ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ভালো নেই খুলনার চুলা কন্যারা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
ভালো নেই খুলনার চুলা কন্যারা ছবি: মানজারুল ইসলাম/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

এঁটেল মাটি, ধানের কুড়া ও পানি দিয়ে মণ্ড তৈরি করে চুলা বানাতে ভীষণ ব্যস্ত হাসিনা বেগম (৬০)।

খুলনা: এঁটেল মাটি, ধানের কুড়া ও পানি দিয়ে মণ্ড তৈরি করে চুলা বানাতে ভীষণ ব্যস্ত হাসিনা বেগম (৬০)।

শীতের সকালে অত্যন্ত ধৈর্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে সুনিপুণ হাতে চুলা তৈরি করছেন তিনি।

তার পাশে আগে তৈরি করা কিছু চুলা রোদে শুকাতে দেওয়া রয়েছে।

খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা সংলগ্ন শেরে বাংলা রোডের পাশে কর্মব্যস্ত হাসিনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।

কেমন চলছে দিনকাল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাগের কে খবর নেয় বাবা। দিনডা কোনো রকম যায়। এহন মাডির দাম বাইরে গেছে। আগে যেহানে এ্যাক ঠেলাগাড়ি মাটির দাম ছিলো একশ’ টাহা। তা এহন তিনশ’ টাহা দিয়ে কিনতে অয়। যে কারণে চুলা বানাইয়া পর্তায় পরে না।

তিনি জানান, ১৯৭১ সালের পর দারিদ্রের কারণে মাদারীপুর থেকে খুলনায় আসেন। সেই থেকে এখানে চুলা বানিয়ে সংসার চলে। আগে তো গ্যাস ছিলো না চুলা বিক্রি করে সংসার ভালো চলতো। কিন্তু এখন গ্যাসের কারণে চুলা বিক্রি কমে গেছে। সংসারও চলছে কোনো রকম।  

কখন চুলা বেশি বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি জানান, বর্ষাকালে সবাই ঘরে রান্না করে। তাই চুলা বেশি বিক্রি হয়। হাসিনা বেগমের পাশে চুলায় প্রলেপ দিতে ব্যস্ত রোকেয়া। তিনি জানান, গ্যাসের চুলার কারণে তাদের মাটির চুলার চাহিদা কমে গেছে। আগে এখানে ২০-২৫ জন চুলা বানিয়ে বিক্রি করতো তা এখন কমে ১০-১২ জনে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও জানান, তিনশ’ টাকায় এক ঠেলাগাড়ি মাটি কিনলে তা দিয়ে ৭-৮টি চুলা হয়। মাটির দাম বাড়লেও চুলার দাম তেমন বাড়েনি।

রোকেয়া বাংলানিউজ জানান, চুলা শুকাতে রোদ লাগে। বৃষ্টির দিনে একটু সমস্যা হয়।   বৃষ্টি হলে কাস্টমারদের তাগাদা থাকলেও ঠিকমতো ডেলিভারি দেওয়া যায় না।

চুলা বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, চুলা বানাতে আঠালো মাটি লাগে। সেই মাটি গুঁড়া করে পানি দিয়া ভিজিয়ে গোল বা বাক্সের মতো করতে হয়। সেটা কিছুটা শুকালে করাত, ছেনি বা চাকু দিয়ে চেঁছে চেঁছে চুলার সাইজ করতে হয়। এরপর রোদে কয়েকদিন শুকিয়ে নিতে হয়।

সাবেরা নামে এক চুলা কন্যা বলেন, টানাপড়েনের সংসার। স্বামীর একার রোজগারে সংসার চালানো কষ্টকর। তাই আর্থিক দৈন্য কাটাতে চুলা তৈরি করে বিক্রি করি।

তিনি জানান, প্রতিদিন ৩-৪টা চুলার অর্ডার পাওয়া যায়। আর বিক্রি করতে পারেন ২-৩টা। এক একটা চুলার দাম পড়ে ১৫০-২০০ টাকা।

চুলা কন্যারা অভিযোগ করেন, মাঝে মধ্যে সিটি করপোরেশন উচ্ছেদের নামে তাদের হয়রানি করে।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, খুলনার একমাত্র মাটির চুলা তৈরি ও বিক্রির স্থান শেরে বাংলা রোডের পশ্চিম পাশে খোলা আকাশের নিচে থরে থরে সাজানো রয়েছে মাটির তৈরি চুলা। চোখে পড়ে অদ্ভুত এক অন্য রকম মৃৎশিল্পের দৃশ্য। দেখলে মনে হয় খুলনায় যেন কেউ গ্যাসে অথবা স্টোভে রান্না করে না। এসব মাটির চুলা বানাতে প্রায় ১৫-২০ জন চুলার কারিগর ব্যস্ত রয়েছেন। কেউ নিজে নিজে করছেন। আবার কেউ মেয়ে কিংবা ছেলের বউ নিয়ে চুলা তৈরি করছেন। তৈরি করা চুলা পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। অনেক চুলা কন্যা চুলা বানানোর পর বিক্রির জন্য দেওয়ালে মোবাইল নাম্বার লিখে রেখেছেন।

চুলা কিনতে আসা রূপসা উপজেলার রাজাপুর এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী কবীর খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, মাটির চুলার রান্নার স্বাদই আলাদা। এছাড়া হোটেলের এতো রান্না মাটির চুলা ছাড়া সম্ভব নয়। তাই চুলা কিনতে এসেছি।

তিনি জানান, তার মতো অনেক হোটেল ব্যবসায়ী ও গ্যাস না থাকলে বিকল্প রান্নার জন্য এখান থেকে অনেকে চুলা কিনে নিয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬

এমআরএম/এএটি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।