ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

১৩ হাজার বছর আগের হাতের ছাপ!

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫
১৩ হাজার বছর আগের হাতের ছাপ!

ঢাকা: মানুষ তার ফেলে আসা দিনের গল্প লিখে রেখে যায় ডায়েরিতে। ক্যামেরায় তোলা ছবিতে ভেসে ওঠে সেইসব মুক্তঝরা হাসি।

কখনোবা হারানো গল্প থেকে যায় বইয়ের পাতায়। আর প্রযুক্তির এ যুগে স্মৃতি ধরে রাখার নানান সুযোগ ও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো রয়েছেই।

মানুষের পদচিহ্ন ও স্মৃতির ছাপচিত্র রেখে যাওয়ার এ অভ্যাস চলে এসেছে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। তখন তো আর এমন ডায়েরি-ক্যামেরা ছিল না, গুহার দেয়ালে এঁকে রাখতো মনের ভাব। এমনই প্রাচীন এক দেয়ালচিত্র খুঁজে পাওয়া গেছে আর্জেনটিনার পাসেগোনিয়ায়।

প্রাচীন মানুষের প্রতিলিপি ও হাতের ছাপে ভর্তি গুহার প্রতিটি দেয়াল। আরও রয়েছে গুহার পাথুরে দেয়ালে শিকার ধরার পূর্ব পরিকল্পনা। কিভাবে বিভিন্ন পশুকে সুনিপুণভাবে বধ করা যায় তারই নানান নকশা।

ধারণা করা হচ্ছে, এখন থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৩ হাজার বছর আগে এখানে আদিম মানবের বসতি ছিল। গুহাটির নাম কোয়েভে দে লাস মানস। যার অর্থ হাতের গুহা।

হাতের গুহাটি আর্জেন্টিনার পিনটিউরেস নদী উপত্যকায় অবস্থিত। এটি ৭৯ ফুট গভীর ও ৩৩ ফুট উঁচু। এর প্রবেশ পথটি প্রায় ৫০ ফুট চওড়া। গুহার ভেতরকার ঢালগুলো ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় এর শেষপ্রান্তের উচ্চতা মাত্র সাড়ে ছয় ফুট। আর্জেনটিনার এ গুহা ও এর আশেপাশের অঞ্চলকে গত ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন গবেষকরা।

গুহার প্রবেশমুখে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়বে পাথরের দেয়াল জুড়ে হাতের ছাপ ও প্রতিলিপি। দেয়ালে আমেরিকান উটপাখির পায়ের ছাপও রয়েছে। এ ধরনের উটপাখি নান্দু নামে পরিচিত। তবে এ গুহায় হাতের ছাপই যেন রাজত্ব করছে সর্বত্র।

একটু ভেতরে ঢুকলে দেখা যাবে প্রাগৈতিহাসিক আরও নানারকম গুহাচিত্র। অক্ষত এ দেয়ালচিত্রগুলো বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ভাগে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বলে জানা যায়।

সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সেই প্রাচীন যুগে মানুষ ছবি আঁকার জন্য রঙ কোথায় পেল! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুহাচিত্রগুলো আঁকা হয়েছে প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থ যেমন: আয়রন অক্সাইড ( লাল ও বেগুনী), চীনামাটি (সাদা), নাইট্রোজেরোসাইটস (হলুদ), ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড (কালো)।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা লক্ষ্য করেছেন, আদিম বসবাসকারীরা এসব রঞ্জক পদার্থ পশুর হাড় দিয়ে গুঁড়ো করে পরে সেগুলোই ছবি আঁকার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

এসব হাতের মধ্যে ৮শ’ ২৯টি হাতই বাম হাতের ছাপ। এগুলোর আকার দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করছেন, এগুলো কিশোর বা প্রাক-কিশোর বয়সের ছেলে-মেয়েদের হয়ে থাকতে পারে। তবে এটা এখনো রহস্যজনক যে, কেন এই প্রস্থরযুগীয় কিশোর-কিশোরীরা কোয়েভে দে লাস মানসের গায়ে হাতের ছাপ দিয়েছিল।

গুহায় হাতের ছাপ ছাড়াও রয়েছে বনবিড়ালের পা, কাঁকড়াবিছে, বিমূর্ত নকশা, জ্যামিতিক নিদর্শন, গুনাকস, রিজসহ নানারকম আকার ও লাইন।

দেয়ালে রয়েছে শিকারের নানা পশু ও তাদের শিকারের নানান পদ্ধতি যেমন: ফাঁদ তৈরি ও অস্ত্রের ব্যবহার।

ধারণা করা হচ্ছে, গুহার সর্বশেষ চিত্রকর্মটি স্প্যানিশ বণিক ও ঔপনিবেশকদের আগমনের পর খ্রিষ্টপূর্ব ১৩০০ অব্দে পাসেগোনিয়াবাসী  তেহুয়েলচা শিকারীরা এঁকেছেন।

কোয়েভে দে লাস মানসে পৌঁছতে হলে বাজো ক্যারিক্যালোর উত্তর উপপথ দিয়ে পায়ে হেঁটে বা ক্যানন ডি রিও পিনটিউরেস গতিপথ পার হয়ে যেতে হবে। গুহার সামনে পৌঁছে পথনির্দেশকের সাহায্য নিয়ে গুহার ভেতরে প্রবেশ করতে হয়।

হাতের গুহা ঘুরে দেখার সঠিক সময় হলো গ্রীষ্ম ও বসন্ত। তাহলে আর দেরি কেন! সময় করে ঘুরে আসুন আদিম মানুষের স্মৃতি বিজড়িত রাজ্যে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।