ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

প্রেতাত্মা আরাধনায় ভদৌ উৎসব

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৫
প্রেতাত্মা আরাধনায় ভদৌ উৎসব ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ‘প্রথমবার যখন ভদৌ অনুষ্ঠান দেখি, শিউরে উঠেছিলাম। কিন্তু গত ২০ বছর ধরে হাইতিতে ছবি তোলার অভিজ্ঞতায় আমি সত্যিই ভদৌর প্রতি উৎসাহী হয়ে উঠেছি।

গত দুই দশকে একশোবারেরও বেশি হাইতি গিয়েছি। ভদৌ এর একমাত্র কারণ। ’

এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা বলছিলেন আমেরিকান ফটো সাংবাদিক লেস স্টোন।

ভদৌ হাইতির একটি প্রসিদ্ধ ধর্ম। এ অঞ্চলে প্রায় ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ এ ধর্মের অনুসারী। আফ্রো-হাইতিয়ান এ ধর্মের মূল ভিত্তি হচ্ছে, প্রেতাত্মার আরাধনা। অনুসারীরা বিভিন্ন ধার্মিক আচার ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে প্রেতাত্মার উপাসনা করেন।
 
ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অ্যাওয়ার্ডসখ্যাত লেস স্টোন জানান, ভদৌ, হাইতিবাসী, সঙ্গীত, নাচ ও অসাধারণ ঢাকের বাজনা আমাকে বারবার সেখানে নিয়ে যায়।

ভদৌ সম্পর্কে অনেকে হয়তো জানেন বা জানেন না। শুনে নেওয়া যাক লেস স্টোনের মুখ থেকেই।

স্যুভানেনস, হাইতি
ভদৌ সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্রীয় স্থান এটি। প্রতি ইস্টারে এখানে ভদৌ-আচারের বার্ষিক উৎসব হয়। রহস্যময় এ উৎসবের মূলকথা প্রেতাত্মাকে আকর্ষণ করা। আগেই বলা হয়েছে, ভদৌ অনুসারীরা প্রেতাত্মায় বিশ্বাসী। ধর্মানুষ্ঠানের সময়ও ভদৌ অনুসারীরা প্রেতাত্মা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন বলে তারা বিশ্বাস করেন।

উৎসবে খাবার, পানীয়, ভবিষ্যৎবাণী, বিশেষ চিকিৎসা ও শারীরিক ভয় এবং আচার-কানুনের সর্বত্রই বিরাজ করে প্রেতাত্মার আধিপত্য।  


যদিও সামগ্রিকভাবে নয়, তবুও ভদৌর অন্যতম ঐতিহ্য হচ্ছে পশুবলি। অনুসারীদের কাছে এটি প্রেতাত্মাদের নৈবেদ্য দেওয়ার অন্যতম একটি উপায়। পশু বলি দেওয়ার পর অনেকসময় তা সম্প্রদায়ের মধ্যে ভোগ হিসেবে বিলি করা হয়।


সুক্রে, হাইতি
সুক্রে ভদৌ বা কঙ্গো স্পিরিট হলো হাইতির উত্তরাঞ্চলের বার্ষিক তিন উৎসবের মধ্যে একটি। এ দিন চাঁদনী রাতে মন্দিরের পুরোহিত ও নৃত্যশিল্পীরা পবিত্র পুকুরে নামে। সারারাত ধরে তারা নাচ করে। কখনও কখনও ভোর হওয়া পর্যন্ত চলে এ নাচ।


এতদূর বর্ণনার পর বা ছবি দেখে অনেকের মনে হতে পারে ভদৌ কি তবে কোনো শয়তান? না, এটি অন্য ধর্মের মতোই একটি স্বতন্ত্রধারার বিশ্বাস বলে জানান স্টোন।


বলা যায়, হাইতিতে ক্যাথলিসিজমের সঙ্গে ভদৌ মিশে একটি নতুন ধারা তৈরি হয়েছে। ভদৌ অনুসারীদের এ ধর্মবিশ্বাসে সেই আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে যা হাইতিবাসীকে উদ্যমী ও অধ্যাবসায়ী করে তুলেছে, যোগ করেন স্টোন।


ভদৌ উৎসব বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে প্রেতাত্মার দুনিয়ার একটি যোগাযোগ। উৎসবের প্রতি রাতে গোনাইভস শহরের কাছেই কঙ্গো ড্রামের উন্মাদনায় নৃতশিল্পীরা নেচে ওঠেন। এভাবেই রাত-দুপুরে তারা প্রেতাত্মাদের আকর্ষণ করেন।


গানথিয়ার, হাইতি
বার্ষিক ক্যালভেয়ার মিরাকল বা অলৌকিক মাথার খুলি অনুষ্ঠান হচ্ছে, ভদৌ ও ক্যাথলিক তীর্থযাত্রা। ডোমিনিক্যান রিপাবলিকের সীমান্তে শহরের উঁচু পাহাড়ে এ তীর্থযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।


হাইতির সবচেয়ে বড় এ তীর্থে প্রতি বছর সমাগত হন হাজারো ভদৌ বিশ্বাসী। ভক্তরা খাড়া পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের শীর্ষে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করেন।  
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৫
এসএমএন/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।