ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

ফিচার

পরিত্যক্ত নবজাতকের নিরাপত্তায় ইন্ডিয়ানায় বেবি বক্স

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৬
পরিত্যক্ত নবজাতকের নিরাপত্তায় ইন্ডিয়ানায় বেবি বক্স ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আনওয়ান্টেড বেবি বা অনাকাঙ্ক্ষিত নবজাতকের একটি বিরাট অংশ পরিত্যক্ত হয়। জন্মের পর মা-বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান।

কিন্তু তার দায় থেকে মা-বাবা মুক্তি পেলেও নবজাতক শিশুটির ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ে বিপজ্জনক।

যুক্তরাজ্যের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত বা অপ্রত্যাশিত শিশুদের জীবন রক্ষায় নেওয়া হয়েছে একটি বিশেষ উদ্যোগ। রাজ্যটি বেশ কয়েকটি স্টেশনে সংস্থাপন করেছে এক একটি বেবি হ্যাচ, যেখানে মায়েরা তাদের অপ্রত্যাশিত নবজাতক শিশুদের রেখে যেতে পারবেন।

আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত সেফ হ্যাভেন বেবি বক্সগুলোতে রয়েছে স্লিপিং প্যাড। নবজাতক শিশুকে ভেতরে সংস্থাপনের পর তা বাইরে থেকে লক করে দেওয়া যাবে। এতে রয়েছে সেন্সর, যা দরজা খোলার পর দ্রুততার সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে অ্যালার্ট দেবে যেন তারা রেখে যাওয়া নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাথলিক ভ্রাতৃত্বমূলক সংগঠন নাইটস অব কলম্বাস বিশ্বে প্র্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নেয়। তাদের নির্মিত একশ’টি বেবি বক্সের এক একটির পেছনে খরচ পড়েছে এক হাজার পাঁচশো থেকে দুই হাজার ডলার।

প্রথম ইনকিউবেটর বা বেবি হ্যাচ স্থাপন করা হয় চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল ওহিও বর্ডারের নিকটবর্তী উডবার্ন শহরের ফায়ার স্টেশনের পাশে। দ্বিতীয়টি গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) মিশিগান শহরের কুল স্প্রিং ফ‍ায়ার ডিপার্টমেন্টে সেট করা হয়।  

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে সেফ হেভেন আইন রয়েছে, যেখানে আনওয়ান্টেড বা অপ্রত্যাশিত সন্তানদের নিরাপদে রাষ্ট্রকে দিয়ে দেওয়ার অধিকার রয়েছে।

ইন্ডিয়ানায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মা এক মাস বয়সী কোনো নবজাতককে ফায়ার স্টেশন, হাসপাতাল ও পুলিশ স্টেশনে বিনা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েই ছেড়ে দিতে পারবেন।

সেফ হেভেন বেবি বক্সের প্রতিষ্ঠাতা মনিকা কেলসি সেচ্ছাসেবক দমকলকর্মী ও ডাক্তার। তিনি জানান, এই বেবি বক্সগুলো সেফ হেভেন অ‍াইন সম্পর্কে আরও সচেতনতা বাড়াবে। এছাড়াও সমস্যার সম্মুখীন ও অপ্রত্যাশিতভাবে মা হওয়‍ার ভোগান্তি থেকেও নারীদের রক্ষা করবে।
 
কেলসির এমন একটি উদ্যোগ নেওয়‍ার পেছনে রয়েছে নিজের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা। কেলসির মাকে ধর্ষণ করা হয়েছিলো যার ফলে তার জন্ম। তাই কেলসির জন্মের পর তার মা তাকে হাসপাতালে ফেলে চলে যান। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে বিধায় এর সঠিক সমাধানে কেলসি ইন্ডিয়ানা স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ কেজি কক্সকে বেবি ইনকিউবেটর স্থাপনের এ প্রস্তাব দেন।  

কক্স জানান, মায়েরা অপ্রত্যাশিত নবজাতকদের অনেক সময় বিপদজনক স্থানে ফেলে যান, যা শিশুদের জন্য ভয়াবহ।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অফিসিয়াল গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধ করা সত্ত্বেও বেবি বক্সগুলো স্থাপন করা হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব হেলথের এক মুখপাত্র জেনিফার ও’মালাই জানান, শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি দল নিউবর্ন সেফটি ইনকিউবেটরগুলো পরীক্ষা করে দেখেছে, এগুলো এমন কোনো মানের নয় যা নবজাতকদের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট।

শিকাগোর সেভ দ্য অ্যাবান্ডোনড বেবি’স ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ডাউন জেরাস বলেন, সেফ হেভেন আইনের কারণে ১৯৯৯ সাল থেকে প্রায় দুই হাজার আটশো অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জন্ম নেওয়া শিশুদের বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। তারপরও এক হাজার চারশোর বেশি শিশুকে বেআইনিভাবে পরিত্যক্ত করা হয়েছে। যার দুই-তৃতীয়াংশ মারা গেছে।

অনেকেই ইনকিউবেটরগুলোর পক্ষপাতিত্ব করলেও সমালোচনা রয়েই যাচ্ছে। কথায় কথায় উঠে এসেছে এই বক্সগুলো অপ্রত্যাশিত শিশুদের পরিত্যাগ করার অ‍ারও একটি সুযোগ তৈরি করে দিলো এবং অন্য উপায়গুলোর দরজা বন্ধ করে দিলো।

জানা যায়, চীনেও এমন কিছু বেবি ইনকিউবেটর রয়েছে যার ফলে গত কয়েক বছরে নবজাতক পরিত্যাগের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এসব বক্স তুলে নিতে বা বন্ধ করে দিতে পরামর্শ দিয়েছে।

এদিকে জাতিসংঘের শিশু অধিকার কমিটি ইউরোপে বেবি বক্স নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে পরিবার পরিকল্পনা মেনে জীবন-যাপন করার পরামর্শ দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৬
এসএমএন/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।