ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

স্বপ্ন ছড়িয়ে দিচ্ছে নেইম্রার ‘স্বপ্নচূড়া’

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৩ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৮
স্বপ্ন ছড়িয়ে দিচ্ছে নেইম্রার ‘স্বপ্নচূড়া’ নেইম্রা মারমা। ছবি: বাংলানিউজ

খাগড়াছড়ি: সমাজের প্রতিবন্ধকতার বৃত্ত অতিক্রম করা একজন সফল নারী উদ্যোক্তার নাম নেইম্রা মারমা। মাত্র ২৪ বছর বয়সী এ নারী নিজেই এখন হয়ে উঠেছেন অন্য নারীদের জন্য অনুকরণীয়।

নেইম্রা চেয়েছিলেন, সমাজের বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে স্বপ্নের স্পর্শ পেতে। তাই নেইম্রা তার রেস্টুরেন্টের নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্নচূড়া’।

 
 
একজন নারী হিসেবে এ সমাজে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চালানো সহজ নয়। প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে সম্মুখীন হতে হয় প্রতিকূলতার। আর এসব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সাহসী পায়ে এগিয়ে চলেছেন এ নারী। একসময়ের সমালোচকরাও এখন তার সফলতার প্রশংসা করছেন।  

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নেইম্রা ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে খাগড়াছড়ির সরকারি মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলেন ‘স্বপ্নচূড়া’ নামের রেস্টুরেন্টটি।  ছোট্ট একটি রুমে মাত্র একটি টেবিল ও ছয়টা চেয়ার নিয়ে শুরু করেন রেস্টুরেন্টটি। আর পুঁজি বলতে নিজের জমানো ১০ হাজার টাকা এবং লোন নেওয়া আরও ১৫ হাজার টাকা।  

স্বপ্নচুড়া’য় গিয়ে কথা হয় নেইম্রার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথম প্রথম বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার এনে বিক্রি করতেন তিনি। শুরুর দিকে খাবার বিক্রি না হওয়ায় অনেক খাবার ফেলে দিতে হত। কিন্তু এতেও হাল ছাড়েননি তিনি।  

নেইম্রা বলেন, সাত ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। অন্য ভাই-বোনেরা সবাই ভালো চাকরি করলেও আমি চেয়েছিলাম উদ্যোক্তা হতে। আমার পাশাপাশি সমাজের একজনের হলেও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে। বর্তমানে আমার রেস্টুরেন্টে চারজন কর্মচারী রয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনই কলেজের শিক্ষার্থী।  

শুরুতে হাতের তৈরি কিছু নাস্তা, চা, কফি ও জুস বিক্রি হতো স্বপ্নচূড়ায়। এখন অনেক ধরনের নাস্তার পাশাপাশি দুপুর ও রাতে খাবার পাওয়া যায়। তাছাড়াও নেইম্রার নিজ হাতে তৈরি বিভিন্ন শোপিসও বিক্রি হয় স্বপ্নচূড়ায়।  
নেইম্রার স্বপ্নচূড়ায় খাবার উপভোগ করছেন কয়েকজন অতিথি।  ছবি: বাংলানিউজ

নেইম্রা জানান, দুই বছরের মাথায় স্বপ্নচূড়ার পরিধি বড় হয়েছে। এখন এর চারটি রুম। চার জন কর্মচারীর বেতন ও রেস্টুরেন্টের ভাড়া দিয়েও প্রতিমাসে লাভ হচ্ছে বেশ ভালই।

রেস্টুরেন্টের কর্মচারী বেবি মারমা (১৮) বলেন, রেস্টুরেন্টে চাকরি করে প্রতিমাসে চার হাজার টাকা বেতন পাই। এখানে থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি কলেজে যাওয়ার সুযোগ পাই।  

নিয়মিত গ্রাহক খাগড়াছড়ি মহিলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জহিরুল ইসলাম বলেন, রেস্টুরেন্টে ঘরোয়া পরিবেশে খাওয়া যায়। তাছাড়া আগে থেকে জানিয়ে দিলে নিজের পছন্দমতো খাবারও পাওয়া যায়। এখানে খাবারের দামও তুলনামূলক কম। বাইরে থেকে যারা কলেজে আসে সবাই খাবারের প্রশংসা করেন।  

শুরুতে নেইম্রার পাশে কেউ না থাকলেও এখন পাশে দাঁড়িয়েছে অনেকে। ‘স্বপ্নচূড়া’ নেইম্রাকে এনে দিয়েছে স্বপ্নের স্পর্শ। আর নেইম্রার এই স্বপ্ন ছড়িয়ে যাচ্ছে আরও অনেক নারীর মধ্যে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৮
এডি/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।