ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

গৌরব আর অহংকারের শিখা চিরন্তন

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৮
গৌরব আর অহংকারের শিখা চিরন্তন জ্বলছে শিখা চিরন্তন/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)- এর উত্তর পাশেই রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের স্মৃতি। সে স্মৃতিকেই বুকে আগলে ধরে জ্বলছে শিখা চিরন্তন। স্বাধীনতা সংগ্রামের জলন্ত এ স্মারক বাঙালির শৌর্য-বীর্য আর অহংকারের প্রতীক।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এ স্থানে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান একে নিয়াজি ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে ঢাকার এ উদ্যানেই মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পণের ঘটনা। সে স্মৃতিকে জ্বালিয়ে রাখতেই দিন-রাত জ্বলছে এ অগ্নিশিখা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শিখা চিরন্তনের আশেপাশে আছে টবে লাগানো কিছু গাছ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে এর আশেপাশেই ছড়িয়ে আছে স্বাধীনতা স্তম্ভ, গ্লাস টাওয়ার। যার উজ্জ্বল আলোকসজ্জা সন্ধ্যায় এর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া ভূগর্ভস্থ জাদুঘর ও উন্মুক্ত মঞ্চ স্থান পেয়েছে এর পাশেই।
শিখা চিরন্তনের পাশে ভূগর্ভস্থ স্বাধীণতা জাদুঘরে ঐতিহাসিক আলোকচিত্র/ছবি: বাংলানিউজশিখা চিরন্তনের পাশে ভূগর্ভস্থ স্বাধীণতা জাদুঘরটিতে তিন শতাধিক ঐতিহাসিক আলোকচিত্র প্রদর্শিত হয়। টেরাকোটা, ঐতিহাসিক ছবি, যুদ্ধের ঘটনা সম্বলিত সংবাদপত্রের প্রতিবেদনও প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিভিন্ন বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিলিপি এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিদেশে প্রচারণা সৃষ্টিতে তৈরি করা বিভিন্ন পোস্টারও জাদুঘরটির প্রদর্শনীতে রয়েছে। আছে বাংলাদেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও স্থাপনার চিত্রও।

উদ্যানের প্লাজা চত্বরের পূর্ব পাশের দেয়ালে তৈরি করা হয়েছে ম্যুরাল। এখানে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের চিত্র টেরাকোটা ম্যুরালের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। আর সেখান থেকেই গল্প বলে সন্তানকে বাবা-মা জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস। আর জ্বলে জ্বলে নতুন প্রজন্মের কাছে শিখা চিরন্তন পৌঁছে দিচ্ছে দেশপ্রেমের অমীয় বার্তা।

সোমবার (১২ মার্চ) ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে ধানমন্ডি থেকে ঘুরতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ।  

কথা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের এ স্থাপনাগুলো আমাদের গৌরব, আমাদের বিজয়ের অহঙ্কার। নতুন প্রজন্মকে এগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। তাদের এসবের কাছে নিয়ে আসা উচিত, জানানো উচিত মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। ছোট্ট শিশুরা হয়তো এখনই কিছু বুঝবে না, কিন্তু ওদের যে ভালো লাগছে এটাই অনেক বড় ব্যাপার। পরে ওরা নিজেরাই আস্তে আস্তে বুঝে নেবে।
শিখা চিরন্তনের পাশে ভূগর্ভস্থ স্বাধীণতা জাদুঘরে ঐতিহাসিক আলোকচিত্র/ছবি: বাংলানিউজমুক্তিযুদ্ধের গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনও বললেন তেমনটিই। তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক স্বাধীনতা স্তম্ভ, শিখা চিরন্তন। এসব সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানানো দরকার, পরে নিজে থেকেই বিস্তারিত জেনে যাবে। এছাড়া শহীদ মিনার, সাভার স্মৃতিসৌধ, মিরপুর ও রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মুতিসৌধ প্রভৃতি স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি সেগুলোকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও বেশি করে তুলে ধরতে হবে।

১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন। সেসময় আরও ছিলেন বিশ্বনন্দিত তিন নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত ও সুলেমান ডেমিরেল। প্রথমে এটা স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত না হলেও পরে প্রকল্পভুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৮
এইচএমএস/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।