ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

চার্চিল দেননি দর্জির বিল!

বাংলানিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৫
চার্চিল দেননি দর্জির বিল!

পাওনাদারের টাকা মেরে দেওয়ার বাতিক আছে অনেকেরই। তবে ভদ্রলোক যারা তারা কিন্তু এমনটা করেন না।

এসব যারা করেন তারা নির্ঘাৎ দুষ্ট লোক। কিন্তু নিজেদের সবচেয়ে সুসভ্য বলে দাবিদার ‘নীলরক্তবান’ ব্রিটিশরা কিন্তু পাওনাদারের টাকা মেরে দেওয়াকে এক সময় বাহাদুরির কাজ বলে মনে করতো। একদা এমন ‘ছোটোলোকি বাহাদুরি’র চল ছিল ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে। বিশেষ করে গত শতাব্দীতে। সুযোগ পেলেই বদলোকেরা এমন করতো। তবে সত্যিকার ভদ্রলোকেরা এসব করতেন না। কিন্তু পাওনাদারের টাকা মেরে দেওয়ার দলে নাম লিখিয়েছিলেন এমন একজন যার কথা শুনলে আপনি আঁতকে উঠবেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাৎসী বাহিনীর বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির জয়ে নেতৃত্বদানকারীদের অন্যতম, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং একইসঙ্গে সাহিত্যে নোবেলজয়ী স্যার উইনস্টন চার্চিলও কিন্তু এক দর্জির দোকানের পাওনা পরিশোধ করেননি। এ নিয়ে তার কোনো অনুশোচনাও ছিল না। বরং দর্জির দোকানের বিল মেরে দেওয়াটাকে তিনি আর দশজন ‘বদলোক ব্রিটিশের মতো’ বাহাদুরির কাজ বলেই মনে করেছিলেন। ফলে বেচারা দর্জির কপালে আর প্রাপ্যটা জোটেনি। সে টাকা আদায় করার ক্ষমতাও বেচারা দর্জির ছিল না। অগত্যা, মনের দু:খ মনে পুষেই রাখতে হয়েছিল তাকে। এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম: ‘Winston Churchill refused to pay his tailor's bills.’

(খবরের লিংক: http://news.yahoo.com/uk-wartime-leader-winston-churchill-refused-pay-tailors-174215450.html)
উইনস্টন চার্চিল তার পোশাক বানাতেন বিখ্যাত টেইলারিং জায়ান্ট সেভিল রো হেনরি পুল অ্যান্ড কোং –এর দোকানে। তো ১৯৩৭ সালে বেশকিছু পোশাক তৈরি বাবদ তার কাছে ওই দর্জি দোকানের ১৯৭ পাউন্ড (আজকের দিনের হিসাবে ১২,০০০ পাউন্ড বা ১৮,০০০ ডলার) বাকি পড়ে যায়। কিন্তু চার্চিল বিলটা পরিশোধ করছিলেন না। পরে তারা বিল পরিশোধের জন্য চার্চিলকে লিখিতভাবে তাগিদ দেয়। পরবর্তীকালে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ ত্রাতা ও নায়ক চার্চিল দর্জি দোকানের এই আচরণে অসন্তুষ্ট হন। পরে তিনি বিল তো পরিশোধই করেননি, কোনোদিনও আর ওই দোকানের চৌকাঠ পর্যন্ত মাড়াননি—‘ He took offense, refused to settle the bill and never darkened Poole's door again.’। মানে বিলটা আর কখনোই পরিশোধ করা হয়নি।

এ সত্ত্বেও কিন্তু ওই দর্জিদোকা থেকে পোশাক তৈরিও তার বন্ধ হয়নি। তারা রীতিমতো তার বাড়িতে গিয়ে পোশাকের মাপ নিয়ে আসতো। জেমস শেরউড নামের এক ইতিহাসবিদ ওই কোম্পানির আর্কাইভ ঘেঁটে এ সংক্রান্ত নথি ও প্রমাণ বের করেছেন---‘ Despite the arrears, the tailor had continued to make clothes for Churchill..’। .নথিপত্রে ওই কোম্পানির তৎকালীন কর্তাদের এ সংক্রান্ত যে বক্তব্য পাওয়া যায় তা এরকম: ‘He never did pay, and never came back – he never forgave us..”

এমন ঘটনা কেবল চার্চিলই নন, বিখ্যাত ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের পুত্রও একবার ওই দর্জি দোকানের পাওনা টাকা মেরে দিয়েছিলেন। পরে চার্লস ডিকেন্স তার পুত্রের বকেয়া বিল পরিশোধ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।