ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

খোঁপায় গাঁদা-পলাশ, নগরে বসন্ত

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
খোঁপায় গাঁদা-পলাশ, নগরে বসন্ত মেয়েরা আজ খোঁপায় গাঁদাসহ নানা ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াবেন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: কোকিলের সুরে ক’দিন থেকেই রং লেগেছে অশোক-কিংশুকে। তরুণীদের খোঁপায় দখল নিয়েছে নতুন কিশলয়, তাকে জায়গা করে দিতে ব্যস্ত ঝরা পাতারাও। সে পাতার রঙে নতুন সূর্যোদয়। তার আভায় পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার আগুনঝরা উচ্ছলতার ঢল। বাতাসে প্রেম, নয়নে নেশা। বিহ্বলতা ছড়িয়ে প্রকৃতির ডাক এসেছে আলগোছে, আজ বসন্ত এসে গেছে!

বসন্ত এসে গেছে- আজ পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজের প্রথম দিন। কোকিল না ডাকলে বা শিমুল-পলাশের দেখা না পেলে নাকি বসন্ত আসে না! তবে এখন নাগরিক ব্যস্ততার কারণে দিনপঞ্জির পাতা দেখেই সদর্পে বাসন্তী শাড়িতে তরুণীরা বেরিয়ে পড়েন উত্সবে।

তারাই যেন আমাদের নগরজীবনের বসন্ত-দূত। যারা বসন্তের গন্ধ দিব্যি ভুলে আছেন, তারা কিন্তু বাসন্তী শাড়িতে বসন্ত-দূত দেখেই বুঝে ফেলবেন মধুর বসন্ত এসেছে প্রকৃতিতে।

ফুলের উচ্ছ্বাসে আজ হাসছে আকাশ, কাঁপছে বাতাস, দুলছে আম্রমুকুল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম বয়াতির হৃদয়ের সুর আর অনুভূতি আজ প্রকাশিত হচ্ছে অভিন্ন আনন্দে। সে আনন্দ সঞ্চারিত হচ্ছে প্রত্যেক বাঙালির মনে। বনের নিভৃত কোণে, মেঠোপথের ধারে কারও জন্য অপেক্ষা না করেই ফুটছে নাম না-জানা অসংখ্য সব ফুল। তরুণ মনে বিহ্বলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে কোকিলের ডাক।

দখিনা হাওয়া, মৌমাছিদের গুঞ্জরণ, কচি-কিশলয় আর কোকিলের কুহুতানে জেগে ওঠার দিন আজ। লাল আর বাসন্তী রঙে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের সাজিয়ে এ ক্ষণে বসন্তের উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসবে বাঙালি। তরুণীদের খোঁপায় শোভা পাবে গাঁদা ফুলের মালা। বসন্তের আনন্দযজ্ঞ থেকে বাদ যাবে না গ্রামীণ জীবনও। বসন্তকে তারা আরও নিবিড়ভাবে বরণ করবেন। বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়ও।

বসন্ত বরণে গ্রাম-বাংলায় বিশেষ আয়োজনে চলে পিঠা উৎসব। আর শহরে এটি পায় বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা। প্রকৃতির অলৌকিক স্পর্শে রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম থেকে শুরু করে অসংখ্য বৃক্ষ এখন জেগে উঠছে। ফুলের মঞ্জুরিতে মালা গাঁথার দিন বসন্ত কেবল প্রকৃতিকেই নয়, আবহমান কাল ধরে বাঙালি তরুণ-তরুণীর প্রাণকেও রঙিন করে আসছে। এ দিনে তাই তরুণ-তরুণীদের প্রাণেও অনুরণিত হয় বাউল করিমের ভাষা, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে’। আজ তাই মেয়েরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশসহ নানা রকম ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরবেন।

ছেলেরা পাঞ্জাবি-পায়জামা আর ফতুয়ায় শাশ্বত বাঙালির সাজে উৎসবের হাওয়ায় ভেসে বেড়াবেন শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর, চারুকলা, টিএসসি ও অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণসহ নগরীর এখানে-ওখানে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, মিন্টো রোড, জাতীয় সংসদ, চন্দ্রিমা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, ধানমণ্ডি লেক- সর্বত্রই আজ বইছে বাসন্তী হাওয়া।

২২ বছরে ধারাবাহিকতায় এবারও রাজধানীতে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদ। ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’ প্রতিপাদ্যে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় যন্ত্রসঙ্গীতের সুর-মূর্ছনায় শুরু হবে এ কর্মসূচি। সকাল ১০টা পর্যন্ত চলবে অনুষ্ঠান। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত একযোগে অনুষ্ঠান চলবে চারুকলার বকুলতলা, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর এবং উত্তরার ৩নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণির উন্মুক্ত মঞ্চে। সে মঞ্চে হাজারো কণ্ঠে একসঙ্গে ধ্বণিত হবে, বসন্ত এসে গেছে!

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।