ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ওই দূর পাহাড়ের গাঁয়ে

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৯ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৫
ওই দূর পাহাড়ের গাঁয়ে

ঢাকা: কখনও ভেবেছেন, সুউচ্চ কোনো পাহাড়ের টিলায় ঘর বেঁধেছেন আপনি। সবুজ শীতল পরিবেশ।

বাড়ির আঙিনা ঘেঁষে বয়ে গেছে স্বচ্ছ ঝর্ণা। জলে পা ভিজিয়ে দেখছেন দিগন্তজোড়া নীল আকাশ। আকাশে কখনও ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা, কখনওবা অ‍াকাশের কোল ছুঁয়ে যাচ্ছে রক্তিম সূর্যের কোমল মায়া। আর রাত পাহারা দিচ্ছে চাঁদসহ লাখো কোটি তারা।

পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা প্রকৃতি ছেড়ে থাকতেই পারেন না! প্রাণের টানে যারা বসবাসের জন্য বেছে নিয়েছেন দুর্গম পাহাড়ি এলাকাকেই। এমন প্রকৃতিপ্রেমী কিছু মানুষ মিলেই সেখানে গড়ে তুলেছেন স্বতন্ত্র রাজ্য। যান্ত্রিক বিশ্বের সঙ্গে আড়ি দিয়ে গড়ে উঠেছে এসব বসতি।

পর্তুগালের পাথুরে গ্রাম থেকে শুরু করে পেরুর ভাসমান গ্রামসহ আরও অনেক পাহাড়ি বসতি রয়েছে। যেখানে প্রকৃতি আগলে রেখেছে মানব সন্তানদের আর মানুষ প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে প্রকৃতির কোলে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজার হাজার ফুট উপরে এসব গাঁয়ের খোঁজ নিয়েই এবারের আয়োজন।

এয়োগাসিমা, ফিলিপাইন সাগর

ফিলিপাইন সাগরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আগ্নেয় দ্বীপে গড়ে উঠেছে একটি বসতি এলাকা। ১৭৮০ সালে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফলে এখানকার অর্ধেক জনগণের প্রাণহানি ঘটে এবং অনেকেই এ জায়গা ছেড়ে চলে যান। এ ঘটনার ৫০ বছর পর দ্বীপের বাসিন্দারা ফের ফিরে আসেন চিরচেনা প্রকৃতির কোলে। বর্তমানে এখানে প্রায় ২শ’ গ্রামবাসী রয়েছে।
 
মনেমভেশিয়‍া, গ্রিস

গ্রিসের লিকোনিয়ার পাথুরে পাহাড়ের গায়ে লুকিয়ে রয়েছে আরও এক ছোট মানবনগরী। যেন সবুজ পাহাড়ের কোলে ঠাঁই মিলেছে এখানকার মানুষের। ৩৭৫ খ্রিষ্টাব্দে এক ভূমিকম্পের কারণে এ দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে সরে যায়। তবে পালায়া মনেমভেশিয়া উপসাগর বেষ্টিত এ দ্বীপ থেকে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশের একটি ছোট্ট প্রবেশপথও রয়েছে।
 
ফুকতাল আশ্রম, ভারত

আশ্রমটি দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন বিশাল এক মৌচাক! ফুকতাল আশ্রম উত্তর ভারতের সবচেয়ে নির্জন আশ্রমগুলোর মধ্যে অন্যতম। খা‍ড়া বাঁধের মধ্যবর্তী গুহাতে গড়ে ওঠা কাদামাটি ও কাঠের তৈরি বাড়িগুলো দক্ষিণ-পশ্চিম লাদাখ জেলার জানস্কার অঞ্চলের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটি তৈরি হয়েছে দ্বাদশ শতাব্দীতে।
 
আইসোটর্ক, গ্রিনল্যান্ড

ধবধবে সাদা তুষারে আবৃত ভূমি। চারপাশে হিম শীতল জল। আর সেই ভূমির উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। বলছি, গ্রিনল্যান্ডের আইসোটর্ক গ্রামের কথা। এ গ্রামের বাসিন্দা মাত্র ৬৪ জন। তাদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে কেবলই মাংস। কারণ, এখানকার ভূমি শস্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত নয়। তবে সীলের মাংসের সঙ্গে খাওয়ার জন্য পাওয়া যায় ক্যাচআপ ও মেয়োনেজ। বর্তমানে এখানে রয়েছে একটি সুপামার্কেট যা তাদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীর যোগান দিচ্ছে।

গাসাডাল্যুর গ্রাম, ডেনমার্ক

ডেনমার্কের ফারো দ্বীপের ভাগারের পশ্চিমপাশে গড়ে উঠেছে গাসাডাল্যুর গ্রাম। উত্তর আটলান্টিকের উপসাগরীয় প্রবাহের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা এ খাড়িতে বসতি স্থাপন করেছে মাত্র ১৬ জন বাসিন্দা। আগে এখানে এক গ্রাম থেকে পাশের গ্রামে যেতে হলে প্রায় দেড় হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের উপর দিয়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে যেতে হতো। তবে ২০০৪ সালে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরির ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা সহজ হয়ে গেছে।

হুয়াকাশিনা, পেরু

চারদিকে ধুধু মরুভূমি। কে বলেছে মরুভূমিতে প্রাণের ছোঁয়া মেলে না! পুরো মরুভূমিটাই যেন আগলে রেখেছে সবুজ এ স্থানটিকে। রয়েছে সারি সারি পামগাছ, সবুজ গাছ আর শান্ত লেগুনের জল। স্বপ্নীল এ শহরটির নাম হুয়াকাশিনা। এখানকার জনসংখ্যা মোট ৯৬ জন। তারা ক্ষুদ্র শিল্পের উপর নির্ভর করেই জীবন ধারণ করছেন।   
 
বানডায়াগ্রা বাঁধ, মালি

পশ্চিম আফ্রিকার এ গ্রামটির সব বাড়িই লাল মাটি দিয়ে তৈরি। গ্রামটি গড়ে উঠেছে লালমাটির মালভূমি এলাকায়। ছবিতে কাদামাটি দিয়ে তৈরি যেসব ঘর দেখা যাচ্ছে, সেগুলো শুধু বাসস্থান নয়। রয়েছে স্নানাগার, যজ্ঞবেদী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সভাস্থল।
 
আনদ্রেদাল, নরওয়ে

যেন পানির উপরেই ভাসছে গ্রামটি। পেছনের বিশাল পাহাড়ের ছায়‍া এসে পড়েছে জলের উপর। যেন পাহাড়ের রঙেই সবুজাভ হয়েছে জলের স্রোত। ছোট্ট এ গ্রামটিতে রয়েছে ১শ’ মানুষের বসতি। আরও রয়েছে ৫শ’টি ছাগল। আনদ্রেদাল ছাগলের মাংসের সসেজ ও ব্রাউন গট চিজ বেশ বিখ্যাত। ১৯৮৮ সালের আগে এখানে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। তবে বর্তমানে এখানে রাস্তা ও সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে।

সাপা, ভিয়েতনাম

উত্তর ভিয়েতনামের সাপা অঞ্চলটি দেখতে অদ্ভুত সুন্দর ও পরিপাটি। এখানকার আদিবাসীরা পাহাড়টিকে যেন সবুজ ধান ক্ষেত দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন। আর অতিথিদের জন্য তাদের দুয়ার সবসময়ই খোলা। এখানকার জনগণ পর্যটকদের ভীষণ সমাদর করে।

মোনসান্তো, পর্তুগাল

পর্তুগালের মোনসান্তো গ্রামের জনগণ এমন জায়গায় ঘর বেঁধেছেন যার আশেপাশে রয়েছে বিশাল সব ভারি পাথরখণ্ড। যা কখনও কখনও তাদের দুশ্চিন্তার কারণও হয়ে দাঁড়ায়। এ গ্রামের বাড়িগুলোকে ঘিরে রয়েছে প্রায় ২শ’ টন ওজনের অসংখ্য পাথর।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

বাংলাদেশ সময়: ০১৫১ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।