ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বছর শেষের চৈত্র সংক্রান্তি

আতাউর রহমান রাইহান, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫
বছর শেষের চৈত্র সংক্রান্তি

ঢাকা: চৈত্র সংক্রান্তি আজ। বাংলা সনের সবশেষ মাস চৈত্রের শেষ দিন।

সংক্রান্তি মানে এক ক্রান্তি থেকে আরেক ক্রান্তিতে প্রবেশ। মূলত একটি বছর শেষে নতুন আরেকটি বছরে পা রাখতেই উদযাপন করা হয় চৈত্র সংক্রান্তি।

দিনটির প্রধান আকর্ষণ থাকে গাজন উৎসব। চৈত্র সংক্রান্তি থেকে শুরু করে আষাঢ়ী পূর্ণিমা পর্যন্ত সংক্রান্তি বা পূর্ণিমা তিথিতে এ উৎসব উদযাপন করা হয়। সূর্য ও তার পত্নীরূপে কল্পিত পৃথিবী এ উৎসবের মূল লক্ষ্য।

গাজন উৎসবে সূর্যের সঙ্গে পৃথিবীর বিয়ে দেওয়া হয়। মূলত এ সময়ে কৃষিজীবী সমাজে বৃষ্টির আশায় এই গাজন উৎসব হতো। কারণ চৈত্র থেকে বর্ষার আগ পর্যন্ত সূর্যের প্রচণ্ড তেজ ও তাপ থাকে। গাজন উৎসবের একটি প্রধান অংশ হচ্ছে চড়ক।
এ সময় একগ্রামের শিবতলা থেকে শোভাযাত্রা করে অন্য গ্রামের শিবতলায় যাওয়া হয়। দু’জন শিব ও গৌরী সেজে নৃত্য করেন। অন্যরা নন্দী, ভৃঙ্গী, ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব সেজে তাদের পাশাপাশি নেচে বেড়ায়। শিবের কৃষিকাজ ও বিয়ে নিয়ে ছড়া আবৃত্তি করা হয়। চৈত্র সংক্রান্তির মেলায় নানা শারীরিক কসরত প্রদর্শন করা হতো। কালের বিবর্তনে যদিও এসব এখন অনেকটা হারিয়ে গেছে।
চৈত্র সংক্রান্তির পরের দিনটিই পহেলা বৈশাখ। তাই সনাতন ধর্মের অনুসারীরা এ দিনটিকে খুবই পূণ্যের দিন বলে মনে করেন। তাদের ধর্মে দিনটিকে গণ্য করা হয় মহাবিষুব সংক্রান্তি।

এ দিনে নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, দিনাজপুর, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা বসে। এছাড়া এ দিনে নীল বা চড়ক প‍ূজার পাশাপাশি হালখাতার প্রস্তুতি চলে। আবার আদিবাসী সম্প্রদায় এ দিনে পালন করে বৈসাবি উৎসব।

চৈত্র সংক্রান্তির মেলায় বাঁশ, বেত, প্লাস্টিক, মাটি ও ধাতুর তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র, খেলনা, গ্রীষ্মের ফল ও মিষ্টি বেচাকেনা হয়। আগে এ মেলায় বায়োস্কোপ, সার্কাস, পুতুলনাচ দেখানো হতো। অঞ্চলভেদে কোথাও তিনদিন আবার কোথাও চারদিন ধরে উদযাপিত হয় এই মেলা।

এছাড়া ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলো দিনটিকে বিভিন্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে আসছে। বিজু ও বৈসাবি উৎসব এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

চৈত্রের সংক্রান্তিতে রাতভর কীর্তন গাওয়া হতো। আগের দিনে সংক্রান্তিতে গ্রাম-গঞ্জের গৃহস্থরা নাতি-নাতনিসহ মেয়ে জামাইকে বাড়িতে দাওয়াত করে নিয়ে আসত। সবাইকে নতুন পোশাক দেওয়া হতো, ভালো খাওয়া-দাওয়ারও আয়োজন থাকত।

সনাতন মতে, বাংলা সনের শেষ দিনে শাস্ত্র, লোকাচার অনুসারে স্নান, দান, ব্রত ও উপবাসসহ বিভিন্ন ক্রিয়াকর্মকে প‍ূণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়।
 
এ দিনে একদিকে যেমনি থাকে নতুন বছরকে বরণের প্রস্তুতি, অন্যদিকে আরেকটি বছরকে বিদায়ের উৎসব। চৈত্র সংক্রান্তিতে পুরান ঢাকায় ওঝা সেজে হাতে ঝাড়ু নিয়ে ছোট শিশুরা ভূত তাতড়ানোর খেলায় মেতে ওঠে।

বাংলা সনের শেষ মাসটির নামকরণ করা হয়েছে চৈত্রা নক্ষত্রের নামানুসারে। পুরাণের বর্ণনা মতে, সাতাশটি নক্ষত্র রয়েছে, যেগুলোর নামকরণ করা হয়েছে রাজা, প্রজাপতির দক্ষের সুন্দরী কন্যাদের নামানুসারে। দক্ষ তার সুন্দরী কন্যাদের বিয়ে দিতে উৎকণ্ঠিত। এরপর বিধির বিধান অনুসারে চন্দ্রদেবের সঙ্গে বিয়ে হলো দক্ষের সাতাশ কন্যার।

দক্ষের এককন্যার নাম চিত্রা। তার নামানুসারে চিত্রানক্ষত্র আর চিত্রানক্ষত্র থেকে বাংলা সনের শেষ মাসটির নাম রাখা হয়েছে চৈত্র।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।