ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

ফিচার

প্রযুক্তির সহায়তায় উদ্ঘাটন হচ্ছে পিরামিডের রহস্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৬
প্রযুক্তির সহায়তায় উদ্ঘাটন হচ্ছে পিরামিডের রহস্য

ঢাকা: প্রায় সাড়ে চার হাজার বছরেও মিশরের পিরামিডের রহস্য পুরোপুরি উদ্ঘাটন করা যায়নি। এর মধ্যে হয়েছে পিরামিড ও এর নির্মাণশৈলী বিষয়ক নানান গবেষণা।

সম্প্রতি মিশরীয় বা বিদেশি বিশেষজ্ঞরা স্পেস পার্টিকেলসের (space particles) মাধ্যমে পিরামিডের অভ্যন্তরীণ রহস্য ভেদ করতে শুরু করেছেন।

গবেষক দল কসমিক রশ্মি ব্যবহার করে প্রাচীন এ অত্যাশ্চর্য স্থাপত্যের অভ্যন্তরীণ মানচিত্র তৈরি করছেন। গত সপ্তাহে প্রত্মতত্ত্ববিদরা মিশরের বেন্ট পিরামিডে তাদের কাজের প্রথম ফলাফল পেয়েছেন। বেন্ট পিরামিড কায়রোর ২৫ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। ফারাও স্নেফেরুর অধীনে নির্মিত ডাশুর সমাধিক্ষেত্র বেন্ট পিরামিড প্রাচীন পিরামিডগুলোর মধ্যে অন্যতম।  

থ্রিডি ইমেজে চার হাজার ছয়শো বছরের পুরনো এ কাঠামোর কক্ষগুলোকে দেখা গেছে। এতে পিরামিডের দ্বিতীয় কক্ষের আকৃতি স্পষ্ট।
 
হেরিটেজ ইনোভেশন প্রিজারভেশন ইনস্টিটিউটের সভাপতি মেহদী টায়োবি জানান, তথ্য সংগ্রহ করতে পিরামিডের ভেতরে রেডিওগ্রাফিক পার্টিকেল মিউয়ানস (muons) ইনস্টল করা হয়েছে।

পার্টিকেলস বা মিউয়ানস ক্ষুদ্র পরমাণু শূন্যস্থান ভেদ করবে কিন্তু কঠিন পৃষ্ঠতলের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটাবে। পার্টিকেল একিউমুলেশন অধ্যয়নের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পিরামিডের নির্মাণ সম্পর্কে আরও অনেক বেশি জানতে পেরেছেন।


জানা যায়, বেন্ট পিরামিডের দু’টি করিডোরের দু’টি প্রবেশপথ দিয়ে দু’টি কবর কক্ষে প্রবেশ করা যাবে। কক্ষ দু’টি একটি অপরটির উপর অবস্থিত। কারও কারও প্রস্তাবনা মতে, পিরামিডের একটি লুকোনো কক্ষে শায়িত রয়েছেন ফারাও স্নেফেরু। সর্বশেষ স্ক্যানে এ সম্ভাবনার কথা জানান বিশেষজ্ঞরা।  

স্ক্যান পিরামিড মিশনের সহ-পরিচালক টয়োবি জানান, ফলক থেকে দশ মিলিয়নের বেশি মিউয়ান ট্র্যাক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।  

আমরা অতিপারমাণবিক কণা গণনা করে ও কৌণিক বণ্টন অনুযায়ী একটি ইমেজ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছি। বলেন টয়োবি।


তিনি আরও জানান, এই প্রথমবারের মতো মিউয়ান কণার সঙ্গে পিরামিডের অভ্যন্তরীণ কাঠামো উন্মোচিত হলো। ‍ ধারণ করা ইমেজে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে পিরামিডের দ্বিতীয় কক্ষটি নিচের কক্ষের ৬০ ফুট ওপরে অবস্থিত।

এদিকে হেরিটেজ ইনোভেশন প্রিজারভেশন ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি হানি হেলাল জানান, পিরামিড নির্মাণের এমন কোনো তত্ত্ব নেই যা কিনা শতভাগ প্রমাণিত ও পরীক্ষিত। এগুলো সবই ছিলো তত্ত্ব ও অনুমান।

নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিলো সেই বিষয়ে অনুমানগুলো নিশ্চিত, ভিন্ন, আপগ্রেড বা পরিবর্তন হয়েছে বলা যাবে কিনা তা দেখা হচ্ছে। জানান তিনি।

বিশ্বাস করা হয়, প্রাচীন মিশরে প্রথমত মসৃণ একপার্শ্বিক পিরামিড নির্মাণের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।


টয়োবি বলেন, গিজার তিনটি বড় পিরামিডের মধ্যে খুফু একটি। একমাসে খুফুতে মিউয়ান টেস্টের জন্য কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদি ‍আমরা এতে এক বর্গমিটার শূন্যগর্ভ পাই তাহলে তা বিগত প্রশ্নগুলোকে সমাধান করতে সাহায্য করবে।

এই দলটি গিজার দু’টি ও দাসুর দু’টিতে থ্রিডি স্ক্যান ও লেজার ব্যবহার করবে বলে জানিয়েছে।

এই একই প্রযুক্তি দিয়ে তারা তুতেখামেনের সাম্ভব্য সমাধিকক্ষ খুঁজে পেতে পারেন বলে জানান টয়োবি।  

পিরামিডের রহস্য উদ্ঘাটনের আগে আরও কিছু অভিযান নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন কংক্রিট থিউরি ব্যাখ্যার প্রচেষ্টায়, প্রশ্ন একই, কী করে এই কাঠামো নির্মাণ হয়েছে?

ঠিক এমনই একটি প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিলো ৩০ বছর আগে। কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পিরামিডের ভিতরে কী রয়েছে তা দেখা হচ্ছে এবারই প্রথম।

স্ক্যান পিরামিড নামক এ প্রজেক্টটির কাজ শেষ হবে চলতি বছরের শেষে। ইনফ্রারেড ও মিউয়ান প্রযুক্তির মাধ্যমে চারটি পিরামিডের ভেতরকার অবস্থা দেখা হবে ও রানী নেফারতিতির সমাধিস্থানে রাজা তুতনখামেনের কবর খুঁজে পেতেও এ প্রযুক্তি সাহায্য করবে বলে বিশ্বাসী গবেষকদল।

প্রত্মতত্ত্ববিদরা নেফারতিতির মমি কখনই আবিষ্কার করতে পারেননি। কিন্তু ব্রিটিশ প্রত্মতত্ত্ববিদ নিকোলাস রিভস জানান, নেফারতিতির কবরটি তুতেনখামেন কবরের সঙ্গে সংযুক্ত কোনো কক্ষে হয়ে থাকবে।

রাজা তুতেনখামেনের কবর পুনরায় খুঁজতে রাডার ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে মিশর। যা ১৯২২ সালে ইজিপটোলজিস্ট হওয়ার্ড কার্টার প্রথম খুঁজে পান।

গত বছর পুরাকীর্তি মন্ত্রী মামদু- এল দিমাতি বলেন, তুতেনখামেনের কবরের উত্তর ও পশ্চিম দেয়ালে আচড় ও চিহ্ন পাওয়া গেছে, যার অনুরূপ কার্টার পেয়েছিলেন তার সময়ে। এল দামাতি ব্রিটিশ ইজিপটোলজিস্ট নিকোলাস রিভসের সঙ্গে ল্যাক্সর ভ্রমণ করেছেন। রিভ বলেছেন তুতেনখামেনের কবর নেফারতিতির কক্ষের বাইরে অবস্থিত হতে পারে।


তিনি জানান, তুতেনখামেনের কবরের হাই রেজ্যুলেশনের ছবি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছে যা দেখে প্রাকৃতিক মনে হচ্ছে না। এতে ভূমি থেকে ৯০ ডিগ্রি সোজা লাইন দেখা গেছে। রিভ জানান, প্লাস্টার করা দেয়ালে দুটো অপরীক্ষিত প্রবেশপথ থাকতে পারে যা নেফারতিতির কবর নির্দেশ করে। আর নকশা দেখে মনে হচ্ছে, এটি রানীর ঘর হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
 
যদি ডিজিটাল অবয়ব গঠনিক বাস্তবতা প্রকাশ করে তাহলে দেখা যাবে নেফারতিতির স্টোর রুম, সুপ্রসিদ্ধ সঙ্গী, রাজপ্রতিনিধি ও ফারাও আখেনাতের উত্তরাধিকারীদেরও।

ইউনিভার্সিটি অব মেনচেস্টারের ইজিপটোলজির সিনিয়র লেকচারার জয়েস টেল্ডস্লেই রিভের এসব প্রস্তাবনাকে সায় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ডক্টর রিভের অনুমান সত্য প্রমাণ করতে পারে।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৭ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৬
এসএমএন/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।