ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

যে কারণে ফ্যালকন-৯ অন্যসব রকেট থেকে আলাদা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৮
যে কারণে ফ্যালকন-৯ অন্যসব রকেট থেকে আলাদা ফ্যালকন-৯

ঢাকা: মানুষের মহাকাশ অভিযানের অগ্রগতিকে প্রায় কয়েক যুগ এগিয়ে দিয়েছে ফ্যালকন-৯ নামের রকেট। বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা ও স্পেস ট্রান্সপোর্টেশন কোম্পানি স্পেসএক্সের এই রকেটটিতে করেই শুক্রবার (১১ মে) দিনগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে মহাকাশে পৌঁছায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।  

বাংলাদেশের মতো একটি পেছনের সারির দেশের জন্য নিজস্ব স্যাটেলাইট পাওয়ার গৌরব অর্জনে এই ফ্যালকন-৯ রকেটের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। শুধু বাংলাদেশ নয়, এই রকেটটির কল্যাণে মহাকাশ চলে এসেছে গোটা মানব জাতির হাতের মুঠোয়।

সুতরাং পাঠক চলুন জেনে নেই, কেন এই ফ্যালকন-৯ বাকি অন্যসব রকেট থেকে আলাদা।

ফ্যালকন-৯ পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছানো প্রথম পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট। মহাকাশ অভিযাত্রার ব্যয় অনেক বেশি হাতের নাগালে নিয়ে এসেছে এই পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট প্রযুক্তি যা পৃথিবীর একজন প্রথম সারির স্বপ্নদ্রষ্টা এলন মাস্কের দূরদর্শী পরিকল্পনার ফসল। এর আগে বেশিরভাগ মানুষ কল্পনাও করেনি যে একটি রকেটকে বার বার ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফ্যালকন-৯ পুনঃব্যবহারযোগ্য হওয়ায় মহাকাশে রকেট পাঠানোর খরচ কমে গেছে প্রায় কয়েক গুণ। তাছাড়া ফ্যালকন-৯’কে বলা হয়, পৃথিবীর অরবিটে স্যাটেলাইট ও ড্রাগন স্পেসক্রাফট পাঠানোর জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ রকেট।  

২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের (আইএসএস) জন্য একটি ড্রাগন স্পেসক্র্যাফট পাঠানোর মাধ্যমে মহাকাশ মিশনে সম্পন্ন করে পৃথিবীতে ফেরত আসা প্রথম বাণিজ্যিক রকেট হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করে ফ্যালকন নাইন। এরপর বহু মিশন সম্পন্ন করেছে রকেটটি। মহাকাশে পৌঁছে দিয়েছে বহু স্যাটেলাইট ও নভোচারীদের রসদ। এমনকি আইএসএস মালামাল নিয়ে পৃথিবীতে ফেরতও এসেছে কয়েকবার। এপর্যন্ত ৫৬টি মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে রকেটটি।
ড্রোন শিপে অবতরণ করছে ফ্যালকন-৯-এর ১ম স্টেজ।  ছবি: সংগৃহীত
ফ্যালকন ৯ একটি দুই স্টেজের রকেট। অর্থাৎ, অ্যালুমিনিয়াম-লিথিয়ামের বিশেষ যৌগ দিয়ে তৈরি এর ইঞ্জিনগুলো দু’টি ভাগে বিভক্ত। প্রথম স্টেজে রয়েছে ৯টি ইঞ্জিন যা সমুদ্র পৃষ্ঠে ৭৬০৭ কিলোনিউটন এবং মহাশূন্যে ৮২২৭ কিলোনিউটন ধাক্কা উৎপাদন করে। এই ইঞ্জিনগুলোর বার্ন টাইম ১৬২ সেকেন্ড। দ্বিতীয় স্টেজে রয়েছে একটি ইঞ্জিন এবং এর বার্ন টাইম ৩৯৭ সেকেন্ড।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের জন্য একটি ফ্যালকন-৯ ব্লক-৫ রকেট। স্পেসএক্সের ওয়েব সাইট থেকে সরাসরি প্রচারিত রকেটটির উৎক্ষেপণ ভিডিওতে দেখা যায়, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যায় রকেটটি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশের ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নিজস্ব অরবিটাল স্লটে পৌঁছে দিতে প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার পারি দেয় ফ্যালকন-৯।

২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড পর রকেটের প্রথম স্টেজের ইঞ্জিনগুলো মূল বডি থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং দ্বিতীয় স্টেজের ইঞ্জিন জ্বলতে শুরু করে। একইসঙ্গে পৃথিবীতে ফেরত আসার জন্য রওনা দেয় এর প্রথম স্টেজ। আটলান্টিক মহাসাগরে ভাসতে থাকা একটি ড্রোন জাহাজের ওপর এটি ল্যান্ড করে উৎক্ষেপণের মাত্র ৮ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের মাথায়। ফ্যালকন-৯-এর এই অংশটা ব্যবহার করা যায় ১০ বারের বেশি।  
ফ্যালকন নাইনের ১ম স্টেজের অবতরণ প্রক্রিয়া।  ছবি: সংগৃহীত
মানুষের মহাকাশ অভিযানের এক যুগান্তকারী উদ্ভাবনের নাম এই ফ্যালকন-৯। আর এই রকেটটির হাত ধরেই বাংলাদেশ অর্জন করেছে তার নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের গৌরব। এমন রকেট উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছিল বলেই বাংলাদেশের মতো আরও অনেক দেশের জন্য হাতের মুঠোয় চলে এসেছে মহাকাশ। আর এই অভিযানকে অকল্পনীয় গতিতে এগিয়ে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ফ্যালকন-৯-এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৮
এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।