ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

নাটোরে বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৬
নাটোরে বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ ছবি-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাটোর: স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদন ও লাভজনক হওয়ায় নাটোরে ড্রাগন ফলের চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এরইমধ্যে এ ফলের চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন কয়েকজন কৃষক।

বিদেশি জাতের পুষ্টি ও ওষুধি গুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারেও ড্রাগন ফলের ব্যাপক কদর রয়েছে। বর্তমানে জেলায় ২০ জনেরও বেশি কৃষক ড্রাগন ফলের চাষ করছেন।

তাদের উৎপাদিত ড্রাগন ফল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
 
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, যেকোনো ধরনের মাটিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। এতে জৈব সার ছাড়া অন্য কোনো সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। গাছের চারা রোপণের এক বছর পর থেকেই ফল ধরা শুরু হয়। একবার ফল দেওয়া শুরুর পর টানা প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত একটি ড্রাগন গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। প্রতি মৌসুমে গ্রীষ্মের সময় ৭ থেকে ৮ মাস ফল পাওয়া যায়।

 
জেলায় বর্তমানে ২০ জন কৃষক প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করছেন। এদের মধ্যে সদর উপজেলার আলফাজুল আলম ৪০০ গাছ, সেলিম রেজা ১০০ গাছ, গোলাম নবী ৩ হাজার গাছ ও নলডাঙ্গা উপজেলার সেনভাগ লক্ষ্মীকোল গ্রামের আতিকুর রহমান ৪০০ গাছ রোপণ করেছেন।

ওষুধি গুণসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হওয়ায় কৃষকরা এ ফল চাষে সুফল পাচ্ছেন। পাশাপাশি সংসারে কাজের পর ড্রাগনের জমিতে কাজ করে বাড়তি আয় করছেন নারীরাও।
 
স্থানীয় বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম, আব্দুল মালেকসহ আরো অনেকে জানান, এক সময় এই ফলের নাম শুধু তারা শুনেছেন। এখন নিজের এলাকায়ই তা দেখতে পাচ্ছেন এবং তা কিনে খেতেও পারছেন।
 
সেনভাগ গ্রামের নারী শ্রমিক বুলবুলি বেগম জানান, সংসারের কাজ-কর্ম করার পর ড্রাগন ফলের বাগানে বাড়তি কাজ করে প্রতিদিন ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা আয় করছেন তারা।
 
অপর নারী শ্রমিক রেবেকা বেগম জানান, অসুস্থ শরীরে ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। অল্প পরিশ্রমে ড্রাগন ফলের বাগানে কাজ করে তার সংসার চলছে। তার মতো এ কাজ করছেন নারী-পুরুষ মিলে অন্তত ২০০ শ্রমিক।

 
ড্রাগন ফল চাষি আলফাজুল আলম জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি এই ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হন। ৪০টি খুঁটিতে ৪০০ চারা রোপণ করে এখন ফল পাচ্ছেন। এতে  তিনি লাভবান হয়েছেন। চাষ বাড়ালে এ ফল রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
 
অপর চাষি আতিকুর রহমান জানান, তারা গত এপ্রিল মাস থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি করে ফল তুলছেন ও বাজারজাত করছেন। আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত ফল তুলবেন তারা।
 
কৃষক সেলিম রেজা জানান, স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী ছাড়াও ঢাকা থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা এখানে ফল কিনতে আসেন।

ড্রাগন ফল ব্যবসায়ী হাইজুল ইসলাম ও খলিলুর রহমান জানান, এই ফল তারা প্রতি কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ দরে কিনে নেন। পরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় তা বিক্রি করেন। এতে তাদের বেশ লাভ হচ্ছে। বাজারে এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে।
 
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ ড. আলহাজ উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, পুষ্টি ও ওষুধি গুণ সম্পন্ন ড্রাগন ফলের চাষ ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ কেজি করে ড্রাগন ফল নাটোর থেকে দেশের বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে।
 
তিনি আরো জানান, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে, সালাদ তৈরিতে ও বিউটিফিকেশনের কাজেও ড্রাগন ফলের ব্যবহার রয়েছে। এ ফলের চাষ আরো লাভজনক করতে ও কৃষকদের উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।