ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

গ্রিক দেব-দেবীর উপাখ্যান-৪

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৫
গ্রিক দেব-দেবীর উপাখ্যান-৪

ঢাকা: সবসময়ই গ্রিক পুরাণের দেবতারা মানুষের আগ্রহের বিষয়। দেব-দেবীদের মায়াবী অবয়ব ও রোমাঞ্চকর গল্প সবাইকে বিমোহিত করে।



কখনও কখনও কল্পকাহিনীও হয়ে ওঠে জীবন্ত। আর তা যদি হয় গ্রিক পুরাণের পাতা থেকে উঠে আসা, তবে তো কথাই নেই!

তাদের চমকপ্রদ গল্প নিয়েই এবার বিশেষ ধারাবাহিক আয়োজন। চতুর্থ পর্বে থাকছে প্রমিথিউস ও হেরার গল্পকথা!

প্রমিথিউস

প্রমিথিউস ছিলেন টাইটান ইয়াপেতুস ও সমুদ্রকন্যা ক্লাইমেনের পুত্র। পুরাণ অনুযায়ী, তিনি ছিলেন মানুষের সবচেয়ে উপকারী বন্ধু। টাইটান দেবতা ক্রোনাসের রাজত্বকালে পৃথিবীতে গাছপালা ও পশু-পাখি ছাড়া আর কোনো প্রাণী ছিল না। ক্রোনাস একাকীত্ব দূর করতে প্রমিথিউসের মাধ্যমে কাদামাটি দিয়ে মানুষ তৈরী করেন।
ক্রোনাসকে পরাজিত করে যখন জিউস ওথরেস পর্বতে দেবরাজ্য গড়ে তোলেন, তখন প্রমিথিউসকে তিনি সেখানে থাকার অনুমতি দেন। এদিকে, ঝড়-বৃষ্টি, তুষারপাত ও বনের হিংস্র পশুর সঙ্গে লড়াই করে পৃথিবীতে মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এসব দেখে প্রমিথিউসের মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। তিনি জিউসের কাছে গিয়ে মানুষের জন্য আগুন প্রার্থনা করলেন। কিন্তু জিউস জানান, তিনি মানুষ নিয়ে ভাবতে চান না। তখন প্রমিথিউস নিজে সূর্য থেকে আগুন নিয়ে আসেন মানুষের জন্য। একই সঙ্গে মানুষকে দু’পায়ে হাঁটতে শেখান ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, মানুষের প্রতি প্রমিথিউসের এমন সহানুভূতিতে রেগে গেলেন দেবরাজ জিউস। এর শাস্তি হিসেবে তিনি প্রমিথিউসকে শিকল দিয়ে ককেসাস পর্বতে বেঁধে রাখেন। জিউসের আদেশে রোজ দিনের বেলা এক বিশাল ঈগল এসে প্রমিথিউসের কলিজা খেয়ে যেত। রাতে জন্মাতো আরেকটি নতুন কলিজা। এভাবেই ঈগল যতবার কলিজা খেয়ে যেত, ততবারই নতুন কলিজা জন্মাতো।
জিউস ভেবেছিলেন, প্রমিথিউস নিজ কৃতকর্মের জন্য তার কাছে ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু না, প্রমিথিউসের গভীর বিশ্বাস ছিল, যে মানুষকে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন, সেই মানুষই তাকে রক্ষা করবে এ বর্বরতার হাত থেকে। আর সেটাই হয়। বীর হারকিউলিস ঈগলকে বধ করে ও শিকল ভেঙে চিরতরে মুক্ত করেন দেবতা প্রমিথিউসকে।

হেরা

গ্রিক পুরাণে হেরা জন্ম ও বিয়ের দেবী। তিনি ছিলেন দেবরাজ জিউসের স্ত্রী। রোমানদের কাছে তিনি জুনো নামে পরিচিত। পুরাণে হেরাকে দেবীমাতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি ছিলেন পতিভক্ত। বলা হয়ে থাকে, সুন্দরী এ দেবী যখন হেঁটে যেতেন তখন তার দেহ থেকে ফুলের সুবাস ভেসে আসতো।
হেরা প্রতিহিংসাপরায়ণ হলেও স্বামীর প্রতি তার ছিল অগাধ প্রেম। এ কারণেই তিনি অন্য দেবীদের জিউসের কাছে ভিড়তে দিতে চাইতেন না। হেরার দুর্বলতা হিসেবে ছিল নির্বুদ্ধিতা ও ঈর্ষাপরায়ণতা। তিনি জিউসের অন্যান্য সঙ্গী ও তাদের সন্তানদের প্রতি বিভিন্ন সময় অবিচার ও অত্যাচার করেছেন। ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে তিনি ঈদিপাস ও জোকাস্টার কন্যা এন্টিগনির লম্বা সুন্দর চুলকে সাপে পরিণত করে দেন। কারণ, এন্টিগনির চুল ছিল হেরার চাইতেও সুন্দর।

হেরা অ্যারেস, এরিস, হেবে ও হিস্টোফাসের মা ছিলেন। কথিত রয়েছে, দৈব ফুল স্পর্শ করার পরই অ্যারেস ও এরিসের জন্ম হয়। আবার লেটুসগাছ স্পর্শ করার পরই তিনি হেবে ও হিস্টোফাসের মাতৃত্ব লাভ করেন।

এছাড়াও ট্রয় যুদ্ধে হেরা ট্রোজানদের সমর্থক ছিলেন। অর্থাৎ সেসময় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী হেলেনকে অপহরণ করতে তিনি প্যারিসকে সাহায্য করেন।  

হেরার প্রতীকী প্রাণী গরু ও সিংহ। পাখির মধ্যে রয়েছে হাঁস ও কোকিল।   

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৫
এসএস

** গ্রিক দেব-দেবীর উপাখ্যান-১
** গ্রিক দেব-দেবীর উপাখ্যান-২
** গ্রিক দেব-দেবীর উপাখ্যান-৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।