ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

জামিল মাহবুবের শেকড়-শিল্প

তমাল ফেরদৌস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১০
জামিল মাহবুবের শেকড়-শিল্প

স্বপ্ন তার বিশ্বের সবচে বড় গোল টেবিল বানিয়ে গিনেস রেকর্ড বুকে নাম লেখানো। ইতিমধ্যে রেজিস্ট্রেশনও করে ফেলেছেন।

তার আদর্শ বঙ্গবন্ধু আর জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’র চরণগুলো তার সবচে প্রিয়। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্জন মনে করেন। তাই তিনি তার একটি শেকড়ের শিল্পকর্ম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে উপহার দিতে চান।

কারুশিল্পী জামিল মাহবুব জামি ডুবে থাকেন বৃরে শেকড় ও বাটালির নকশার কারুকার্যের মধ্যে। একটি বাক্সে ছোট ছোট বিভিন্ন আকারের বাটালি। একেক ধরনের নকশার জন্য একেকটি বাটালি ব্যবহার করেন তিনি। কখনো ভালোবাসার প্রতিকৃতি, কখনো গোল টেবিলের নকশার কারুকার্য, আবার কখনো মায়ের বুকে শিশুকে আদরের কারুকার্য তার হাতের ছোঁয়ায় ফুটে ওঠে গাছের শেকড়ের শরীরে। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, চোখে চশমা, একহাতে হাতুড়ি আর অন্য হাতে বাটালি। প্রায় তিন বছর ধরে একাধারে কান্তিহীনভারব কাজ করে যাচ্ছেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কলেজ রোডের বাসায় কথা হয় কারুশিল্পী জামিল মাহবুব জামির সাথে। কথার ফাঁকে ফাঁকে দেখা হয় তার স্বপ্নের ভুবন ও কারুকার্যমন্ডিত বিভিন্ন কাজ। স্ত্রী মাসুমা মুন্নী, মেয়ে লাবিবা সাইয়ারা অংকিতা ও ছেলে তাজওয়ার জাওয়াদ আবদুল্লাহ অরকে নিয়ে তার ভুবন। তিনি জানান, এখন তার সংসারের পুরোটা জুড়ে রয়েছে কারুশিল্প।  

কথায় কথায় কারুশিল্পী জামিল জানান, তার দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নওমহল গ্রামে। বাবা মরহুম মাহবুবুর রহমান ছিলেন একজন চিত্রকর। তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। ঢাকার অনেক জায়গায় তার বাবা জয়নুল আবেদিনের সাথে কাজ করেছেন। তিনি জানান, ২০০৭ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন ধরনের গাছের শেকড়ের মধ্যে তার শৈল্পিক কারুকাজ শুরু করেন। কাটাগাছের শেকড় সংগ্রহ করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোল টেবিল বানাতে ব্যস্ত এখন এই শিল্পী। মৌলভীবাজার জেলায় পাহাড় এবং বন থাকায় গাছের শেকড় পেতে সুবিধা হয় এবং এই কাজের জন্য মৌলভীবাজার উপযুক্ত জায়গা। তিনি ইতিমধ্যে গাছের শেকড় দিয়ে তৈরি করেছেন হরেক রকম আসবাবপত্র। আর্থিক অসচ্ছলতা এবং প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে তার এই শিল্পকর্ম নিয়ে যতটা যাচ্ছেন, ততটা এগোতে পারছেন না। এসবের মধ্যে আবার যতটুকু কাজ করেন তারও উপযুক্ত পারিশ্রমিক অনেক সময় পান না। পারিশ্রমিক নিয়ে তার দুশ্চিন্তা না থাকলেও অর্থের অভাবে তিনি একটি প্রদর্শনী করতে পারছেন না বলে নিজেকে অপরাধী মনে বলে মনে করছেন। তিনি প্রদর্শনীর করার জন্য সচ্ছল ও বিত্তবান মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য কামনা করেছেন।

জামিল মাহবুব জামি একটি ভিন্ন বিষয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেছেন এভাবে : একুশের বইমেলা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না হয়ে বাংলাদেশের সব জেলায় হওয়া উচিত। বললেন, তিনি একুশের বইমেলাটি ঢাকার বাইরে শ্রীমঙ্গলে আয়োজন করতে চান। আর এই বইমেলায় তার শিল্পকর্মের একটি প্রদর্শনী করতে চান। তিনি বলেন, যদি ঢাকার বাইরে শ্রীমঙ্গলে একুশে বইমেলা আয়োজন করা যায় তাহলে হয়তো একদিন দেশের সব জেলায় এই বইমেলার বিস্তার ঘটবে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এই বইমেলার স্বাদ পাবে ও উপকৃত হবে। আর এজন্য তিনি সরকারের ও ঢাকার আয়োজকদের সুদৃষ্টি কামনা করছেন। তিনি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলেন, স্থানীয় না হওয়ায় তাকে ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হয় না জামিনদারের অভাবে। তিনি জানান, বৈবাহিক সূত্রে তিনি এখন শ্রীমঙ্গলের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছেন। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় তিনি কর্মচারী রাখতে পারেন না। তবে তিনি তার স্ত্রীর সহযোগিতা পান বলে জানান। তিনি ১৬ ফুট লম্বা একটি গোলটেবিল নির্মাণ করছেন যাতে ৩০ থেকে ৩৫ জন মানুষ এই টেবিলটি ব্যবহার করতে পারে। তার ধারণা এই টেবিলটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেবিল হবে। তাই তিনি এই টেবিলের মাধ্যমে ‘গিনেস রেকর্ড বুকে’ নিজের নাম লেখাতে চান।

ইতিমধ্যে তিনি ওয়াল শোপিস, ডাইনিং টেবিলম্যাট, নর-নারীর প্রতিকৃতি, জীবজন্তুর আকৃতির শোপিস, টি-টেবিল, কর্নার টেবিল, সেন্টার টেবিল, সোফা টেবিল, গোল টেবিল, বৈঠক করার টেবিল, মা-ছেলের প্রতিকৃতি এবং নিজস্ব ডিজাইনে তিনি কুরআন শরিফ বাঁধাইয়ের কাজ করার কথা জানান। তিনি জানান, তার এই শিল্পকর্মগুলো রাখার মতো একটি ঘর না থাকায় বারান্দায় পড়ে থেকে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই তার শিল্পকর্মকে এগিয়ে নিতে সরকারসহ বিত্তবান মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২২৫০, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad