ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বিশ্ব মা দিবস

‘সন্তানদের বিদেশ পাঠিয়ে আমার ছুটি’

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৫
‘সন্তানদের বিদেশ পাঠিয়ে আমার ছুটি’ ছবি: রাজিব / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ভাত বিক্রি করে সংসার চালিয়ে আসছি। মা দিবস কী জানি না।

এবার বুকের দুই ধনকে (ছেলে) বিদেশ পাঠিয়ে আমি ছুটি নেবো। ’

বিশ্ব মা দিবসের (মে মাসের দ্বিতীয় রোববার) প্রথম প্রহরে বাংলানিউজকে এ কথা বলেন রাজধানী শাহবাগ এলাকায় ভাত বিক্রেতা আমেনা বেগম (আমেনা খালা)।

মে মাসের দ্বিতীয় রোববার প্রতি বছর বিশ্ব মা দিবস উদযাপিত হয়। এ দিবস সম্পর্কে কিছুই জানেন না আমেনা বেগম। সংসারের ঘানি টানতে আর সন্তানদের মানুষ করতেই তার যত ব্যস্ততা।

মা দিবস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই আমেনা খালার জবাব, সারাদিন ভাত-তরকারি রান্না করি, গভীর রাত পর্যন্ত তা বিক্রি করি। সন্তানদের দেখাশুনা করতেই দিন শেষ, মা দিবস কী কখনও শুনিনি।

তিনি বলেন, সন্তানদের বাবার ব্যবসা ছিল। ডাকাতের হামলায় সব শেষ। তারপর থেকে এ ভাত বিক্রি করে সংসার চালাই।

আমেনা বলেন, যখন ভাত বিক্রি শুরু করি তখন সন্তানরা খুবই ছোট। রাস্তার ধারে নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে গভীর রাত পর্যন্ত ভাত বিক্রি করেছি, এখনও করেই যাচ্ছি।

গভীর রাতে বাসায় গেলেও সন্তানদের আদর করতে ভুলি না। ভাবি কীভাবে এ সন্তানদের মানুষ করবো। এসব চিন্তায় ঘুম হয় না বলেও জানান আমেনা।

তিনি বলেন, দুই ছেলে দুই মেয়েকে বড় করেছি। এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছি, অন্য মেয়ে লেখাপড়া করে। বড় ছেলে জুয়েল এবং ছোট ছেলে উজ্জ্বল। এখন তারা বড় হয়েছে। কিন্তু বেকার, দুঃখটা এখানেই।

তিনি বলেন, দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে আমি ছুটি নেবো (এ কাজ করবো না)। সামান্য ভাত বিক্রি করি, হাজার কষ্ট সহ্য করি।

ভবিষ্যতে সন্তানরা ভালোবাসবে কি না, যদি বিয়ে করে আপনাকে ভুলে যায়, শেষ জীবনে যদি আপনার দেখাশুনা না করে- এমন প্রশ্নে চোখের কোণে জল ছলছল করে আমেনার।

তিনি বলেন, সন্তানদের পযার্প্ত অর্থ না দিতে পারলেও ভালোবাসার কমতি রাখিনি। আমার ভালোবাসার সঙ্গে তারা বেঈমানি করবে এটা ভাবতেও পারি না।

আমেনার বড় ছেলে জুয়েল বাংলানিউজকে জানান, মায়ের কষ্ট আর সহ্য হয় না। বড় হয়েছি, কাজ নেই বলে বেকার। কাজ করে মায়ের শ্রম আর ভালোবাসার দাম দিতে চাই।

শুধু মা দিবসে নয়, সারাজীবন মাকে ভালোবাসতে চাই। আমার মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। এমন কথাও বলেন জুয়েল।

ছোট ছেলে উজ্জ্বল বাংলানিউজকে জানান, সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি মায়ের কষ্ট। কষ্ট সহ্য করেও মা তা বুঝতে দেন না।

তিনি বলেন, বড় হওয়ার পর প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো যে-মা ভাত বিক্রি করে। কিন্তু এ মানুষটি (মা) ভাত বিক্রি করে সংসার না চালালে আমাদের পথে বসতে হতো।

দু্ই ভাইকে বিদেশ পাঠাতে মায়ের ঘুম নেই। যে আয় হয় তা দিয়ে তো সংসারই চলে না, কীভাবে আমাদের বিদেশ পাঠাবে? তবু্ও মায়ের স্বপ্ন আমাদের বিদেশ পাঠিয়ে মা ছুটি নেবে। বললেন-দুই ভাই জুয়েল-‌উজ্জ্বল।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৫
আরইউ/টিআই/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।