ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৪ জুন ২০২৪, ২৬ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

ভ্যালেন্টাইনস ডে স্পেশাল

গদখালীর ফুলে সারাদেশে ভালোবাসার সুবাস

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
গদখালীর ফুলে সারাদেশে ভালোবাসার সুবাস ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গদখালী (যশোর) থেকে ফিরে: বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ বলেই বছরজুড়েই থাকে ফুলের চাহিদা। ফলে কম-বেশি ব্যস্ততার মধ্যেই দিন পার হয় ফুল চাষের জন্য বিখ্যাত যশোরের গদখালী এলাকার ফুল চাষিদের।



তবে তাদের এ ব্যস্ততা কয়েকগুণে বেড়ে যায় বসন্ত বরণ, পহেলা বৈশাখ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলেই।

এসব দিবসকে কেন্দ্র করেই বেশ আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন এ এলাকার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

এবারোর বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে বাজার ধরতে আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকার ফুলচাষিরা। সম্প্রতি সরেজমিনে গদখালী ঘুরে এমন তথ্য জানা যায়।

গদখালী এলাকায় প্রতিটি মাঠে-মাঠে কেবল ফুল আর ফুল। হরেক রঙের ফুলে পুরো গদখালী যেন হয়ে উঠেছে শিল্পীর তুঁলিতে আঁকা অনিন্দ্যসুন্দর ছবি।

গদখালী এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মাঠজুড়ে জারবেরা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, হলুদ গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানান জাতের ফুলের চাষ হয়েছে।

ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে গদখালী এলাকায় প্রায় ৫ হাজার কৃষক দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরেই তাদের ফুল বিক্রি হচ্ছে বেশি।

চাষিরা দাবি করেন, দেশে ফুলের চাহিদার অন্তত ৭০ ভাগ ফুল গদখালীতে উৎপাদন করা হয়। ফলে এবারের ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলচাষিরা কমপক্ষে ১৮/২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন।

স্থানীয় ফুলচাষিরা জানান, প্রতিবছর ভালোবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবসে ফুলের বাজার ধরতে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

গদখালী ফুলচাষি সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, এবার বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে তারা অন্তত ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন। সে অনুযায়ী এরইমধ্যে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকারি ফুল ব্যবসায়ীরা গদখালীর ফুল নিয়ে গেছেন।

ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, ১৯৯৫ সালের আগে এ অঞ্চলের যে কৃষকরা ধান কিংবা সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে এখন তাদের অধিকাংশই পুরোপুরি ফুল চাষের ওপর নির্ভরশীল। তবে তারা
সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত।

তারা জানান, গদখালী ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কিংবা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ফুল চাষিদের তেমন কোনো সহায়তা করেন না। এমনকি, খেতে বিভিন্ন রোগবালাই হলেও চাষিরা নিজেরাই  অভিজ্ঞতার আলোকে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। কিন্তু খেত পরিদর্শনে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা তেমন একটা আসেন না।

এছাড়া কৃষকদের উৎপাদিত ফুল সংরক্ষণের জন্য একটি আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের জন্য তারা সরকারের কাছে দ্বীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও তার কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় চাষিদের উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের গদখালীতে গড়ে উঠেছে বিশাল এক ফুলের হাট। এ হাটে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ফুলের বিকিকিনি।

চাষিরা জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফুল চাষ অধিক লাভজনক। স্থানীয় পুটপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে গোলাপ কিংবা গ্লাডিওলাস ফুলের চাষে খরচ হয় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এরপর চারা গাছে একবার ফুল ধরলে তা কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ফুল দেয়। এতে বছরে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা আয় আসে।

তিনি জানান, বিঘাপ্রতি বছরে ১২ হাজার টাকা হিসেবে ৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ফুল চাষ শুরু করছেন তিনি। এখন প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে।

গদখালীর ফুলচাষের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৮৩ সালের শুরুতে স্থানীয় হাতেগোনা কয়েক কৃষক ফুল চাষ শুরু করেন। পরে দেখাদেখি অনেকেই ফুল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। একপর্যায়ে ১৯৯৫ সাল থেকে অধিকাংশ কৃষক ফুল চাষ শুরু করেন। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার কৃষক আয়ের উৎস হিসেবে ফুল চাষকে বেছে নিয়েছেন।

যেসব কৃষক গত ১০ বছর আগে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঠিকমতো দু বেলা খাবারের সংস্থান করতে পারতেন না তারা এখন সবাই ফুল চাষের মাধ্যমে সাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। প্রত্যেকেই পাকা বাড়ি করেছেন। ঘুঁচে গেছে সংসারের অভাব-অনটন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।