ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ভয়নিখের পাণ্ডুলিপি: বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বই

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৮
ভয়নিখের পাণ্ডুলিপি: বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বই বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বই

ঢাকা: বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বই হিসেবে বিবেচনা করা হয় প্রায় ৬০০ বছর আগে লেখা ২৪০ পৃষ্ঠার একটা পাণ্ডুলিপিকে। কেউ জানে না এ পাণ্ডুলিপি কে লিখেছে। শত শত বছর ধরে হাজারো গবেষক এর পাঠোদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছেন।

কেউ বলেন এতে আলকেমির গোপন ফর্মুলা লেখা হয়েছে, কেউ বলেন এতে লেখা আছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য, আবার কেউ বলেন ভেষজ চিকিৎসা অথবা জাদুটোনার কথা। কিন্তু কেউ এখনও নিশ্চিত না, এতে আসলে কী বলা হয়েছে।

কেউ জানতে পারেননি এর আসল রহস্য।

পোলিশ বই ব্যবসায়ী উইলফ্রিড ভয়নিখের নামে এ পাণ্ডুলিপিটি পরিচিতি পায়। এর সম্পূর্ণটা হাতে লেখা। এতে আঁকা রয়েছে হাজারো ছবি, নকশা, ডায়াগ্রাম ও প্যাটার্ন। পাণ্ডুলিপির ভাষা কারো বোধগম্য না হলেও, ছবি ও নকশাগুলো থেকে বিভিন্ন বিষয় আন্দাজ করেন গবেষকরা। এতে যেন পাণ্ডুলিপিটি ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হতে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বইহিটলার বাহিনীর গোপন সাংকেতিক ভাষার রহস্য ভেদ করা বিখ্যাত ক্রিপ্টোগ্রাফার ব্লেচলি পার্ক অনেক সময় ব্যয় করেন ভয়নিখের পাণ্ডুলিপির পিছনে। কিন্তু এর ভাষা তার বোধগম্য হয় না। বেশিরভাগ গবেষকদের মত তার চোখও আঁটকে থাকে অদ্ভুত ছবিগুলোর মধ্যে।

গবেষকরা এতে ব্যবহৃত কালির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে বলেন, আনুমানিক ১৪০৪ থেকে ১৪৩৮ সালের দিকে বইটি লেখা হয়েছিল। এর কিছু ছবিতে ফুটে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের নাম না জানা উদ্ভিদ। কিছু নকশায় এমন সব বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে, যা প্রকৃতিতে কেবল অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা সম্ভব। রয়েছে ছায়াপথের গঠনে সাজানো অক্ষরের ডায়াগ্রাম। এতো আগে ছায়াপথ সম্পর্কে মানুষের তেমন কোনো ধারণা ছিল না।

সম্প্রতি এ রহস্যের কূল-কিনারা করতে নামেন বিশ্বের প্রথম সারির কয়েকজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী। এ ভাষা পাঠোদ্ধারের জন্য তারা ব্যবহার করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। এটি একটি পরিসংখ্যান ভিত্তিক অ্যালগরিদম, যা বিশ্বের ৩৮০টি ভাষা ৯৭ শতাংশ সফলতার সঙ্গে ভাষান্তর করতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বই

গবেষকরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন পাণ্ডুলিপিটি হয়তো প্রাচীন আরবিতে লেখা হতে পারে। কানাডার আলবার্টা ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞানী গ্রেগ কনডার্ক ও তার দল বলছে, এ পাণ্ডুলিপি প্রাচীন হিব্রু ভাষায় লেখা। তাছাড়া, এর শব্দগুলো এলোমেলোভাবে সাজানো এবং এতে কোনো স্বরবর্ণের ব্যবহার নেই। প্রযুক্তির সাহায্যে এর কিছু কিছু শব্দের অর্থ উদ্ধার করা যায়। যেমন- এর প্রতিটি অধ্যায়ের প্রথম ৭২টি শব্দের মধ্যে কৃষক, আলো, বাতাস ও আগুন শব্দগুলো রয়েছে।

গ্রেগ জানান, কম্পিউটারের সাহায্যেও পাণ্ডুলিপিটির মূল রহস্য উদ্ধার সম্ভব না। কারণ, মানুষের শেখানো ভাষা নিয়েই কাজ করে কম্পিউটার। পাণ্ডুলিপিটি প্রাচীন হিব্রু ভাষায় লেখা হলেও তা হিব্রুর এতটাই প্রাচীন রূপ যে এ বিষয়ক কোনো পণ্ডিত বর্তমানে নেই। সুতরাং, ভয়নিখের পাণ্ডুলিপির মূল অর্থ হয়তো মানুষের অজানাই থেকে যাবে চিরকাল।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
এনএইচটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।