন উৎসবের দিনটিকে বলা হয় ‘ইউয়ান জিয়াও’। এ দিনটির মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় তাদের নববর্ষ উদযাপন। চলতি বছর ইংরেজি ক্যালেন্ডারে লণ্ঠন উৎসবের দিনটি পড়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি।


বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি এদিন পিংজি প্রদেশে লণ্ঠন জ্বালানো ও ইয়াংশুই প্রদেশের ওয়েমিয়াও মন্দির থেকে আকাশে লণ্ঠন ওড়ানোর অনুষ্ঠান দু’টি চায়নিজদের কাছে ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ।


লণ্ঠন উৎসবের দিনে চায়নিজরা তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দঘন সময় উদযাপন করে। গোটা চীন সেজে ওঠে উৎসবের সাজে। জনপ্রিয় খাবার ইউয়ানজিয়াওয়ের (চালের পুডিং) পাশাপাশি থাকে ঐতিহ্যবাহী খাবারের নানা আয়োজন।


সন্ধ্যা নামতেই হাতে লণ্ঠন নিয়ে তারা এগিয়ে যান মন্দিরের দিকে। শুধু চীনেই নয়, অনুষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপীও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

নতুন বছরের শান্তি, উন্নতি ও আনন্দ কামনায় তারা আকাশে লণ্ঠন ওড়ান। এ রাতে চীনের আকাশে উড়তে থাকা হাজারো লণ্ঠনের আলোয় কার্যত ঢেকে যায় পূর্ণিমার মুখ!


চাইনিজরা তাদের দেবতা লর্ড হ্যান ড্যানের উদ্দেশ্যে এ লণ্ঠন ওড়ায়। তাদের ধারণা, তাদের এ দেবতা মোটেও ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারেন না। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ওড়ানো হয় এ লণ্ঠন। একই সঙ্গে তারা নিজেদের জন্যও প্রার্থনা করে থাকেন।


প্রতিবছরই তারা লণ্ঠন উৎসবের থিম পাল্টান। এ থিমগুলো নির্ভর করে চায়নিজ রাশিচক্রের অন্তর্ভুক্ত ১২টি প্রাণীর উপর। এরা হলো- ইঁদুর, ষাঁড়, খরগোশ, ড্রাগন, সাপ, ঘোড়া, ভেড়া বা ছাগল, বানর, কুকুর, শুকর ও মোরগ।

বাংলাদেশ সময়: ০২১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।